সুমন আহমেদ:
মতলব উত্তরে আলোচিত সোহেল রানা হত্যাকান্ডের রহস্য উম্মোচন করেছে পুলিশ। পরকিয়া ও জায়গা-জমি সংক্রান্ত বায়না টাকার জের ধরে হত্যা করা হয় সোহেল রানাকে। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত তিনজনকে আটক করে আদালতে সোপার্দ করেছে পুলিশ এবং এ ঘটনায় আদালতে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামী মোঃ সিদ্দিক বকাউল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। গতকাল ১০ এপ্রিল বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে সে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় এ স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে। এর আগে গত ৯ এপ্রিল অভিযান পরিচালনা করে তাকে মুন্সিগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এর আগে গত ২ এপ্রিল মতলব উত্তর উপজেলার পূর্ব ষাটনল (মেহারুল্লাহ প্রধানিয়া কান্দি, পাঠানবাড়ি) গ্রামের জনৈক রোকেয়া বেগমের বসত বাড়ির পশ্চিম পার্শ্বে খাল পাড়ে কবরস্থান সংলগ্ন পূর্ব পার্শ্বে ধানি জমি থেকে একই গ্রামের সোহেল রানার (২৮) মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় নিহতের চোখে ও মাথায় জখম দেখা যায়। পরে মৃতদেহের ময়না তদন্তের জন্য মরদেহ চাঁদপুর সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়।
এ ঘটনায় মৃত সোহেল রানার মা রোকেয়া বেগম থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদের নির্দেশনায় ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) সুদীপ্ত রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) মঈনুল হোসেন, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার, মতলব সার্কেল, মোঃ ইয়াসির আরাফাত, মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ শাহজাহান কামাল, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ মাসুদ ও তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই/মোঃ মোবারক আলী খুনের মামলার রহস্য উদঘাটন, আসামীদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের নিমিত্তে তদন্তে নামেন।
পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জানতে পারে, উক্ত হত্যাকান্ডটি পরকীয়া প্রেম ও আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে বিরোধের কারণে সংঘঠিত হয়। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ আসামী মোঃ মাসুদ রানা ও তাহার স্ত্রী মোসাঃ সুফিয়াদ্বয়কে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে। পরবর্তীতে ৯ এপ্রিল অভিযান পরিচালনা করিয়া মুন্সিগঞ্জ থেকে আসামী মোঃ সিদ্দিক বকাউলকে গ্রেফতার করে। উক্ত আসামীকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হইলে আসামী ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, ভিকটিম মৃত সোহেল ও গ্রেফতারকৃত আসামী মাসুদ পরস্পর ফুফাতো/মামাতো ভাই হয়। ভিকটিম সোহেলের সহিত মাসুদের স্ত্রী মোসাঃ সুফিয়ার পরকীয়া সম্পর্ক ছিল এবং আসামী সিদ্দিকের সহিত জায়গা-জমি বায়না টাকা নিয়া পূর্ব হইতে বিরোধ চলিয়া আসিতেছিল। এই দুই বিরোধের জের ধরিয়া আসামী মাসুদ, তাহার স্ত্রী সুফিয়া ও আসামী সিদ্দিক ভাড়াটিয়া খুনীর মাধ্যমে সোহেলকে খুন করে মরদেহ গুম করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক ঘটনার দিন আসামী মাসুদ, তাহার স্ত্রী সুফিয়া ভিকটিম সোহেল রানাকে ঘটনাস্থলে ডাকিয়া আনে এবং আসামী সিদ্দিক বকাউল কর্তৃক ভাড়াটে তিনজন খুনির সহায়তায় ভিকটিম সোহেলকে সিদ্দিক বকাউল ভিকটিমের গামছা দিয়া মুখ বাধে এবং হাত চেপে ধরে। এসময় মাসুদ লোহার রড দিয়ে তার মাথার পিছনে আঘাত করে খুন করে। তার মরদেহ শিয়ালে খেয়ে বিনষ্ট করিয়াছে মর্মে প্রচার পাওয়ার লক্ষ্যে আসামী সুফিয়ার পরিকল্পনা মোতাবেক সকল আসামীরা ভিকটিমের চোখ ব্লেড দিয়ে উপড়ে ফেলে এবং গুম করার উদ্দেশ্যে মামলার ঘটনাস্থলে তথা ভিকটিমের পারিবারিক কবরস্থানের পার্শ্বে ধানি জমিতে ফেলে রাখে।