বিল্লাল ঢালী :
হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেছে। আপনি ভাবছেন লোডশেডিং। কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলেন সবার বাসায় বিদ্যুৎ আছে। শুধু আপনার বাসায় নেই। তাড়াহুড়ো করে বিদ্যুৎ অফিসে অভিযোগ জানালেন। অভিযোগ শুনে বিদ্যুৎ অফিস জানালো আপনার মিটারে ব্যাটারী নষ্ট হয়ে গেছে। ব্যাটারি পরিবর্তন করতে হবে নতুন করে। যে কোন গ্রাহক ব্যাটারির কথা শুনে চিন্তায় পড়ে যাবেন। তাড়াতাড়ি করে বিদ্যুৎ ফিরে পেতে অফিসে অভিযোগ করবেন। কিন্তু বিদ্যুৎ পাবেন না। যতক্ষণ আপনি বিদ্যুৎ অফিসের স্টাফ ও দালাল চক্রের চাহিদা মতো টাকা পরিশোধ না করবেন। এটা এখন চাঁদপুর শহরের নিত্যদিনের ঘটনা। তাদের চাহিদা মতো টাকা দিবেন ব্যাটারি পরিবর্তন হয়ে বিদ্যুৎ সেবা ফিরে আসবে। অথচ বিদ্যুৎ বিভাগের ব্যাটারি পরিবর্তন সার্ভিস ফ্রি থাকলেও গ্রাহককে নিতে হচ্ছে টাকা খরচ করে। সকল গ্রাহককেই গুনতে হচ্ছে ব্যাটারি পরিবর্তনের নামে দুই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। সাথে হতে হচ্ছে হয়রানি। চাঁদপুর বিদ্যুৎ অফিসের এ গ্রাহক ভোগান্তি যেন দেখার কেউ নেই। তাই দিন দিন ক্ষুব্দ হয় উঠছে প্রিপেইড মিটার গ্রাহকরা। চাঁদপুর জেলায় প্রায় ৫৫ হাজার গ্রাহক প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করে। প্রতিদিনই গড়ে ২০ থেকে ৩০টি মিটারের ব্যাটারি পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এ ব্যাটারি পরিবর্তনে গ্রাহকের ভোগান্তিতে বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন থাকে গা ছাড়া ভাব নিয়ে। গ্রাহক সেবায় নজর দিচ্ছে না কেউ।
প্রিপেইড মিটার গ্রাহকরা অভিযোগ দেওয়ার চেষ্টা করলেও নেওয়া হয় না অভিযোগ। তাই তারা বাধ্য অর্থ খরচ করে তাদের মিটার সচল করেন। অভিযোগ দেওয়ার চেষ্টা করলে নানা ভাবে হয়রানি করা হয়। জনবল সংকটের কথা বলে বা অন্য কাজে ব্যস্ত বলে বিদ্যুৎ সেবা থেকে বঞ্চিত রাখা হয় গ্রাহককে। মানুষ ক্ষুব্দ হয়ে কোথাও অভিযোগ না করতে পেরে কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ ঝাড়ছেন। তেমনি একজন গ্রাহক রোটারিয়ান রফিকুল ইসলাম। তিনি তার ফেসবুক আইডিতে (জঃহজধভরয়ঁষ ওংষধস) লিখেন, চাঁদপুর বিদ্যুৎ অফিস আর কত এভাবে…?
বিদ্যুৎ বিড়ম্বনা আর হয়রানি, অতঃপর আর্থিক ক্ষতি। সকালে দশটায় দোকানে গেলাম। দেখি বিদ্যুৎ নেই। মিটার চেক করে দেখলাম ৩৩০ টাকা আছে, কিন্তু বোর্ডে লাইন নেই। ভাবলাম বোর্ডে বা খাম্বায় থেকে সমস্যা হচ্ছে। ফোন করলাম পুরান বাজার বিদ্যুৎ অফিসে। কারন আমার দোকান পুরান বাজারে। আমার কথা শুনে মাসুদ নামে একজন বলল মিটারে ৮০৬ চাপুন। আমি চেপে বললাম অ১ দেখায়। উনি বললেন আপনার মিটারে ব্যাটারী নষ্ট হয়ে গেছে। ব্যাটারি লাগাতে ২৫০০ টাকা লাগবে, আমি অনেকবার রিকোয়েস্ট করার পর উনি দোকানে এসে বললেন ২২০০ টাকার নিচে পারবেন না। ছোট্ট এক ইঞ্চি পরিমাণ জিনিসটির দাম এতো? যাহোক পরে আমি ফোন করলাম নতুন বাজার বিদ্যুৎ অফিসে চাকরি করা আমার এক বন্ধুকে। সে জানালো ১৮০০ টাকা লাগবে। পরে আমি দামাদামি করে ১৬০০ টাকায় রাজি করলাম। টাকা বিকাশে পাঠালাম। একটু পর সে বললো আরো ১০০০ টাকা লাগবে রিচার্জ করতে। আমি বললাম আমার মিটারে তো ৩৩০ টাকা আছে মাত্র ১০ দিন আগে টাকা ডুকিয়েছি। সে কোনো কারণ না বলে বলল এটাই নাকি সিস্টেম। টাকা নাকি আমার একাউন্টে থাকবে। আমি আবার টাকা পাঠালাম। লোক এসে ব্যাটারি লাগালো বিদ্যুতে ঘর আলোকিত হলো। রিচার্জের ১০০০ টাকার আমি পেলাম মাত্র ৪২ টাকা। ব্যাটারি লাগাতে মেকানিকনিল ১৫০ টাকা। সব মিলিয়ে আমার আজ ২৮০০ টাকা চলে গেল। আবার পরবর্তীতে কি অপেক্ষা করছে কে জানে? অনেকের কাছে শুনলাম তবুও আপনি অনেক কম টাকায় করিয়েছেন। এত ছোট এই ব্যাটারি এত শক্তি? আমরা সাধারন মানুষ কোথায় যাবো। কষ্টের উপার্জন এভাবে দিয়ে দিলে তো কষ্ট লাগবেই। আপনারা আর কবে সৎ হবেন? এবার থামুন। আর কত? আরো বলার ছিল কিন্তু কাকে বলবো। কি হবে বলে?
প্রিপেইড মিটার ব্যাটারি বিষয়ে বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ বিউবো, চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম ইকবাল জানান, প্রিপেইড মিটারে ব্যাটারী পরিবর্তনে আমরা কোন প্রকার চার্জ নেই না। ব্যাটারি পরিবর্তনের নিয়ম হচ্ছে গ্রাহক আমাদের কাছে আবেদন করবেন। আমাদের লোকজন সরোজমিনে যাবে। ব্যাটারি প্রয়োজন হলে ব্যাটারি পরিবর্তন করে আসবে। আমাদের কাছে আবেদন করলে আমাদের লোকজন যেতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হয়। চাঁদপুরে প্রায় ৫৫ হাজার গ্রাহক আছে আমাদের লোকদের অন্যান্য কাজও করতে হয় তাই কিছুটা সময়ের প্রয়োজন পরে এটাকে হয়রানি বলা যায় না। আধুনিক সেবা পেতে একটু ছাড় দিতে হবে আপনি যখন দোকান থেকে একটা টেলিভিশন ক্রয় করেন এটার ওয়ারেন্টি থাকে পাঁচ বছর সার্ভিসিং এর জন্য সময়ের প্রয়োজন হয় তখন এটাকে আপনি কি বলবেন?
গ্রাহক হয়রানি অর্থ লেনদেন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যাটারি পরিবর্তন করতে কোন প্রকার অর্থ লেনদেন হয় এটা আমার জানা নেই কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ দায়ের করেননি। অভিযোগ এলে বিষয়টি দেখবো তাছাড়া কেউ যদি অর্থ লেনদেন করে থাকেন এটা তার বিষয় এবং যাকে দিচ্ছেন তার বিষয় এখানে আমাদের কিছু করার নেই।