বিল্লাল ঢালী:
মোঃ সফিক মিজি। মুখে সাদা দাড়ি। বয়স পয়ষট্রি। নিজের ভ্যান গাড়ির উপর ডাবের খোসা পরিস্কার করছেন। মুখে চিন্তার ভাঁজ। শনিবারের অবিক্রিত পাচঁটি ডাব ছিলো। তাই বিক্রি করতে বের হয়েছেন। রোববার দুপুরে চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সামনেই সবগুলো বিক্রি হয়ে গেছে। এখন ভ্যান গাড়িটি খাঁ খাঁ করছে। ডাব কেনাও সুযোগ নেই বিক্রি করাতো দূরের কথা। তাই বিক্রির জন্য ডাব আনবেন কিভাবে এ চিন্তায় তিনি অস্থির। ওদিকে পেটের ক্ষুদা যেন বাড়তে থাকে। নারিকেল গাছ কেনা সম্ভবন না। কারণ তিনি গাছে উঠতে পারেন না।
১৯৮৮ সালের ভাংগারীর ব্যবসা ছিল। ব্যবসায় কয়েক লাখ টাকা পুঁজি। ব্যবসায় লোকসান হল আর নিঃস্ব হলাম। পাওনাদারদের চাপ শুরু হলো। পাওনাদার বাড়িতে আসলে কথা শুনতে হবে। তাই নিজের যেটুকু ভিটা-বাড়ি ছিল বিক্রি করে দেনা শোধ করেছি। কথাগুলো বলেছিলেন সফিক মিজি।
সফিক মিজি গত কয়েক বছর যাবৎ চাঁদপুর ডিসি অফিসের সামনে ফুটপাতে সবজি বিক্রি করতেন। প্রাণঘাতি করোনার প্রভাবে সারাদেশ অচল হওয়ায় আজ তার রুজিও বন্ধ। সরকারি নিষেধ মেনে ঘরেই বসে ছিলেন। সময় বয়ে যাচ্ছে নিজের গতিতে। দিনও পার হচ্ছে একটির পর একটি। অবস্থা কবে ভালো হবে আল্লাহ জানে। কিন্তু বিপত্তি হচ্ছে পেট। পেটতো বুঝে না বিশ্ব বা দেশের অবস্থা। বাঁচার জন্য পেটকে দিতে হয় খাদ্য। যেটুকু খাবার ছিলো তা ইতোমধ্যে ফুরিয়ে গেছে। তিন চারদিন হলো ভ্যান গাড়ীতে ডাব বিক্রি করতে নেমে গেছেন পেটের তাগিদে। স্ত্রী রোকেয়া খাতুন গৃহিনী। সফিক মিজির চার ছেলে ও এক মেয়ে। বড় তিন ছেলে পড়াশুনা করেনি। দিন মজুরের কাজ করে। তিন ছেলেই বিয়ে করে আলাদা থাকে। যা কাজ করে তাদের সংসার ঠিক মতো চলে না। এ কারণে বাবাও কিছুই পায় না এদের থেকে। ছোট ছেলে এবং মেয়ে থাকে তার সাথে। ছেলে কলেজে পড়ছে আর মেয়ে মাদ্রাসায়।
ভিটা বাড়ী বিক্রির পর গৃহহীণ হলে বড় ছেলের নামে সরকারী আশ্রায়ণ প্রকল্পে গুচ্ছ গ্রামে একটি ঘর বরাদ্দ পান। এটাই এখন স্থায়ী নিবাস। চাঁদপুরের কটরাবাদ মিজি বাড়িতে জন্ম সফিক মিজির। সেখানেই ছিলো তার ভিটা বাড়ি। সরকারি আশ্রয়ণ কেন্দ্র হওয়ায় সরকারিভাবে একবার ত্রাণ বরাদ্দ পেয়েছেন। যা পেয়েছেন তা খুব সামান্য। চার পাঁচ দিন চলার মতো। গত ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে চলছে সরকারি বিধি নিষেধ। দীর্ঘ প্রায় ২৫ দিন। পাঁচ দিনের খাবার পেয়েছেন। বাকী বিশ দিন কিভাবে কেটেছে খোঁজ নেয়নি কেউ।