মনিরুল ইসলাম মিলন:

টেলিভিশনে ব্রেকিং নিউজ দেখাচ্ছে “করোনার সংক্রমণ রোধে করণীয় ঠিক করতে আগামীকাল মঙ্গলবার দুপুরে বৈঠকে বসছে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি।” এ সংবাদটি যখন টিভিতে দেখছি ঠিক তখনই আম্মা এবং ছোটবোন জানালো আমাদের বাসার দুই বাসা পরে কোভিডে কিছুক্ষণ আগে এক বাবা ও গতরাতে তার পুত্র মারা গেছেন। পাশের আরেক বাসায় মারা গেছেন একজন। বাসার পাশে মসজিদের মাইক থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আযান ছাড়াও প্রতিদিন ৫/৭ জনের মৃত্যু সংবাদ শুনতে হচ্ছে।
যাই হোক, টিভির ব্রেকিং নিউজটি দেখে একা একা কিছুক্ষণ গালাগালি করলাম। গালাগালির কারণটা হচ্ছে করোনা নিয়ে আমাদের যখন যা জরুরী ভিত্তিতে করা দরকার ছিলো আমরা বরাবরই তার উল্টাটা করেছি। আমাদের যখন দরকার ছিল ১৪ কিংবা ২১ দিনের কারফিউ টাইপ লকডাউন সেখানে আমরা মাসের পর মাস এক ফাজলামো টাইপের আমলাতান্ত্রিক আমোদপ্রমোদের লকডাউন করছি যাতে করোনার সংক্রমণ যেমন বাড়ছে তেমনি মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলছি।
ইচ্ছায় হোক কিংবা অনিচ্ছায় হোক ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এদেশের প্রত্যেক বর্গমাইলে আমরা অলরেডী করোনার সামাজিক সংক্রমণের বাম্পার চাষাবাদ করে ফেলেছি। সারাদেশে করোনা এখন সর্বগ্রাসী। করোনা শনাক্ত এবং মৃতের সরকারী হিসাবের বহুগুন বেশী মানুষ মারা যাচ্ছে শনাক্তহীন অবস্থায়, যাকে নাম দেওয়া হয়েছে উপসর্গ। সারা পৃথিবী করোনা নিয়ন্ত্রণ করছে অধিকাংশ জনগোষ্ঠীকে ভ্যাকসিনের আওতায় এনে। আমাদের দেশে যেহেতু আশার বানী ছাড়া বাস্তবে ভ্যাকসিনের তেমন কোন যোগান নেই তাই কিছু খয়রাতি ভ্যাকসিন দিয়ে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংক্রমিত করোনা এখন আর নিয়ন্ত্রণের সুযোগ নেই।
নীতিনির্ধারকদের এখন বৈঠকে বসা দরকার কিভাবে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা বৃদ্ধি করা যায় তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য। এখন খুব দরকার দেশের স্টেডিয়াম বা সুবিধাজনক স্থানগুলোতে অস্থায়ী ফিল্ড হাসপাতাল তৈরী করা। জরুরীভাবে দরকার পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেয়া। দরকার অক্সিজেন, ন্যাজাল ক্যানোলা ও ভেন্টিলেটর সরবরাহ করা, এবং পর্যাপ্ত ঔষধ সরবরাহ করা। বর্তমানে দেশের কোথাও কোভিড রোগীদের ভর্তির জন্য বেড খালি নেই, একজন রোগী মারা যাওয়া পর্যন্ত একটা আইসিইউ বেড এর জন্য অপেক্ষা করছে শত শত মূমুর্ষ কোভিড রোগী। বেডের অভাবে অনেক হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে ফ্লোরে, বারান্দায়। ভর্তি করতে না পেরে অনেক রোগীকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে বাসায়/বাড়ীতে। বিশ্বাস না হয় ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ দেশের যে কোন কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের সামনে গিয়ে একঘন্টা অপেক্ষা করে দেখে আসুন ভর্তি হতে না পারা শতশত রোগী এবং স্বজনদের আকুতি, আহাজারি। নিজ চোখে দেখে আসুন হাসপাতালগুলোর সামনে কত কত এম্বুলেন্স গুরুতর কোভিড রোগী নিয়ে অপেক্ষা করছে আর প্রতি ঘন্টায় কতটি এম্বুলেন্স কোভিডে মৃত মানুষদের লাশ বহন করে হাসপাতাল থেকে বের হচ্ছে।
সুতরাং আমার মতে সরকারের উচিৎ এসব আমলাতান্ত্রিক ভংচং সিদ্ধান্ত বাদ দিয়ে কোভিড রোগীদের চিকিৎসাসেবা বৃদ্ধির জন্য জেলায়/উপজেলায় অতি দ্রুত অস্থায়ী ফিল্ড হাসপাতাল, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও পর্যাপ্ত লোকবল নিয়োগ দেওয়া।