বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দীর্ঘদিন দেশের স্কুল কলেজ বন্ধ রেখেছে সরকার। সারাদেশে লকডাউন। সপ্তাহের পর সপ্তাহ লকডাউনের সময়সীমা বাড়িয়ে চলেছে সরকার। কবে যে লকডাউন মুক্ত বাংলাদেশ হবে সেই হিসেব কেউই মিলিয়ে দিতে পারছে না। দিন দিন ভেঙে পড়েছে সাধারণ মানুষ। জীবনযাত্রায় নেমে এসেছে দুর্ভোগ।
প্রানঘাতী করোনা কেড়ে নিয়েছে জীবনের মহামূল্যবান একটি বছর। কেড়ে নিয়েছে লাখ লাখ প্রান। দিয়েছে দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা আর হতাশা। আর শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ পড়েছে অনিশ্চিতয়ার মূখে। তেমনই একজন শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দৈনিক শপথেরস্টাফ রিপোর্টার রিয়াজ শাওন।
চাঁদপুর সরকারি কলেজ ও বিশ্বাবিদ্যালয়ের মাস্টার্সের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী মিশু সানজিদা। তিনি একজন নতুন উদোক্তা ও লেখিকা। দৈনিক শপথের সাথে তার একান্ত সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হল।
দৈনিক শপথ: মহামারি করোনার এই দূর্যোগকালীন বন্ধে পড়াশোনা কেমন চলছে?
মিশু সানজিদা: পড়াশোনা লকডাউনের প্রথমে দিকে নিয়ম মাফিক করেছি কারন আমাদের পরিক্ষা ছিলো সামনে। কিন্তু লকডাউনের বন্ধ যখনআস্তে আস্তে বাড়তে থাকে তখন পড়াশোনা ধীরগতি হয়ে গেছে। তাছাড়া সেই পরিক্ষা এখনো আটকিয়ে আছে।
দৈনিক শপথ: দীর্ঘ সময় ধরে কলেজ বন্ধ। এই বন্ধ সময়ে বাসায় পড়াশোনা কিভাবে করা হয়?
মিশু সানজিদা: বাসায় পড়াশোনা করা হয় নিজের রুটিন মাফিক। কারন কলেজ খোলার পরই আমাদের মাস্টার্স ফাইনাল পরিক্ষা নেওয়া হবে। তাই সেই প্রিপারেশন নিয়ে বসে আছি।
দৈনিক শপথ: বাসায় পড়াশোনা করার জন্য কলেজ থেকে কোন গাইডলাইন দেওয়া হয় কিনা?
মিশু সানজিদা: বাসায় পড়াশোনার জন্য অবশ্যই আমাদের অনলাইনে প্রতিটি সাবজেক্ট-এর ক্লাস হয়। জুম অ্যাপে। আমাদের স্যার-ম্যামদের কাছ থেকে যথেষ্ট গাইডলাইন পাই।
দৈনিক শপথ: বাসায় পড়াশোনা ছাড়া অন্য কি করে সময় কাটে?
মিশু সানজিদা: বাসায় পড়াশোনা ছাড়া মাঝেমধ্যে লেখালেখি করা হয়। এছাড়া কাপড়ে হাতের কারুকাজ করি। বিভিন্ন ড্রেস-শাড়ী-পাঞ্জাবি ডিজাইন করি এবং সেই সুবাদে নিজ উদ্যোগে অনলাইন বিজনেস করি। এছাড়াও অবসর সময়গুলোতে আসন্ন জব এক্সামের জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছি। সব মিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ সময় গুলোকে কাজে লাগানোর সর্বোচ্চ চেস্টা করে যাচ্ছি।
দৈনিক শপথ: সাধারণত এত দীর্ঘ সময় ধরে কলেজ বন্ধের সাথে তোমরা পরিচিত না। সেই ক্ষেত্রে এতদিন কলেজের ক্লাস থেকে দূরে থাকায় পড়াশোনার প্রতি কোন অনিহা কাজ করছে কি না?
মিশু সানজিদা: পড়াশোনার প্রতি অনিহা কাজ করছে না। যেহেতু কলেজ খোলার সাথে সাথেই ফাইনাল পরিক্ষা হওয়ার আশংক্ষা আছে তাই পড়াশোনা ব্যাপারটা মাথায় রাখতেই হচ্ছে।
দৈনিক শপথ: করোনার পর্রবতীকালেপড়াশোনায় কেমন প্রভাব পেলবে বলে তুমি মনে করো?
মিশু সানজিদা: করোনা পরবর্তীকালে পড়াশোনায় অনেক নেতিবাচক প্রভাবই ফেলবে মনে হচ্ছে। আমরা আগের মত গ্রুপ স্টাডি হয়তো করবো না। সব সময় ডিসটেন্স ম্যাইনটেন করে চলতে হবে। করোনা আতংক সবসময়ই আমাদের মনে থাকবে।
দৈনিক শপথ: কলেজ, শিক্ষক কিংবা বন্ধু-বান্ধবী কাকে বেশি মিস করো?
মিশু সানজিদা: অনলাইনের মাধ্যমে ফ্রেন্ডস এবং স্যার-ম্যামদের সাথে অবশ্যই যোগাযোগ হয়। এর মাঝে সবচেয়ে বেশি মিস করতেছি আমাদের সেই প্রিয় চিরসবুজ ক্যাম্পাসকে।
দৈনিক শপথ: আচ্ছা এত লম্বা সময় ধরে কলেজ বন্ধ থাকায় তুমি কতটা খুশি?
মিশু সানজিদা: এতো লম্বা সময় স্কুল বন্ধ থাকায় আমি মোটেও খুশি না। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় অনেক ক্ষতি হচ্ছে,অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনা বিমুখ হয়ে যাচ্ছে। অনেকে পাবজি, ফ্রি ফায়ার ইত্যাদি অনলাইনে গেমসে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে,সামাজিক অপকর্মে জড়িয়ে যাচ্ছে।
দৈনিক শপথ: করোনা পর্রবতীকালে তোমার ভাবনা কি?
মিশু সানজিদা: করোনা পরবর্তী আমার ভাবনা,আমি মাস্টার্স ফাইনাল এক্সামটা সঠিকভাবে শেষ করতে চাই। কারন আজ দেড় বছর হতে চলেছে এক্সাম আটকে আছে। এই জন্য আমাদের নানাবিধ চিন্তা-হতাশার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তাই চিন্তা মুক্ত হতে চাই।
দৈনিক শপথ: একজন শিক্ষার্থী কিভাবে করোনাকালে। মানসিক এবং শারীরিক সুস্থ থাকতে পারে বলে তুমি মনে করো?
মিশু সানজিদাঃ একজন শিক্ষার্থী করোনাকালে মানসিক সুস্থতার জন্য অবশ্যই ধর্মীয় বিধান পালন করা উচিৎ এবং বাসায় কাজে হেল্প করা উচিৎ।আর শারীরিক সুস্থতার জন্য অবশ্যই নিয়মিত ঘুম আর স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া উচিৎ। যেগুলো আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে। আর জন-সমাগম এড়িয়ে চলা,মাস্ক পরা,হ্যান্ড সেনিটাইজার করা এবং পরিস্কার পরিচন্ন থাকা উচিৎ।
দৈনিক শপথ: একজন মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে অন্য শিক্ষার্থীদেকে সঠিকভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া জন্য। তুমি কি পর্রামশ দিতে চাও?
মিশু সানজিদা: শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য বলতে চাই।অবশ্যই তোমরা অনলাইন ক্লাসে এটেন্ড করবে এবং নিজে রুটিন মাফিক পড়বা। কঠিন বিষয়গুলো নোট করে রাখবা। সেগুলো স্যার-ম্যামদের সাথে শেয়ার করবা। সব সময় মনে রাখবা। পৃথিবী একদিন আগের মত সুস্থ-স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আগের মত আমরা স্কুল-কলেজে যাবো। আগের মত ক্লাসে কম্পিটিশন হবে। আমরা বাসায় বসে থেকে সেই কম্পিটিশনে যেন পিছিয়ে না যাই। আমাদের পড়াশোনা বিমুখ হলে চলবেনা। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড।
দৈনিক শপথ: আপনার সফলতা কামনা করিএবং আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো।
মিশু সানজিদা: দৈনিক শপথ পরিবারকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
রিয়াজ শাওন