নজরুল ইসলাম আতিক/ বিল্লাল ঢালী:
দিন যায় কথা থাকে। দিনের হিসেবে শপথ দুই বছর পেরিয়ে আজ তৃতীয় বর্ষে। শপথের এই পথ চলায় দিন পেরিয়ে গেলেও কিছু কথা থেকে যায়। চাঁদপুরে সংবাদপত্র জগতে ১৮তম দৈনিক সংবাদপত্র হিসেবে শপথের আত্মপ্রকাশ। এতগুলো সংবাদপত্র থাকার পরও শপথ মানুষের মনি কোঠায় স্থান করে নিয়েছে। প্রথম সন্তান পরিবারের সকলের প্রিয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে সে প্রথমেই বুঝতে শিখে। তারপর পরিবারকে আরো শক্ত অবস্থানে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। এখন প্রশ্ন থেকে যায় সর্বকনিষ্ঠ সংবাদপত্র হয়ে শপথ কিভাবে এখন মানুষের মনিকোঠায়? তাহলে ফিরে যেতে হবে দুই বছর পূর্বে। প্রথমেই যাকে স্মরণ করতে হয় তিনি হলেন শপথের সম্পাদক ও প্রকাশক কাদের পলাশ। যার স্বপ্নের ফসল আজকের দৈনিক শপথ। স্বপ্ন এবং ব্যবসা এক কথা নয়। অনেকে হয়তো বাণিজ্যিক চিন্তা করে। এজন্য লাভ-ক্ষতির হিসাব আসে। এক সময় ঝরে পড়ে প্রতিষ্ঠান। আর যিনি স্বপ্ন দেখে তা বাস্তবে রূপ দেন। তিনি বাণিজ্যিক নন। বাণিজ্যিক চিন্তা না থাকায় প্রতিষ্ঠান চালিয়ে যান নিজের মত করে। প্রতিষ্ঠান স্বপ্ন দেখলেই স্বপ্ন সফল হয় না। সফল হতে প্রয়োজন নেতৃত্বে থাকাদের কিছু গুণাবলী। আর যেসব গুণাবলী প্রয়োজন তার সবটুকুই আছে শপথের সম্পাদক ও প্রকাশকের। তিনি একাধারে সাহিত্যিক মানুষ। ইতিমধ্যে তার কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। তাছাড়া তিনি একজন পেশাদার সাংবাদিক। জেলায় এখন যে কজন সাংবাদিক সুনামের সাথে সাংবাদিকতা করছেন তাদের মধ্যে অন্যতম। যিনি সাংবাদিকতা পেশায় জেলার অন্যতম তার সম্পাদনা ও হতে হবে একটু ভিন্ন। বুঝতে হবে পাঠক চাহিদা। তিনি তাই করেছেন। মিটিয়ে যাচ্ছেন পাঠকের চাহিদা। কথায় আছে তরুণ তুর্কি আগামীর ভবিষ্যৎ। তিনি এক ঝাঁক তরুণ মেধাবী সাংবাদিক নিয়ে যুদ্ধে সফল। সম্পাদক ও প্রকাশক অভিজ্ঞতা দিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তরুণদের কাজ করতে দিয়েছেন স্বাধীনভাবে। তাই আজ শপথ মানুষের মনিকোঠায়।
২০১৯ সালের এই দিনে সাপ্তাহিক শপথ নামে পত্রিকাটির যাত্রা শুরু হয়। ইতিমধ্যে পত্রিকাটি বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে পাঠকদের মন জয় করেছে। পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে চাঁদপুরের পাঠকপ্রিয় পত্রিকায় পরিণত হয়েছে।
সাপ্তাহিক শপথ হিসেবে পথ চলাকালিন সময়ে জনদুর্ভোগসহ বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি এবং অসহায় মানুষের কথা তুলে ধরে পত্রিকাটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তারই প্রেক্ষিতে এবং পাঠকের চাহিদা পূরণে পত্রিকাটি দৈনিকে রূপান্তরিত করার জন্য পাঠকদের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়। তাদের দাবি পূরণে পত্রিকাটি সাপ্তাহিক শপথ থেকে দৈনিকে পথ চলা শুরু করে।
এবার আসা যাক পাঠক চাহিদা মেটাতে কি করেছে শপথ। পাঠকের কথা মাথায় রেখে শপথ কাজ করেছে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে, অসহায় হতদরিদ্র সাধারণ মানুষের কথা তুলে ধরতে, মধ্যবিত্ত নিম্নমধ্যবিত্ত সকলের অপ্রকাশিত সুখ দুঃখের কথা তুলে ধরা, অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলেছে শপথ, জনদুর্ভোগ সংবাদ প্রচারে শপথ ছিল সামনের সারিতে।
ডিক্লারেশন পাওয়ার পর থেকে দৈনিক শপথ বস্তুনিষ্ঠ ও অসহায় মানুষের কথা সব সময় তুলে ধরার চেষ্টা করে প্রথম থেকেই এই ধারাবাহিকতা এখন পর্যন্ত ধরে রেখেছে পত্রিকাটি। দৈনিক শপথ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক কাদের পলাশের নির্দেশনায় প্রতিনিধিগণ নিয়মিতই সমাজের অসহায় হতদরিদ্র মানুষের দুঃখ-দুর্দশা তুলে ধরার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। তারই প্রেক্ষিতে দৈনিক শপথে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে জেলার বেশ কয়েকজন অসহায় মানুষ পেয়েছেন মানবিক সহায়তা। সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি ও চাঁদপুর জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।
দৈনিক পত্রিকায় ১৫ জানুয়ারি শুক্রবার একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। যার শিরোনাম ‘এখনো কম্বল পায়নি চাঁদপুরের বেদেরা’। প্রতিবেদনটি চাঁদপুর জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের নজরে আসার সাথে সাথেই অসহায় বেদে পল্লীর প্রায় ২শ পরিবারের মাঝে দ্রুত কম্বল বিতরণের নির্দেশনা প্রদান করেন তিনি। পরে ১৬ জানুয়ারি বিকেলে তিনি নিজে সশরীরে উপস্থিত থেকে বেদে পল্লীর ২০০ পরিবারের মাঝে শীতবস্ত্র কম্বল বিতরণ করেন। যার ফলোআপ প্রতিবেদরও দৈনিক শপথ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ‘অবশেষে কম্বল পেল বেদে পল্লীর মানুষ’ শিরোনামে।
এছাড়াও ২২ মার্চ দৈনিক শপথ পত্রিকায় চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার অসহায় হতদরিদ্র বৃদ্ধা বিবি আয়েশা বেগমকে নিয়ে ‘৫০০ টাকায় মাটি করে ভাঙ্গা ঘরে আশ্রয় আয়েশার’ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদনটি ও নজরে আসে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের। এবং তিনি সাথেসাথেই পত্রিকার সংশ্লিষ্টদের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন দ্রুত বিবি আয়েশাকে নিয়ে জেলা প্রশাসকের নিজ কার্যালয়ে তার সাথে দেখা করতে। পরে দৈনিক শপথের প্রতিনিধি বিবি আয়েশাকে নিয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে সাক্ষাত করলে তিনি অসহায় মানুষটির ঘর নির্মাণ ব্যবস্থাসহ আর্থিক অনুদান প্রদান করেন। এছাড়াও ৬ জুন দৈনিক পত্রিকায় হাইমচর উপজেলার নদী তীরবর্তী বাসিন্দা ও একটি তাবুতে বসবাসকারী আছিয়া বেগমকে নিয়ে ‘মেঘনার তীরে তাঁবুতে ১৫ বছর’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। তারপরের দিনই তাকে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয় আর্থিক সহায়তা ও ঘর নির্মাণের জন্য ব্যবস্থা করেন জেলা প্রশাসক অঞ্জন খান মজলিশ। ‘আছিয়া পেলেন প্রশাসনের সহায়তা’ শিরোনামে যার ফলোআপ একটি নিউজ প্রকাশিত হয় দৈনিক শপথ পত্রিকায়।
এছাড়াও আরও বেশ কিছু সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে দৈনিক শপথ পাঠকদের মন জয় করে নেয় এবং নির্ভরযোগ্য গণমাধ্যম হিসেবে পাঠকের মনে স্থান পায়। অসহায় হতদরিদ্র মানুষের কথা তুলে ধরে তাদের পথ চলা মসৃণ করতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে দৈনিক শপথ। যার ধারাবাহিকতা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।
দৈনিক শপথ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক কাদের পলাশ তার অভিব্যক্তি প্রকাশ বলেন, জন্ম লগ্ন থেকেই দৈনিক শপথ মানুষের কথা বলে আসছে। শুরুর পর থেকে গত দুই বছর দৈনিক শপথ পত্রিকাটির পথ চলা মসৃণ ছিল না। শত বাধা বিপত্তি ও করোনার ভয়াবহতায় যেখানে সারা বিশ্ব স্থবির হয়ে পড়েছিল সেখানে দৈনিক শপথ অসহায় হতদরিদ্র মানুষের কথা তুলে ধরে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে।