উপসম্পাদকীয়
মুফতী নূর হুসাইন ইবনে আবু তাহের
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পৃথিবীতে মানব জাতীর হেদায়েতের জন্য যুগে যুগে অনেক নবী ও রাসূলগণকে পাঠিয়েছেন। নবী রাসূলগণ নিজ সম্প্রদায়ে এসে তাওহীদ, রেসালাত ও আখেরাতের দাওয়াত দিয়েছেন। তাদের কে আহবান করেছেন সত্যের পথে, অন্ধকার পথের পরিবর্তে দেখিয়েছেন আলোর পথ। বহু উপাস্য পরিহার করে এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহবান করেছেন। সুন্দর ও মার্জিত ভাষায় মূর্তির অসারতা তুলে ধরেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালার অপার কুদরত ও ক্ষমতার কথা উল্ল্যেখ করে তার প্রতি ঈমান আনার জন্য ক্ষমতাসীন কাফেরদেরকে দাওয়াত দিয়েছেন দিবা- নিশি। আল্লাহর মনোনিত ধর্মের দাওয়াত দিতে গিয়ে বিভিন্ন নবী ও রাসূল বেঈমান কাফেরদের জুলুম নির্যাতনের মুখোমুখি হয়েছেন, যা আমাদের কম বেশি সবারই জানা আছে।
নবী রাসূলগণের দাওয়াতী মিশনের ধারাবাহিকতায় আল্লাহ তায়ালা শেষ নবী মোহাম্মদ সাঃ কে আরবের মক্কায় হযরত ইসমাঈল আঃ এর বংশে প্রেরণ করেন। প্রিয় নবী সাঃ মক্কার মুশরিকদেরকে ইসলামের পথে আহবান করেছেন। তাদেরকে মূর্তি পূজা ছেড়ে এক আল্লাহর উপর ঈমান আনয়নের দাওয়াত দিয়েছেন। মূর্তি পূজার অসারতা তাদের মাঝে তুলে ধরেছেন। কিন্তু মক্কার কাফেররা রাসূলের আহবানে সাড়া না দিয়ে তাকে কবি, গণক ও যাদুকর ইত্যাদি বলে উপহাস করত। এমনকি কোন কোন নরাধম কাফের রাসূলের প্রতি পাথর ছুড়ে মারত।
দীর্ঘ দশ বছর মক্কাবাসীদের নিকট ইসলামের দাওয়াতী কার্যক্রম চালানোর পর তাদের থেকে আশানুরূপ সাড়া না পেয়ে রাসূল সাঃ ভাবলেন নিকটবর্তি শহর তায়েফে গিয়ে যদি ইসলাম প্রচার করি তাহলে হয়ত তায়েফবাসী ইসলাম কবুল করবে। তাই রাসূল সাঃ নবুওয়াতের দশম বছর শাওয়াল মাসে স¦ীয় পালকপুত্র যায়েদ ইবনে হারেসাকে সাথে নিয়ে তায়েফের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। সেখানে গিয়ে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের কাছে ইসলামের দাওয়াত পেশ করার পর তারা তো ইসলাম গ্রহন করলই না উল্টা অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে শহরের কিছু দুষ্ট বালকদের কে রাসূল কে কষ্ট দেওয়ার জন্য লেলিয়ে দেয়। বখাটে ছেলেগুলো রাসূলকে লক্ষ করে পাথর নিক্ষেপ করতে থাকে যার ফলে রাসূল সাঃ এর পুরা শরীর রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায়। যায়েদ ইবনে হারেসা রাসূল কে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করলে তাকেও পাথর মেরে রক্তে রঞ্জিত করে দেয়। (সীরাতে মুস্তফা ১/২৭১)
রাসূল সাঃ প্রায় এক মাস এ সফরে অতিবাহিত করার পর ভারাক্রান্ত দ্বীল নিয়ে যখন মক্কায় ফিরে আসেন তখন রাসূল কে শান্তনা দেওয়ার মত কোন লোক ছিল না। কেননা আপন চাচা আবু তালিব ও প্রাণ প্রিয় স্ত্রী খাদীজা রাঃ তায়েফ সফরের পূর্বেই ইন্তেকাল করেছেন। ঠিক এ সময়টাতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রাসূল কে শান্তনা দেওয়ার জন্য সকল নবীদের উপর তার মাকাম উঁচু করার জন্য ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে কাফেরদের জুলুুম অত্যাচারের পুরস্কার প্রদান এবং উম্মতে মুহাম্মদীকে ৫ ওয়াক্ত নামাজের হাদীয়া দেওয়ার জন্য নিজের কাছে টেনে নিয়েছেন, যা মেরাজ নামে প্রশিদ্ধ। (সীরাতে মুস্তফা ১/২৮২)
মহান আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মদ সাঃ কে এক রজনীতে পবিত্র মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত এবং সেখান থেকে সপ্তম আকাশে সিদরাতুল মুনতাহা সেখান থেকে আরশে আজীম পর্যন্ত ভ্রনন করাইয়াছেন। সীরাত গবেষকদের পরিভাষা অনুযায়ী মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত ভ্রমন কে ইসরা বলে আর সেখান থেকে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত ভ্রমন কে মেরাজ বলা হয়। (সীরাতে মুস্তফা ১/২৮৫পৃ:)
পবিত্র কোরআনে সূরা বণী ইসরাঈলে আল্লাহ বিবরণ দিয়ে বলেন, অর্থ: পবিত্র ঐ সত্তা যিনি স্বীয় বান্দাকে অর্থাৎ মোহাম্মদ সাঃ কে রাত্রের একটা অংশে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত নিয়ে গেছেন। এর দ্বারা উদ্দেশ্যে হল যেন আমি তাকে আমার নিদর্শনাবলি দেখাতে পারি, নিশ্চয় তিনি সব কিছু শুনেন সব কিছু দেখেন। (সূরা বণী ইসরাঈল আয়াত -১) উল্লেখিত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইসরার কথা আলোচনা করেছেন। আর সহীহ হাদীসে মেরাজের আলোচনা এসেছে। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়ার আক্বীদা হল রাসূল সাঃ এর ইসরা ও মেরাজ স্বশরীরে জাগ্রত অবস্থায় সংগঠিত হয়েছে। (তাফসীরে ইবনে কাসীর)
রাসূলে আকরাম সাঃ এর জীবণীকারদের মাঝে এ বিষয়ে মতভেদ আছে যে, কোন বছরে রাসূলের মেরাজ সংগঠিত হয়েছে? এ ব্যাপারে তাদের থেকে মোট ১০টি মতামত পাওয়া যায়। তবে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মত হল নবুওয়াতের দশম বছর মেরাজ সংগঠিত হয়েছে। এখন বাকী থাকল কোন তারীখে? এ ব্যাপারেও সীরাত গবেষকদের মাঝে বিভিন্ন বিবরণ পাওয়া যায়, তবে প্রশিদ্ধতম বিবরণ হল রজব মাসের ২৭ তারীখ রাত্রে। (সীরাতে মুস্তফা ১/ ২৮৩)
যেভাবে ঘটেছে মেরাজের ঘটনা
সহীহ হাদীসে মেরাজের বিশদ বিবরণ এসেছে, নিম্মে সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরছি। এক রজনীতে রাসূল আকরাম সাঃ উম্মে হানীর ঘরে আধা ঘুম ও আধা জাগ্রত অবস্থায় শোয়া ছিলেন। হঠাৎ ছাদ ফেটে হযরত জিব্রাঈল আঃ অন্যান্য ফেরেস্তাসহ নিচে নেমে আসলেন। তারপর রাসূল কে জাগিয়ে মসজিদে হারামের দিকে নিয়ে গেলেন। সেখানে যাওয়ার পর তারা রাসূল কে কা’বার হাতীমে শুইয়ে দিয়ে রাসূলের বক্ষ বিদারণ করলেন। (বর্তমান যুগে যেমন ডাক্তারগণ ওপেন হার্ট সার্জারী করে থাকেন প্রায় এরকম করলেন) তারপর ফেরেস্তাগণ রাসূলের ক্বলব মোবারক বের করে যমযম পানি দিয়ে ধৌত করলেন। তারা জান্নাত থেকে একটি স্বর্ণের পেয়ালা সাথে নিয়ে এসেছিলেন যা ঈমান ও হিকমত দ্বারা পূর্ণ ছিল। সেই ঈমান ও হিকমত রাসূলের সিনার ভিতর দিয়ে সিনা মোবারক লাগিয়ে দিলেন। আর রাসূলের দুই কাধের মাঝখানে নবুওয়াতের সীল মোহর লাগিয়ে দিলেন। এরপর বোরাক নিয়ে আসা হল এটি মূলত জান্নাতি একটি প্রাণী যা খচ্চর থেকে কিছু ছোট আর গাধার চেয়ে কিছু বড় গায়ের রং ছিল সাদা, যার এক একটি কদম দৃষ্টির শেষ সীমায় গিয়ে পড়ত। যখন রাসূল সাঃ তার উপর আরোহন করলেন তখন বোরাক নড়া চড়া শুরু করল। জিব্রাঈল আঃ বোরাককে ধমক দিয়ে বললেন, হে বোরাক কেন নড়াচড়া করছ? তোমার পিঠে আজ পর্যন্ত মোহাম্মদ সাঃ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর কোন বান্দা আরোহন করে নি। এ কথা শুনে বোরাক লজ্জায় ঘর্মাক্ত হয়ে গেল। তারপর বোরাক রাসূল সাঃ কে নিয়ে রওয়ানা শুরু করল? রাসূলের পিছনে জিব্রাঈল ও মিকাঈল আঃ ও ছিলেন।
হযরত শাদ্দাদ ইবনে আউস রাঃ থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল সাঃ বলেন, পথিমধ্যে আমি এমন একটি অঞ্চল অতিবাহিত করি যাতে প্রচুর পরিমাণে খেজুর বৃক্ষ দেখতে পাই। জিব্রাইল আমাকে সেখানে নেমে নফল নামাজ পড়তে বললে আমি নেমে নফল নামাজ আদায় করি। জিব্রাঈল আমীন বললেন এই জায়গাটিকে আপনি চিনেন? যেখানে আপনি নফল নামাজ পড়েছেন? আমি বললাম না। জিব্রাঈল আমীন বললেন। আপনি ইয়াছরিব তথা মদীনাতে নামাজ পড়েছেন, যেখানে আপনি হিজরত করবেন। তারপর চলতে চলতে একটি স্থানে পৌছলে জিব্রাঈল আমীন বললেন এখানেও নেমে নামাজ পড়–ন, আমি নেমে নামাজ পড়লাম। তারপর জিব্রাঈল বললেন আপনি হযরত মুসা আঃ যে স্থানে আল্লাহর সাথে কথোপকথন করেছিল সেই সিনাই উপত্যকায় নামাজ পড়েছেন। তারপর সেই স্থান থেকে রওয়ানা দিয়ে আরেকটি স্থানে পৌছলে জিব্রাঈল আঃ বললেন এখানে নামাজ পড়–ন, আমি বোরাক থেকে নেমে নামাজ পড়লাম। জিব্রাঈল আমাকে ডেকে বলল এটি হল বেতেলহাম যেখানে ঈসা আঃ জন্মগ্রহন করেছেন। (সুত্র: সীরাতে মুস্তফা ১ নং খন্ড ২৮৫-৮৬পৃ) চলবে ইনশাআল্লাহ
মেরাজের রাতে আশ্চর্য কিছু ঘটনা প্রত্যক্ষ করা
রাসূল সাঃ বোরাকে সওয়ার ছিলেন পথিমধ্যে এক বৃদ্ধা এসে রাসূল সাঃ কে ডাক দিলে জিব্রাঈল আঃ বললেন, সামনে চলুন তার দিকে দৃষ্টি দিবেন না। সামনে অগ্রসর হলে এক বৃদ্ধকে দেখতে পান সেও রাসূল সাঃ কে ডাক দেয় জিব্রাঈল বললেন সামনে চলুন, সামনে অগ্রসর হলে এক দল লোক রাসূল সাঃ কে এসে সালাম দেয় জিব্রাঈল আঃ বললেন এদের সালামের জবাব দিন। রাসূল সাঃ সালামের জবাব দিলেন। তারপর জিব্রাঈল আঃ বললেন , যে বৃদ্ধ আপনাকে ডাক দিয়েছে সে ছিল দুনিয়া, দুনিয়ার বয়স এ পরিমাণ বাকি আছে যে পরিমাণ এই বৃদ্ধা মহিলার হায়াৎ বাকী আছে। আর ঐ বৃদ্ধ ছিল শয়তান। তাদের উভয়ের উদ্দেশ্য ছিল আপনাকে তাদের দিকে আকৃষ্ট করা। আর ঐ জামাত যারা আপনাকে সালাম দিয়েছে তারা হলেন, হযরত ইব্রাহীম, মূসা ও ঈসা আঃ। (সাীরাতে মুস্তফা ১/ ২৮৭)
হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত রাসূল সাঃ বলেন, আমি মেরাজের রজনীতে এমন কিছু সম্প্রদায়ের নিকট দিয়ে অতিক্রম করেছি, যাদের নখগুলো পিতলের, তা দ্বারা তারা আপন চেহারা ও বক্ষকে ছিড়তেছে, আমি জিব্রাঈল আমীন কে জিজ্ঞাসা করলাম এরা কারা? তিনি বললেন এরা ঐ সকল লোক যারা মানুষের গোস্ত ভক্ষণ করত অর্থাৎ গিবত করত। (তাফসীরে ইবনে কাসীর ৫/৬পৃ)
সেই রজনীতে রাসূল সাঃ আরও এমন কিছু লোক দেখতে পেলেন যাদের মাথা পাথর দিয়ে থেতলে দেওয়া হচ্ছে, থেতলে দেওয়ার পর আবার ভাল হয়ে যাচ্ছে, আবার থেতলে দেওয়া হচ্ছে আবার ভাল হচ্ছে। এই আচরণ তার সাথে করে যাওয়া হচ্ছে। রাসূল সাঃ জিব্রাঈল কে জিজ্ঞাসা করলেন এরা কারা?
জিব্রাঈল আঃ বললেন এরা ঐ সকল লোক যারা ফরজ নামাজে অলসতা করত।
সামনে অগ্রসর হয়ে এমন কিছু লোককে দেখতে পেলেন, যাদের সামনে একটি হাড়িতে পাকানো গোস্ত রাখা আছে, আর অন্য আরেকটি হাড়িতে পঁচা দুর্গন্ধযুক্ত গোস্ত রাখা আছে। সেই লোকগুলো পঁচা দুর্গন্ধযুক্ত গোস্ত নিয়ে নিয়ে খাচ্ছে। আর পাকান সুস্বাদু গোস্ত খাচ্ছে না। রাসূল সাঃ এদের সম্পর্কে জিব্রাঈল আঃ কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, এরা আপনার উম্মতের ঐ সকল পুরুষ যাদের কাছে হালাল স্ত্রী ছিল কিন্তু সে তাকে বাদ দিয়ে এক পাপিষ্ঠ যেনাকার মহিলার সাথে রাত্রি যাপন করত। এবং আপনার উম্মতের ঐ সকল মহিলা যারা নিজের হালাল স্বামীকে ছেড়ে কোন বদকার পুরুষের সাথে রাত কাটাত।
সামনে অগ্রসর হলে এমন কিছু লোককে দেখতে পেলেন যাদের জিহবা কেচি দ্বারা কাটা হচ্ছে, কিছুক্ষণ
পর আবার ঠিক হয়ে যাচ্ছে। রাসূল সাঃ জিব্রাঈল কে এদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, এরা হল আপনার উম্মতের ঐ সকল ওয়ায়েজ ও বক্তা যারা অন্যদেরকে নসিহত করত কিন্তু নিজেরা আমল করত না। (সীরাতে মুস্তফা ১/ ২৮৮,৮৯ ও তাফসীরে ইবনে কাসীর)
বাইতুল মোকাদ্দাসে পৌছে রাসূল সাঃ বোরাককে ঐ পাথরের সাথে বেঁধেছেন, পূর্ববর্তি নবীগণ যার সাথে তাদের বাহন যন্তুকে বাঁধতেন। তারপর রাসূল সাঃ ও জিব্রাঈল আঃ বায়তুল মাকদিসে প্রবেশ করে দুই রাকাত নামাজ পড়েছেন। তারপর মেরাজ নিয়ে আসা হল যা মূলত একটি সিঁড়ী। তাতে আমি চড়লাম আর বোরাকটি ঐ স্থানেই বাঁধা ছিল। জিব্রাঈলসহ উর্ধজগতে উঠতে থাকলাম, প্রথম আকাশে হযরত আদম আঃ দ্বিতীয় আকাশে ঈসা আঃ তৃতীয় আকাশে ইয়াহইয়া আঃ চতুর্থ আকাশে ইদরিস আঃ পঞ্চম আকাশে হারুন আঃ আর ষষ্ঠ আকাশে মূসা আঃ এর সাথে সাক্ষাত হল। সপ্তম আকাশে পৌছে দেখি হযরত ইব্রাহীম আঃ বায়তুল মামূরের প্রাচীরের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছেন আর তার সামনে ছোট ছোট বা””ারা বসে আছে। এই বায়তুল মামূর হল ফেরেস্তাদের মসজিদ যা ঠিক কা’বা ঘরের উপরে উবস্থিত। যাতে প্রতিদিন ৭০ হাজার ফেরেস্তা নামাজ আদায় কারে। কেয়ামতের আগে এখানে প্রবেশ করার পালা তাদের আর আসবে না।
তারপর রাসূল সাঃ কে সিদরাতুল মুনতাহার দিকে ঊঠান হয় যা সপ্তম আকাশের উপরে একটি বরই বৃক্ষ। এই স্থানে রাসূল সাঃ হযরত জিব্রাঈল আঃ কে তার আসল সূরতে দেখতে পেয়েছেন। এখানে রাসূল সাঃ কে জান্নাত ও জাহান্নাম দেখান হয়েছে, আর জান্নাত সিদরাতুল মুনতাহার কাছেই অবস্থিত। তারপর রাসূল সাঃ কে রফরফ যোগে আল্লাহর দরবারে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে পৌছার পর তিনি আল্লাহর সাথে কথপকথন করেন। তারপর আল্লাহ তায়াল রাসূল সাঃ কে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ হাদিয়া সরূপ প্রদান করেন।
এখানে একটি প্রশ্ন থাকে যে , রাসূল সাঃ কি এই রজনিতে আল্লাহকে দেখেছেন? আল্লামা ইমাম ইবনে কাসীর রহঃ তার জগৎ বিখ্যাত তাফসীরে লেখেন, সঠীক কথা হল রাসূল সাঃ এ রজনীতে আল্লাহকে দেখেন নি। তিনি দলীল হিসাবে বলেন, একদা সাহাবী আবু যর গেফারী রাঃ রাসূল কে জিজ্ঞাসা করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ আপনি কি আপনার রব কে দেখেছেন? জবাবে রাসূল সাঃ বলেন আমি আমার রবের নূর দেখেছি। (তাফসীরে ইবনে কাসীর ৫নং খন্ড ৪নং পৃ)
রাসূল সাঃ পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ নিয়ে আল্লাহর কাছ থেকে রওয়ানা দিয়ে যখন মূসা আঃ পর্যন্ত পৌছলেন তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন আল্লাহ আপনাকে কি দিয়েছেন? রাসূল বললেন ৫০ ওয়াক্ত নামাজ দিয়েছেন। মূসা আঃ বললেন আপনার উম্মত দূর্বল তারা তা পারবে না আপনি আল্লাহর কাছে গিয়ে কমিয়ে দেওয়ার আবেদন করুন। রাসূল সাঃ আল্লাহর কাছে গিয়ে কমানোর আবেদন করলে আল্লাহ ১০ ওয়াক্ত কমিয়ে দিলেন । যখন মূসা আঃ পর্যন্ত ফিরে আসলেন তখন তিনি বুঝিয়ে আবার পাঠালেন। এবার আল্লাহ তায়ালা ১০ ওয়াক্ত কমিয়ে দিলেন, এভাবে আসা যাওয়া জারী থাকল এক পর্যায়ে ৫ ওয়া ক্তে এসে ঠেকে। আর আল্লাহ তায়ালা বলে দিলেন যে ব্যক্তি ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে আমি তাকে ৫০ ওয়াক্তের সওয়াব প্রদান করব।
তারপর রাসূল সাঃ জিব্রাঈল আঃ ও সকল নবীগণসহ বায়তুল মাকদিসে ফিরে আসেন তখন ফজরের ওয়াক্ত হলে আযান দেওয়া হয় আর রাসূল সাঃ সকল নবীদের ইমামতি করেন। তারপর বোরাক যোগে মক্কায় ফিরে আসেন। (তাফসীরে ইবনে কাসীর ৫নং খন্ড পৃ ১৪, ১৫ সংক্ষীপ্ত)
মেরাজের শিক্ষাঃ- ইসলামের একমাত্র বিধান নামাজ, যা আল্লাহ তায়ালা রাসূল সাঃ কে আসমানে নিয়ে হাদিয়া সরূপ প্রদান করেছেন। আর সকল বিধান ওহী যোগে দুনিয়াতে ফরজ করা হয়েছে। তাই নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম । এক হাদীসে রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি নামাজ ইচ্ছাকৃত ছেড়ে দিল সে যেন দ্বীনকে ধংস করে দিল। তাই আসুন আমরা নামাজের গুরুত্ব দিলে ধারণ করে সময়মত নামাজ আদায় করি।