এইচ.এম নিজাম:
বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে চাঁদপুরে আলােচনা সভা ও র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড-এর যৌথ উদ্যোগে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় আয়োজিত রাজধানীর গ্রিন রোডের পানি ভবনের মূল আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় তিনি বলেন, আমাদেরকে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং ভূগর্ভে জলাধার নির্মাণের ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সকলকে খাল, বিল, হাওর ও বাওড়ের সাথে নদীর সংযোগ বিন্দু সমূহ খুলে দেয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, তা না হলে নদীর নাব্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি এসকল বিষয় বিবেচনায় নিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বরোপ করেন।
এদিকে চাঁদপুরে বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত র্যালি ও আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন, জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইমতিয়াজ হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আসিফ মহিউদ্দিন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদারসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশ প্রকৃত পক্ষে মিঠা পানির দেশ। তারপরও জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি-৬ বাস্তবায়নের দিকে আমাদের বিশেষ দৃষ্টি রয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য সুপ্রিয় পানি ব্যবস্থা এবং স্যানিটেশন নিশ্চিত করা এসডিজি-৬’র সবথেকে বড় লক্ষ্য। ইতোমধ্যে স্যানিটেশনের ক্ষেত্রে আমরা ৯৭ ভাগ সাফল্য অর্জন করেছি। স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় সারাদেশেই স্যানিটারি ল্যাট্রিন তৈরি করা হয়েছে। প্রকাশ্য মলমূত্র ত্যাগ কমই দেখা যায়, সেটা নেই। সেই দিক থেকে আমরা যথেষ্ট অগ্রগামী।
তিনি বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশ আছে যেখানে সুপেয় পানি পাওয়া কষ্টকর। কিন্তু আমাদের বিশাল পানি সম্পদ রয়েছে। আমাদের এই সম্পদ যদি যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারি, আমাদের দেশের মানুষের এই কষ্ট হবে না। আমরা বিশ্বকে পানি সরবরাহ করতে পারবো। সেই বিষয়টা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে।
ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার সীমিত করার জন্য সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকায় নদীর পানি পরিশুদ্ধ করে সরবরাহ করা শুরু করেছি। ঠিক সেইভাবে জেলা ও উপজেলায় যেখানে লাইনের মাধ্যমে সুপ্রিয় পানি দিচ্ছি, সেখানেও নদীর পানি পরিশুদ্ধ করে দিচ্ছি।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে বন্যা হয়, সেখানে অনেক সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার জন্য আমরা ড্রেজিংয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। সেটা শুধু নদীর নাব্যতাই বাড়াবে না, নৌপথগুলো সচল হবে। স্বল্পমূল্যে পণ্য পরিবহন করতে পারবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাহলে আমাদের ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরতা কমে যাবে। বাংলাদেশের জন্য ভূগর্ভস্থ পানি বেশি ব্যবহার করার ক্ষতি হবে। কারণ, বাংলাদেশ ভূমিকম্প প্রবণ একটি দেশ। ভূমিকম্প থেকে এই পানি আমাদের রক্ষা করে। বাংলাদেশের নিচে শিলা আছে, তার নিচে আরও বিশাল পানির স্তর আছে। এটাই আমাদের রক্ষা করছে। সেখানে আমরা ভূগর্ভস্থ পানি বেশি ব্যবহার করলে ভূমিকম্পন হওয়ার সম্ভবনা বেশি দেখা দেবে।
বর্ষা ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নদীগুলো দীর্ঘদিন ড্রেজিং না হওয়ায় তলদেশ উঁচু হয়ে গেছে। এতে নদীর বিশালতা ও চওড়া বেড়ে গেছে। এতো চওড়া নদী আমাদের প্রয়োজন নাই। এখানে বিভিন্ন পকেট তৈরি করে, নদী ড্রেজিং করা পলি সেখানে ফেলে ভূমি উত্তোলন করতে পারি। ড্রেজিং করা পলির কারণে চাষ উপযোগী জমি যাতে নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।