সম্পাদকীয়:
বাংলাদেশে ‘দুর্ঘটনা’য় মৃত্যু অবিরাম এবং অবাধ। প্রশ্ন হলো এসব অকালমৃত্যু কি দুর্ঘটনা নাকি কাঠামোগত হত্যাকান্ড? সড়ক-নৌ-রেল পথে, কর্মস্থলে, আগুনে পুড়ে, রাসায়নিক বিস্ফোরণে নানা ভাবে অসংখ্য মানুষ নিহত ও জখম হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এর প্রতিকারের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা কোনো সরকারের আমলেই দেখা যায় না। প্রতিটি দুর্ঘটনার পর রুটিন অনুসারে এক বা একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেসব তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হয় না। প্রকাশিত হলেও তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন হয় না। আবার তদন্তে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অনেক ক্ষেত্রেই কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয় না। দুর্ঘটনার কারণে বহু ক্ষেত্রে জীবন ও সম্পদহানির জন্য কোনো ক্ষতিপূরণও দিতে হয় না, জবাবদিহিও করতে হয় না। এসবের জন্য মন্ত্রীসহ রাজনৈতিক নেতাদের কোনো দায়দায়িত্ব নেবার প্রক্রিয়াও দেখা যায় না। একইরকম কারণ বিদ্যমান থাকায় একই ধরনের দুর্ঘটনা বারে বারে এবং আরও ভয়ংকরভাবে ঘটতে থাকে। বাংলাদেশের নৌপথে যত দুর্ঘটনা ঘটে তার দুই তৃতীয়াংশই দুটো নৌযানের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে ঘটে। এই বেশিরভাগ সংঘর্ষই ঘটে রাতে বা শীতকালে কুয়াশার মধ্যে যখন দৃষ্টিসীমা থাকে সীমিত। সড়ক বা রেলপথের চেয়ে অপেক্ষাকৃত প্রশস্ত নেভিগেশন চ্যানেলের নদী পথে নৌযানগুলোর পরস্পরের সাথে সংঘর্ষের বিষয়টি এমনিতে খুব অস্বাভাবিক। সুগন্ধা নদীতে জ্বলতে থাকা নৌযানে আগুনের লেলিহান শিখা এই সেক্টরে নতুন প্রেক্ষিত তৈরি করল। স্বাধীনতার পর থেকে একদিকে যেমন নৌপথের দৈর্ঘ্য কমে এসেছে, অপরদিকে তেমনই বেড়েছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সংখ্যা। ঐতিহাসিকভাবে নৌ-পথবহুল একটি দেশে এভাবে ক্রমেই দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সংখ্যা বৃদ্ধি অস্বাভাবিক। স্বাভাবিক হচ্ছে, যত দিন যাবে; দক্ষতা, নজরদারি ও উৎকর্ষ বাড়তে থাকবে এবং ক্রমেই দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কমতে থাকবে। দুর্ভাগ্যবশত সেটা ঘটেনি। বরং নৌ দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ক্ষেত্রে যোগ হলো নতুন মাত্রা। অথচ এসব দুর্ঘটনা কোন পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারেনি এই সেক্টরে। দৈনিক শপথ গতকাল ১৭ জানুয়ারি এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। নৌপথে পানির বিপদের সঙ্গে যোগ হলো আগুনের আপদ। কবি হেলাল হাফিজ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ লিখেছিলেন ভিন্ন প্রেক্ষিতে। অভিযান-১০ অগ্নিকান্ড সেটার নতুন প্রেক্ষিত তৈরি করল।