আবদুর রাজ্জাক
একটি দেশের টেকসই যোগাযোগ ব্যবস্থা অর্থনৈতিক উন্নতির পূর্ব শর্ত। অথচ এতো দিন দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল নাজুক। সেতু ও ব্রিজের অভাবে যাত্রীরা নানান হয়রানির সম্মুখীন হতো। দক্ষিণ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে সরকার দেশের সর্বদক্ষিণের কুয়াকাটা সমুদ্র এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত র্নিমাণ করছে আধুনিক সড়ক এবং গড়ে তুলছে সড়ক ব্যবস্থা। তাই বরিশাল থেকে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে যেতে থাকছে না ফেরি পারাপারের কোন ঝামেলা। ২০২১ সালের জুন মাসের শেষের দিকে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের লেবুখালী সেতু। পর্যটকসহ দেশের মানুষের কাছে আকর্ষণীয় করতে পটুয়াখালী ও বরিশাল জেলার মধ্যবর্তী পায়রা নদীর ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। নান্দনিক নকশায় র্নিমাণ করা এ সেতুটি আগামী জুন মাসের শেষের দিকে উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা রয়েছে। লেবুখালী সেতু উন্মুক্তর মধ্য দিয়ে দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আরও এক নতুন দ্বার খুলে যাবে। এক সময়ে রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক পথে বরিশাল এসে কুয়াকাটা যেতে সাতটি ফেরি পারাপার হতে হতো। নানান ভোগান্তি, অপেক্ষা, হয়রানি পর্যটকদের সাগরকন্যার রূপ দর্শন ছিল স্বপ্নের মতো। শিকারপুর, দোয়ারিকা, পটুয়াখালী, দপদপিয়া, কলাপাড়া,মহিপুর এবং আলীপুর নদীগুলোর ওপর সেতু র্নিমিত হলেও পায়রা নদীর ফেরিঘাট দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের জন্য ছিল বিষফোঁড়ার মতো। কারণ যানবাহনের চাপে ফেরি পারাপার ব্যাহত। দিনের অর্ধেক সময়ই কেটে যেতো লেবুখালীর ফেরি পারাপারে। দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে পায়রানদীর সেতু র্নিমাণ করার লক্ষ্যে সরকার ২০১২ সালে একটি প্রকল্প প্রণয়ন করে। ৮ মে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালে ১৯ মার্চ পায়রা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। সড়ক ও জনপথ মন্ত্রণালয় ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই চীনের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান লংজিয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ কোম্পানি লিমিডেটকে সেতু র্নিমাণের কার্যাদেশ প্রদান করে। প্রকল্পটিতে যৌথভাবে অর্থায়ন করে কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট (কেএফএইডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেপলেপমেন্ট(ওএফআইডি)।
সেতুটির কার্যাদেশ প্রদানের সময় এর প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। সময়ের সাথে সাথে এ সেতুর ব্যয় বাড়তে থাকে। এখন এর ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। র্নিমাণ কাজের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ৩৩ মাস তা দুই দফায় বাড়িয়ে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। পায়রা সেতু প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ৮৪০ মিটার ভায়াডাক্ট এবং ৬৩০ মিটার মূল সেতুসহ পায়রা সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৪৭০ মিটার এবং প্রস্থ ১৯.৩৬ মিটার। নদীর উত্তর প্রান্তে ৬১০ মিটার এবং দক্ষিণ প্রান্তে ৬৫৮ মিটারসহ দুইপাশে মোট অ্যাপ্রোচ সড়ক ১ হাজার ২৬৮ মিটার। এখন পর্যন্ত পায়রা প্রকল্পের ৬৬ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে মূল সেতুর ৭৮ ভাগ, অ্যাপ্রোচ সড়ক ৪৫ ভাগ। ১৮,১৯,২০ নং এ তিনটি পিলারে পাইলন টাওয়ার থেকে ৬ টি করে ক্যাবলে ঝুলে থাকবে মূল বক্রগার্ডার সেতু। ৩১ টি পিলার ওপর ৩২ টি স্প্যানের ওপর দাঁড়িয়ে থাকবে পায়রা সেতু। ডায়াটাক্টে আই গার্ডারের ওপর ২৮টি স্প্যান এবং মূল সেতুর ৪টি স্প্যান হচ্ছে বক্্রগার্ডার টাইপের। মূল সেতুর পথম স্প্যান ১১৫ মিটার দ্বিতীয় ২০০ মিটার তৃতীয় স্প্যান ২০০ মিটার এবং চতুর্থ স্প্যান ১১৫ মিটার পর্যন্ত দীর্ঘ। মূূল তিনটি পিলার ১৮,১৯ এবং ২০ স্থাপন করা হয়েছে। ভাটির সময় পানির স্তর ১৩০ মিটার দৈর্ঘ্য(েযা ৪২ তলা ভলা ভবনের সমান) নদীর তলদেশে। এ সেতুতে বসানো হয়েছে ১২০ মিটারে পাইল। পায়রা সেতুতে সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে রাতের নৈসর্গিক দৃশ্য পর্যটক ও সাধরণ মানুষের জন্য উপভোগ্য করে তোলা হবে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর বরিশাল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু হেনা মো. তারেক ইকবাল সাংবাদিকদের জানিয়েছে, আগামী জুনের শেষভাগে যানবাহন চলাচলের জন্য পায়রা সেতু উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। তবে সর্বসাধারণের মতে এ সেতু চালু হলে বরিশাল থেকে কুয়াকাটা সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটা বৈল্পবিক উন্নতি ঘটবে।- স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক শপথ।