সাগর আচার্য্য:
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দু’মাস পূর্ণ হয়েছে। এই অল্প সময়ের মধ্যেই পাল্টে গেছে চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরিঘাটের চিত্র তথা হরিণা ফেরিঘাটের পুরো এলাকার চিত্র। একসময় দীর্ঘ লাইনে যানবাহন পারাপারের জন্য সকাল গড়িয়ে বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে দেখা যেত। কিন্তু এখন ঘাটে ফেরি সংখ্যা বাড়লেও কমেছে যানবাহনের সংখ্যা। যানবাহন কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে পদ্মা সেতু ও শরীয়তপুর অংশে সড়কের বেহাল দশার কারণ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। এই রুটে যানবাহন চলাচল কম থাকায় রাজস্ব আদায় নেমেছে অর্ধেকেরও নীচে এবং এর প্রভাব পড়েছে ঘাটের ইজারাদার ও ব্যবসায়ীদের উপর।
গতকাল মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে হরিণা ফেরিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, এই স্থানটিতে আগে যে রমরমা ভাব ছিল, এখন তা পরিণত হয়েছে নীরবতায়। নদী পার হওয়ার জন্য অপেক্ষমান গাড়ির সংখ্যা নেই বললেই চলে। চট্টগ্রামসহ অন্যান্য জেলা থেকে আসা যাত্রীবাহী পরিবহন ও মালবাহী ট্রাক কোন যানজট ছাড়াই ঘাটে এসে উঠে যাচ্ছে ফেরিতে। ঘাটে ফেরি সংখ্যা এখন ৮টি। এরমধ্যে ৩-৪টি প্রতিদিন চলে। রো রো ফেরি চালু হওয়ার পর থেকে এখন আর আগের মত যানবাহন পার্কিং ইয়ার্ডে অপেক্ষা করতে হয় না। পুরো ইয়ার্ডই ফাঁকা এবং সড়কের পাশে তারের প্রাচীর একাধিক স্থানে কেটে চলাচল করছে সাধারণ মানুষ। এক্ষেত্রে অনেকটাই অরক্ষিতভাবে চলছে পার্কিং ইয়ার্ড ব্যবস্থা।
ফেরি কাকলীর মাস্টার মো. আজিজ জানান, গাড়ির সংখ্যা শুধুমাত্র চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরিঘাটেই কম বিষয়টি এমন নয়। পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে বেশ কয়েকটি ঘাটের যানবাহন সংখ্যা কমেছে। এতে কোন সমস্যা নেই। কারণ পদ্মাসেতু চালু হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমেছে। তারা দ্রæত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে যেতে পারছেন। দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলা পদ্মা সেতুর সুবিধা ভোগ করছেন। আমাদের এই ঘাট দিয়ে আর কয় জেলারই বা মানুষ পার হয়।
একই ফেরির লস্কর সেলিম মুন্সি জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর মাওয়া ফেরি ঘাট থেকে এখানে কয়েকটি ফেরি আসলেও যানবাহন কম থাকায় সবগুলো ফেরিকে সার্ভিস দিতে হচ্ছে না। এখানে ভাষা সৈনিক ডা. গোলাম মাওলা নামের রো রো যে ফেরি আছে এই ফেরিতেই অনেক গাড়ি পার হতে পারে।
ফেরিঘাটের ভাড়া আদায়কারী জাহিদ হোসেন জানান, এ বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত প্রতিদিন ফেরিতে পার হওয়া যানবাহন থেকে ভাড়া আদায় হয়েছে প্রায় ৬ থেকে শুরু করে ৮ লাখ টাকা। কিন্তু আগস্ট মাস থেকে সেই ভাড়া অর্ধকেরও নীচে নেমে এখন আদায় হচ্ছে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা।
হরিণা ফেরিঘাটের হোটেল ব্যবসায়ী শামিম বকাউল জানান, হরিণা ঘাটে ব্যবসা পরিচালনা করছি বছর দশেক। এখানে স্বনামধন্য খাবার হলো ইলিশ ভাজা। এই ইলিশ ভাজা খাওয়ার জন্য এখানের প্রতিটি খাবারের হোটেলে যানবাহনের যাত্রী ছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকে পর্যটক ভিড় জমাতো। কিন্তু পদ্মা সেতুর প্রভাবে এখন ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। বন্ধ হয়ে গেছে বেশকিছু দোকান।
কথা হয় ফেরিঘাটের কুলি মুন্না, কুদ্দুস ও শিপন খানের সঙ্গে। তারা জানান, পদ্মা সেতু চালুর আগে প্রতিদিন তাদের প্রত্যেকের আয় ছিল ৭/৮ শত থেকে ১২শ টাকা। এখন সেখানে ৩-৪শ টাকা আয় হয়। এভাবে চলতে থাকলে পেশা বদলের কথাও জানান তারা।