নজরুল ইসলাম আতিক :
নির্জিব চাঁদপুরের মানবাধিকার সংগঠনগুলো। শুধুমাত্র নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিভিন্ন স্থানে ঝুলে আছে সাইনবোর্ড। শুধু তাই নয় অনেক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় নেই, নেই কোনো কার্যক্রম। অনেকেই এসব নাম ব্যবহার করছে পদপদবীর আশায়। আবার কোথাও কোথাও মানবাধিকার সংগঠনের নামে পরিচালনা করা হয় দেনদরবার বা শালিশ।
সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশে রয়েছে প্রায় ১৫০ অধিক মানবাধিকার সংস্থা এবং দেশের প্রতিটি জেলায় তাদের কার্যকরী কমিটিও রয়েছে। সেরূপ চাঁদপুরেও রয়েছে বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থার কমিটি। তবে কতটি সংগঠন চাঁদপুরে কার্যক্রম পরিচালনা করছে সুনির্দিষ্টি করে কেউ বলতে পারনি। অথবা জানা যায়নি। বিগত বছর গুলোতে গুটি কয়েক সংগঠন দিবস উদযাপনের অংশগ্রহণ নাম মাত্র কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। কিন্তু কমিটি থাকলেও মানবতার স্বার্থে কাজ করার জন্য যে কেউ নেই। সবারই গাছাড়া ভাব নিয়ে দিব্যি নাম বিক্রি করছেন সংস্থাগুলোর।
নিজের প্রয়োজনে বুক চিতিয়ে সংগঠনের নাম বিক্রি করলেও প্রয়োজন শেষে তাদের আর খোঁজ পাওয়া যায় না। এছাড়া বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থার কার্যক্রম এখন প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু তারপরও তারা মানবতার সেবী বলে বীরদর্পে চলে। ইতোমধ্যে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন এসব সংগঠনগুলোর কার্যক্রম নিয়ে।
বর্তমানে নামে মাত্র মানবাধিকার সংগঠনের কার্যক্রম চালাচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে, আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার কমিশন, ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস্ ক্রাইম রিপোর্টাস ফাউন্ডেশন, জাতীয় পরিবেশ মানবাধিকার সোসাইটি, আইন সহায়তা কেন্দ্র ফাউন্ডেশন, হিউম্যান রাইটস এক্টিভিটিস ফাউন্ডেশন, হিউম্যান রাইটস রিভিউ, বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিল, আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার সংস্থা ইউনিট পর ইউনিভার্স হিউম্যান রাইটস্ অব বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস ক্রাইম রিপোর্টাস, হিউম্যান রাইটস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার অপরাধ দমন সংস্থাসহ নামে বেনামে আরো সংগঠন তো রয়েছেই।
সংস্থাগুলোর ব্যাপারে আলাপকালে সাইফুল ইসলাম, আহমেদ সাব্বির ছাড়াও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন অভিযোগ দিয়ে বলেন, কোথায় ছিল এই মানবতা সংস্থাগুলো ? যখন করোনা ভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করলো তখন তাদের কার্যক্রম কি ছিলো? হতদরিদ্র, অসহায় এবং পথশিশু নিয়ে তাদের কোনো কার্যক্রম তো আমরা দেখিনি। কোন কথাও বলেনি কেউ। দেশের বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকারের বিষয় উঠে আসলেও চাঁদপুরের সংগঠনগুলো ছিলো নিরব ভূমিকায়।
অনেকে বলেন, বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে দুই চারটি সংগঠন তাদের কার্যক্রম চালালেও দুই একদিন পর আবার সবকিছু আগের মতই হয়ে যাবে।
এছাড়া যারা মানবেতর জীবনযাপন করছে তাদের নিয়ে কথা বলেনা বা পাশে এসে দাঁড়ায়না বলে তারা দাবি করেন। কিন্তু মানবতার সেবা অসহায় ও নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোই এবং তাদের কথা তুলে ধরাই তো হলো সংস্থাগুলোর কাজ।
অনেকে আবার ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, মানবাধিকার কর্মীরা পরিচয় ব্যবহার করে থানার দালালি, ভূমি অফিসে তদবির করে, প্রতারণাও করে। খুন, ধর্ষণ, টাকার দেনা-পাওনা, বিভিন্ন অপরাধ কর্মকা-ের মীমাংসা করে দেয়ার নামে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করেন অসহায় গরীব মানুষের কাছ থেকে। এতে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর গঠনের মূল লক্ষ্য বাস্তবিকভাবে কোন কাজে আসছে না?
অপরদিকে বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতি নামে একটি সংগঠন চাঁদপুর জেলা ও উপজেলা এমনকি আরো প্রান্তিক পর্যায়েও কমিটি গঠন করছে। কিন্তু করোনাকালীন সময়ে এ সংগঠনেরও কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি। সংগঠনটির জেলা পর্যায়ের কর্তা এড. জাহাঙ্গীর হোসেন ফরাজীর বলেন, আমরা বিভিন্ন সময়ে কম্বল বিতরণ করেছি। এছাড়াও বিভিন্ন বিভিন্ন কর্মসূচীতেও আমরা অংশগ্রহণ করি।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিল চাঁদপুর শাখার সাবেক আইন সম্পাদক এড. মোঃ মহসীন খান বলেন, মানবতাকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সারাবিশ্বে রয়েছে কয়েক হাজার মানবাধিকার সংগঠন। এসব সংগঠন গুলোর কাজ হচ্ছে মানবতার সেবা করা। হতদরিদ্র অত্যাচারিত নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। কিন্তু এ সংগঠনের দৃশ্যত কোনো কার্যক্রম না থাকায় অনেক আগেই সরে এসেছি। বর্তমানে এ সংগঠনটির কোনো কার্যক্রম চলে কিনা আমার জানা নাই।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিল চাঁদপুর শাখার সভাপতি চাঁদপুর সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ইউসুফ গাজী বলেন, আমি অনেক আগেই সেন্ট্রাল কমিটিকে অবগত করেছি। আমার শারীরিক অসুস্থতার কারণে সংগঠনের কার্যক্রম চালাতে পারছি না। তাদের বলেছি নতুন কমিটি গঠন করার জন্যে। কিন্তু করছে না।
চাঁদপুরের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি আরো যোগ করে বলেন, চাঁদপুরের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কার্যক্রম স্থবির। সেভাবে কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করছে না।