সম্পাদকীয়
পল্লীস্মৃতি বেগম সুফিয়া কামালের লেখা কবিতায় তুলে ধরেছে মায়ের বকুনি কত মধুর। সেই স্মৃতিকে বুকে ধারণ করার পাঠ্যক্রম মুছে ফেলে জাতিকে নৈতিক অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে বাস্তব জীবনের যেসকল নৈতিক দিকগুলো ছিল সেগুলোকে তথাকথিত মৌলবাদের তকমা লাগিয়ে পাঠ্যক্রম থেকে মুছে ফেলে জাতিকে ধ্বংসের অতল গভীরে তলিয়ে দেয়া হচ্ছে। তারই প্রতিফলন দৃষ্টিগোচর হচ্ছে ১৫ মে দৈনিক শপথ পত্রিকায় প্রকাশ মায়ের বকুনি খেয়ে কিশোরীর আত্মহত্যা। এটা বড় লজ্জার বর্তমান সমসাময়িক পরিস্থিতির উপর পাঠ্যক্রমে গুরুত্ব দিয়ে সোনালী দিনের সোনালি সাহিত্যে যুগের শিক্ষা ব্যবস্থা মুছে ফেলার কুচক্রী পরিকল্পনা জাতিকে বজ্জাতের নি¤œস্তরের নিয়ে যাচ্ছে। জন্মধাত্রীর গর্ভধারণ থেকে শিশুকাল এবং কিশোর বয়স পর্যন্ত পিতা-মাতার গুরুত্ব মানব জীবনকে সবচেয়ে বেশী সুন্দর্য্য করেছে পরিমার্জিত করেছে। এই সময়টা খুবই কঠিন। এসময় নিজেদেরকে চেনা নিজেদেরকে বুঝা নিজেদেরকে সঠিক পথে রাখা দুরূহ ব্যাপার। দুরূহ ব্যাপারটাকে সহজ করে জীবনের ভিত্তি তৈরি করার জন্য যারা রক্ত পানি করে সাজিয়ে তোলে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। তাইতো কবি বলে ‘মায়ের একধার দুধের দাম কাটিয়া গায়ের চাম পাপশ বানাইলেও ঋণের শোধ হবে না’ জীবনমুখী সাহিত্য এবং সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা প্রশাখা রয়েছে। বর্তমান পাঠ্য কারিকুলাম ঘাটলে নৈতিকতা সম্পৃক্ত যে সকল সাহিত্যগুলো ছিল প্রায় ৮৫ শতাংশ সাহিত্য পাঠ্যক্রম থেকে তুলে নিয়েছে। কাদের চক্রান্তে সেই চক্রান্তের ফল বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। এইতো মাত্র একটি একটি কিশোরীর কথা প্রকাশ হলো এমন ঘটনা ঘটে যাচ্ছে হয়তো সকল ঘটনা গণমাধ্যমের কাছে পৌঁছানো হয় না বা পৌঁছাতে দেয়া হয় না। একটি দেশকে নৈতিক বোধ থেকে পিছিয়ে দিতে পারলেই সম্পূর্ণ জাতি দেশকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দেয়া সম্ভব। সেটাই বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার অভ্যন্তরে লুকিয়ে রয়েছে। নৈতিক বোধসম্পন্ন সাহিত্য মুছে ফেলার প্রতিবাদে বিভিন্ন সংগঠন যখন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে তখন তাদেরকে মৌলবাদ আখ্যা দিয়ে কিছু সুজন সমাজ নামে সংগঠন তাদের হীনমন্য মানসিকতার প্রতিস্থাপন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তার ফল জাতি দেশ ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারবে। মায়ের সুচিন্তিত বকুনি গ্রহণ করতে পারলে যেকোনো জীবন পৃথিবীতে সম্মানিত হয়েছে এর নজির অসংখ্য রয়েছে। তাই সুশীল সমাজের সুচিন্তিত মনমানসিকতার ব্যক্তিদের কথা হচ্ছে, পাঠ্যক্রম সব সময় তৈরীর সময় নৈতিক শিক্ষার উপরে গুরুত্ব রেখে বাংলাদেশের শিক্ষা কারিকুলামকে সাজাতে হবে। তবেই সেই সোনালী দিনের সোনালী সমাজ সোনালী শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সোনার মানুষ গর্বে সোনার মানুষ যখন সমাজে অবস্থান করবে তখনই সমাজে এমন অহেতুক ঘটনার জন্ম হবে না। নৈতিক বোধসম্পন্ন শিক্ষা শিশু-কিশোর বয়সের শিক্ষা ব্যবস্থায় সম্পৃক্ত করতে হবে।