উপ-সম্পাদকীয়
মুফতী নূর হুসাইন বিন আবু তাহের
শিক্ষক, জামিয়া দারুল ঈমান, চাঁদপুর।
আজ শাবান মাসের ৯ তারীখ। আরবী যে সকল মাসের ফজিলত ও গুরত্ব এসেছে তম্মধ্যে শা’বান মাস অন্যতম। আরবী মাস হিসাবে এটি অষ্টমতম মাস। আর সামনের মাস হল রমজান মাস। যা আরবী মাস হিসাবে নবম তম। যেহেতু ইসলাম ধর্মের গুরত্বপূর্ণ কিছু বিধান আরবী মাসের সাথে সম্পৃক্ত তাই একজন মুসলিমের আরবী মাসের দিন-তারিখ সম্পর্কে খোজ-খবর রাখা উচিৎ। তাই আজ শা’বান মাস সম্পর্কে কিছু কথা নিবেদন করছি। এ মাসটি আমাদের মাঝে রমজানের আগমনী বার্তা নিয়ে উপস্থিত হয়। শীতকাল যেমন আমাদেরকে বসন্তকালের জানান দেয় তেমনি এ মাসটি আমাদেরকে রমজানের জানান দেয়। এ মাসটি মুমিন হৃদয়ে নাড়া সৃষ্টি করে। তাকে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে এবং মানসিকভাবে তৈরি হওয়ার আহ্বান জানায়। তাই তো মুমিন এই মাসের দিন তারিখ গণনা করতে থাকে, যেন তার থেকে রমজানের কোন রোজা ছুটে না যায়। হযরত আবু হুরায়রা রাঃ সুত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাঃ বলেছেন, তোমরা রমজান মাসের জন্য শা’বানের চাঁদ গণনা করিও। ( মেশকাত শরীফ ১নং খন্ড ৩০৫ পৃ: হাদীস ১৯৭৫) এই হাদীসে প্রিয় নবী সাঃ রমজানের রোজা যেন আমাদের থেকে ছুটে না যায় তাই শা’বানের চাঁদের হিসাব করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
রাসূল (সাঃ) রমজানের পর শা’বান মাসে অধিক রোজা রাখতেন
প্রিয় নবী সাঃ এর একটি প্রিয় আমল ছিল রোজা রাখা। তিনি সাধারণত প্রতি মাসে চাঁদের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখে এবং সপ্তাহের সোম ও বৃহষ্পতিবার রোজা রাখতেন। এরপর রমজানের পর সবচেয়ে যে মাসে বেশি রোজা রাখাতেন সেটা হল শা’বান মাস। আম্মাজান হযরত উম্মে সালামা রাঃ বলেন, আমি রাসূল সাঃ কে শা’বান ও রমজান মাসে লাগাতার রোজা রাখতে দেখেছি। (মেশকাত হা: ১৯৭৬)
অন্য হাদীসে এসেছে আম্মাজান আয়েশা রাঃ বলেন, আমি রাসূল সাঃ কে শা’বান মাসে সবচেয়ে বেশি রোজা রাখতে দেখেছি। আরেক বর্ণনায় এসেছে তিনি পূর্ণ শা’বান মাস রোজা রাখতেন। (মেশকাত)
শা’বান মাসে রোজা রাখার ব্যাপারে উম্মতের প্রতি রাসূলের নির্দেশনা
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ বলেন, রাসূল সাঃ বলেছেন, যখন শা’বান মাসের অর্ধেক অর্থাৎ ১৫ দিন শেষ হয়ে যায় তখন তোমরা রোজা রাখিও না। (মেশকাত শরীফ হাদীস নং-১৯৭৪) মোল্লা আলী ক্বারী রহঃ বলেন বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, শা’বান মাসের প্রথম ১৫ দিন পরেও রোজা রাখা জায়েয আছে। আর এই হাদীসের মর্ম হল, রাসূল সাঃ উম্মতের প্রতি সহানুভুতিশীল হয়ে রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। কারণ রমজানের আগে রোজা রাখলে দুর্বল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, ফলে রমজানের রোজা শক্তি নিয়ে আদায় করা যাবে না। (মেরকাত ৪নং খন্ড পৃ: ৪০৯) তাই আসুন রাসূল সাঃ কে অনুসরণ করে আমরাও এ মাসে স্বল্প পরিমাণ রোজা রেখে রমজানের রোজার প্রস্তুতি গ্রহণ করি।