বিশেষ প্রতিনিধি:
চাঁদপুর শহরের স্ট্র্যান্ড রোডে জেলা প্রশাসকের ডাকবাংলো। পাশেই চাঁদপুর প্রেসক্লাব। ডাকবাংলো আর প্রেসক্লাব এলাকায় আম, সেগুন, নারকেলসহ বিভিন্ন গাছে অন্তত ২০ বছর ধরে সাদা বক আর পানকৌড়ি পাখি বসবাস করে আসছে। এটি যেন সাদা বক আর পানকৌড়ির নিরাপদ আশ্রয়স্থল। সুদীর্ঘ কুড়ি বছর এখানে বক আর পানকৌড়ি পাখির সহাবস্থানই তা প্রমাণ করে। সকাল-সন্ধ্যায় পাখির ডাকের শব্দে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো এলাকা। বক ও পানকৌড়ি বাসায় বাতলে দেয় যেন তারা স্বজাতি। তাইতো এ গাছ-গাছালিতে পাখিরা বাসা তৈরি করে নিরাপদে বংশ বৃদ্ধি করে চলেছে। এ স্থানের একশ মিটার দক্ষিণেই ডাকাতিয়া নদী। এখানে আশ্রয় নেয়া পাখিরা দিনের বেলা ওই নদসহ আশপাশের বিভিন্ন জলাশয় থেকে আধার খেয়ে বিকেলে নীড়ে ফিরে আসে। প্রতিদিন বিকেলে এসব পাখিদের উড়োউড়ি পথচারিদের মনে একরাশ আনন্দ বিলিয়ে দেয়। যদিও কখনো কখনো পাখির মল বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবুও এ কষ্টটুকু সয়ে যান পাখির প্রতি অগাধ ভালোবাসার থেকে। পাখি প্রেমীরা বলছে, পাখিরা এ স্থানটিকে নিরাপদ বলেই বাসা বাঁধে ঘর করে বছরের পর বছর।
স্থানীয় আরিফ, সেলিম, সবুজ, রিয়াজসহ অনেকই জানায়, সন্ধ্যার আগে ঝাঁকে ঝাঁকে পানকৌড়ি ও বকের উড়ে আসার দৃশ্য দেখে খুব ভালো লাগে। এখানে পাখিদের কেউ ডিস্টার্ব করে না। যে কারণে এস্থানটিকে নিরাপদ মনে করে। যদিও পাখি ও পাখিদের বাচ্চাদের পায়খানা অনেক সময় বিড়ম্বনার কারণ হয়। এনিয়ে তাদের কোনো অভিযোগ নেই। বরং আনন্দ হিসেবে নেয় তারা।
স্থানীয়রা আরো জানায়, প্রথমে এখানো চড়ই, শালিকসহ দেশী অনেক প্রজাতির পাখি থাকতো। পরে অন্যান্য পাখি কম আসলেও বক আর পানকৌড়ি খুঁজে পায় নিরাপদ আশ্রয়। দুই বছর আগে মানুষের সমস্যার কথা চিন্তা করে গাছের ডাল কেটে দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু অদৃশ্য কারণে পাখিরা স্থানটি ত্যাগ করেনি। এটিকে পরম সৌভাগ্যই বললেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের প্রাণী বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোঃ শওকত ইকবাল ফারুকি। তিনি বলেন, পাখি ও বৃক্ষ ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকবো। যেহেতু এসব পাখি এখানে থাকতে পছন্দ করে তাই তাদের এখানে থাকতে দেয়া উচিৎ। যদি পথ চলতে গিয়ে পথচারিদের একটু সাবধানতা অবলম্বন করার আহবান জানালেন এ প্রাণীবিদ। তিনি বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষ ও পাখি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাখি বিভিন্ন কিটপতঙ্গ খায়। বৃক্ষের গুরুত্বতো বলে শেষ করা যাবে না।
তথ্য মতে, পানকৌড়ি একসঙ্গে দুই থেকে ছয়টি ডিম দেয়। এ পাখির ডিমের বর্ণ নীলচে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চকচকে সাদা বর্ণ ধারণ করে। পুরুষ ও স্ত্রী পানকৌড়ি যৌথভাবে ডিম ফুটাতে সহায়তা করে। অধিকাংশ ডিম থেকেই বাচ্ছা জন্ম নেয়। তিন থেকে পাঁচ সপ্তাহে ডিম থেকে ছানা ফোটে। তিন বছর বয়সে এরা বয়োঃপ্রাপ্ত হয়।