নজরুল ইসলাম আতিক :
‘জাতির পিতার সম্মান রাখবো মোরা অম্লান’- এই শ্লোগানকে সামনে রেখে কুষ্টিয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাংচুরের প্রতিবাদে চাঁদপুরে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এ প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খানের সভাপতিত্বে ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান এর পরিচালনায় প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা পর্যায়ের প্রায় সকল কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান বলেন, জাতির পিতা একজন মহামানব। এই মহামানবের ভাস্কর্য ভাংচুরের প্রতিবাদে আমরা এখানে এসেছি। আমরা সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী যদি সঠিক ভাবে আমাদের দায়িত্ব পালন করি তাহলে আর এই অপশক্তি দাঁড়াতে পারবে না। আমাদের দুর্বলতা থাকলে আমরা তাদের রুখতে পারবো না। তাই ঘুমিয়ে থাকার সময় নেই, এখনই কাজের সময়। তিনি বলেন, প্রতিবাদ মানে আপনার কাজে নেমে যেতে হবে। একজন নাগরিক হিসেবে জাতির পিতার সম্মান রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। প্রতিবাদ শুধু প্রতিবাদ সভাই নয়, কাজও করতে হবে।
প্রতিবাদ সভায় চাঁদপুর জেলা ও দায়রা জজ এস এম জিয়াউল হায়দার বলেন, বিজয়ের মাস আমাদের আনন্দের মাস। কিন্তু এ মাসেই আমরা হারিয়েছিলাম বুদ্ধিজীবীদের। আমরা এমন এক জাতি যারা নিজেদের জাতির পিতাকে হত্যা করেছি। যার জন্য বিদেশের মাটিতেও আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছিলো। ভাস্কর্য ভাংচুর একটি উপলক্ষ্য মাত্র। তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যেই এমন কাজ করছে। কারন তারা জানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আর সেই উন্নয়নের ধারা ব্যহত করতে তারা অপচেষ্টা চালাচ্ছে। শেখ হাসিনার কল্যাণে ইতোমধ্যে পদ্মা সেতু দৃশ্যমান। জাতির পিতার যে স্বপ্ন ছিলো উন্নত বাংলাদেশ গড়ার তা শেখ হাসিনা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করছেন বলে তিনি বলেন।
প্রতিবাদ সভায় পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান পিপিএম(বার) বলেন, ২০ বছরের চাকরি জীবনে আমি কখনো এমন প্রতিবাদ সমাবেশে আসেনি। ডিসেম্বর মাস বিজয়ের মাস। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ১৩ বছর আগে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা আজ ধীরে ধীরে বাস্তবায়িত হচ্ছে। দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে একটি অপশক্তি দেশের অগ্রযাত্রা ব্যহত করার লক্ষ্যে এমন হেয় কাজ করছে। তিনি বলেন, আমরা এখানে যারা এসেছি। সবাই নিজ তাগিদেই এসেছি শেখ মজিবুর রহমানকে ভালবেসেই এখানে এসেছি। তাই আমাদের আরো সতর্ক হয়ে কাজ করতে হবে। সকল অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে।
চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবিব উল করিম বলেন, ভাস্কর্য অতীতেও ছিলো, বর্তমানে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু একটি সক্রিয় চক্র দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য এসব কাজ করছে। আমি তাদের শাস্তি দাবি করছি।
সভায় চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সামছুল ইসলাম বলেন, যার জন্য আজকের এই বাংলাদেশ। সেই জাতির পিতাকে নিয়ে আমরা বিতর্ক করছি। অথচ বিশ্বের অনেক দেশ তাদের জাতির পিতাকে সম্মান জানায়। এ নিয়ে তাদের কোন বিতর্ক নেই কিন্তু শুধুমাত্র আমাদের দেশে জাতির পিতাকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি করছে একটি চক্র। এ কারনে একজন নাগরিক হিসেবে আমি লজ্জিত।
এসময় চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শাহাবুদ্দিন বলেন, বিজয়ের মাসে আমরা জাতির পিতার ভাস্কর্য ভাংচুরের প্রতিবাদ করছি এর চাইতে লজ্জার আর কিছু হতে পারে না। যে মহানায়কের জন্য আজ আমরা স্বাধীন, সেই মহানায়ক এর ভাস্কর্য ভাংচুর করে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে জাতিকে বহুভাগে বিভক্ত করেছে কতিপয় ধর্মীয় নামধারী ব্যক্তি। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি তারাই একদিন বলবে ভাস্কর্য জায়েজ। অনেক হুজুর ধর্মের নামে আগেও বিভক্ত করেছে এখনো করছে। ইসলাম ধর্মে স্পষ্ট ভাবে লেখা আছে জাহান্নামে প্রথমে যাবে হুজুর সমাজ। মুলত যে সব হুজুর ধর্মের নামে বিতর্ক ছড়ায় এবং ধর্মের অপব্যাখ্যা দেয় তারাই হচ্ছে এরা।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতিমা তার বক্তব্যে বলেন, আমি চাকরি করছি দীর্ঘ ১০ বছর। আর এই প্রথম আমি কোন প্রতিবাদ সমাবেশে এসেছি। কিন্তু আমি দুঃখিত আজ জাতির জনকের ভাস্কর্য ভাংচুরের প্রতিবাদেও আমাকে আসতে হয়েছে। তিনি বলেন, যে মহানায়কের কারনে আজ আমরা স্বাধীন। সেই দেশটিই আজ এগিয়ে যাচ্ছে বলে একটা অপশক্তি তা ব্যহত করার চেষ্টায় সক্রিয়। তাদেরকে যে কোন উপায়ে রুখতে হবে বলে তিনি বলেন।
চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম আহসান উল্লাহ বলেন, ভাস্কর্য ভাংচুরের পেছনে কারা দায়ী? তা সবাই জানে। আমরাই তাদের দুধ কলা দিয়ে কাল সাপ পুষেছি।
এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন এনএসআই উপ-পরিচালক শাহ আরমান আহমেদ। এছাড়াও প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মিলন, ৩য় ও ৪ র্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির সভাপতি এস এম মিজানুর রহমান, জেলা আনসার কমান্ডেন্ট ইব্রাহিম খলিলসহ জেলা ও উপজেলার সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ।