ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি:
বৃদ্ধ বাবা মা, দুই ভাই ছয় বোনের পরিবারের সদস্যদের ভরণ পোষনের জন্য চাকুরি ও দীর্ঘকাল প্রবাস জীবন যাপন করলেও এখন জীবনের শেষ সময়ে এসে সেই ভাই বোনরাই বড় ভাইকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা করছে। জমি জমা নিয়ে তাদের একে অপরের বিরুদ্ধে একেরপর এক মামলা দায়েরের পাশপাশি বেশ কয়েকবার সালিশী বৈঠক হলেও ফলাফল শুন্য। বড় ভাই মিজানুর রহমানের দাবি ছোট ভাই মনির হোসেন ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের বড় কর্মকর্তা হওয়ার কারণে কোন কিছুকেই তোয়াক্কা করছে না। সর্বশেষ বসতঘর থেকে ভাড়াটিয়া উচ্ছেদ করে তালা মেরে দেয় ছোট ভাই। এছাড়া প্রতিনিয়ত গাছগাছালি কাটার ঘটনাতো ঘটছেই। স্থানীয় লোকজনের কথা ছোট ভাই মনির হোসেন মানুষের ঘরের আগুন নিভানোর কাজ করলেও নিজের ঘরের আগুন নিভাতে ব্যর্থ হয়েছেন। ঘটনাটি ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৫নং গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের দত্রা গ্রামে।
জানা গেছে, দত্রা গ্রামের আমিন উল্ল্যা শেখের বাড়ির দুলা মিয়ার দুই ছেলে ও ছয় মেয়ে। ১৯৯৪ সালে দুলা মিয়া ১২৫ বছর বয়সে মারা যান। ২০০৮ সালে মারা যান দুলা মিয়ার স্ত্রী। বাবা বৃদ্ধ হওয়ার কারণে দুলা মিয়ার বড় ছেলে মিজানুর রহমান বাদশা চাকুরি ও দীর্ঘকাল প্রবাসে চাকুরি করেছেন। চাকুরির অর্থ দিয়ে তিনি ভাই বোনদের সহযোগিতা করেছেন। নিজের অর্থ দিয়ে বাড়িতে চৌচালা ঘর করেছেন। কিন্তু গত ৭/৮ বছর আগে হঠাৎ করেই জমি জমা নিয়ে ভাইবোনদের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। স্থানীয়ভাবে একেরপর এক শালিশী বৈঠক হলে মিজানুর রহমানের অভিযোগ তার অন্য ভাইবোনেরা বৈঠকের রায় মানছেন না। ভাই-ভাইয়ে, ভাই-বোনে থানা এবং আদালতে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের হয়।
মিজানুর রহমান জানান, তাই ছোট ভাই মনির হোসেন বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স’র সহকারী পরিচালক (প্রশিক্ষণ)। মূলত তার চাকুরির কারণে সে দাপট দেখিয়ে আমাকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টায় লিপ্ত। এমনকি বোনেরাও ভাইয়ের সাথে হাত মিলিয়েছে। আমি ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার জন্য বর্তমানে ঢাকায় থাকি। বাড়িতে যেহেতু কেউ থাকে না, তাই সেই সুযোগে গত মাস খানিক আগে বাড়ির ভাড়াটিয়াকে বের করে দিয়ে বাড়িতে তালাবদ্ধ করে দেয়। সর্বশেষ ৯ ডিসেম্বর আমার রোপন করা বেশ কয়েকটি গাছ কেটে ফেলে। এভাবে একের পর এক ঘটনায় আমি নিরুপায় হয়ে পড়েছি।
ভাইয়ে ভাইয়ে জমি সংক্রান্ত বিবাদ বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বেশ কয়েকটি বৈঠকের সালিশদার মিজানুর রহমান ভদ্র জানান, বড় ভাই ব্যতিরেকে বাকী অন্য ভাই ও বোনেরা একজোট। তারা বড় ভাইকে ভিটি বাড়িতে কোন সম্পত্তি দিতে নারাজ। আমরা বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সালিশী রায় মানেনি তারা।
স্থানীয় এলাকার লোকজন জানায়, মিজানুর রহমানের নিজের অর্থ দিয়ে বাড়ি করলেও সেই বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছে তার ভাই বোনেরা। ছোট ভাই মনির হোসেন সরকারি বড় কর্মকর্তা হওয়ায় কেউই তার বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না। মনির হোসেন চাকুরির সূত্রে মানুষের ঘরের আগুন নিভানোর কাজ করলেও নিজের ঘরের আগুন নিভাতে পারছেন না।
এ ব্যাপারে মনির হোসেন জানান, আমার বড় ভাই মিজানুর রহমান ইতিপূর্বে আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি সব বিক্রয় করে দিয়েছে। সে যে সম্পত্তি পাবে। তার থেকে অনেক বেশি বিক্রয় করেছে। বসতঘরে তালা মারার বিষয়ে তিনি বলেন, ঘরটিও আমার কাছে ৬০ হাজার টাকা বিক্রয় করে দিয়েছে। তাই তালা মেরে দিয়েছি। গাছ কাটার বিষয়ে তিনি বলেন, জমিও আমার গাছও আমার তাই কেটে বিক্রয় করেছি।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান পাটওয়ারী বলেন, তাদের দুই ভাইয়ের সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। এক ভাই সালিশ মানলে আরেক ভাই মানে না। এছাড়া মনির নিজের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে এলাকার নিরাপরাধ কিছু মানুষকে মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে। যা ঠিক নয়।