আবদুস সালাম/আমান উল্লাহ খাঁন ফারাবী:
ফরিদগঞ্জ উপজেলার রুপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের নারী ভোটাররা দীর্ঘ ৫০ বছর যাবৎ কোন ভোট প্রয়োগ করেন না। ভোট দিলে এলাকায় বিভিন্ন বালা-মসিবত আসবে এমন কুসংস্কারের কারণে তারা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে সবসময় বিরত আছেন। আর এসব নারী ভোটারদের ভোট প্রয়োগে উদ্বুদ্ধ করতে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উদ্বুদ্ধকরণ সভার আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল (১ জানুয়ারি) শনিবার সকালে গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত কলেজ মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলী হরির সভাপতিত্বে ও সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বেলায়েত হোসেনের পরিচালনায় আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। এসময় কোরআন ও হাদীসের আলোকে নারীদের ভোট প্রদানের গুরুত্ব নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন উপজেলা কমপ্লেক্স জামে মসজিদের খতিব মাওলানা ইউনুস হোসেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, পত্রিকার মাধ্যমে আমি জানতে পেরেছি ফরিদগঞ্জ উপজেলার রুপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের নারীরা গত ৫০ বছরেও ভোট দেন না। আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি কোন আলেম নারীদেরকে ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেন না। পর্দা রক্ষা করে নারীদের ভোট প্রদান ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। নারীরা ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকলে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনে জয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকে। অযোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত হলে ধর্মীয়ভাবে নারীরাও এর দায় এড়াতে পারবে না। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে নারীদেরকে ভোট প্রদান করতে হবে।
তিনি বলেন, কোন পীর শুধু মাত্র ভোট দেয়ার বিষয়ে নিষেধ করেছেন তা কিন্তু সঠিক নয়। আমি বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি পীর বলেছেন নারীরা পর্দা করে চলার জন্য। কিন্তু কিছু মানুষ পীরের এই কথাটিকে বিকৃত করে লোক মুখে প্রচার করে আসছে মহিলা ভোট দিলে এলাকায় নানা বিধি রোগ বালাই ছড়াবে। এমন কথা গত ৫০ বছরে এই এলাকার নারীদের ভোট প্রয়োগে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি, আপনারা নিজেদের পচন্দের ব্যক্তিকে আগামি ৫ জানুয়ারি ভোট দিয়ে কুসংস্কার প্রথা চিরতরে বন্ধ করবেন। ইসলামে নারীদের ধর্মীয় নিয়ম মেনে সকল কাজ করতে বলা হয়েছে। আপনাদের এই উপজেলায় দুইজন নারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা রয়েছে। এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই পুরুষের পাশাপাশি সমানভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ বিপিএম-বার বলেন, ইসলামের কোথায়ও বলা নেই নারীদের শুধুমাত্র ভোট প্রদানে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পর্দার মধ্যে থেকে কাজ করা ইসলাম নিষেধ করে নাই। উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে একাধিক পীর রয়েছেন, সে ইউনিয়ন গুলোতে নারীরা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছে। শুধুমাত্র এই ইউনিয়নের ৯ হাজারেরও বেশি নারী ভোটাররা তাদের ভোট দেন না বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আপনারা যদি চান পুলিশ পাহারায় আপনাদের বাড়ি থেকে ভোট কেন্দ্রে এনে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
এসময় আরো বক্তব্য রাখেন, ফরিদগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শহীদ হোসেন, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইস্কান্দার আলী, ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ কামরুজ্জামান প্রমুখ। এসময় উপস্থিত ছিলেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজিজুন্নাহার, কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনির চৌধুরী, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস ছোবহান লিটন প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত ২৫ ডিসেম্বর দৈনিক শপথের ১ম পাতায় ‘ফরিদগঞ্জে একটি ইউনিয়নে নারীদের কাছে ভোট গুরুত্বহীন’ এই মর্মে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের নজরে আসে। পরে তিনি নিজ উদ্যোগে নারীদের ভোট কেন্দ্রে ফেরাতে এই উদ্ধুদ্ধকরণ সভার ব্যবস্থা করেন।