নজরুল ইসলাম আতিক:
ট্রাক রোড রেলক্রসিংয়ের সামনে ছোটখাটো বাজার বসে। ছোট ছোট হকার ব্যবসায়ী এখানে নানান রকমের সবজি মাছ বিক্রি করে। বিকেল তিনটা থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাজারে চলে বেচাকেনা। এখন করোনাকাল। তাই সরকারি নির্দেশ মোতাবেক সন্ধ্যা হতেই সবাই বাসায় ফিরে যাবার কথা। তখন রাত সাড়ে আটটা। বাজারে হঠাৎ চোখে পড়ল একজন নারী ও একজন পুরুষ সামান্য কিছু সবজি নিয়ে পাশাপাশি বসে আছেন।
শ্যামলী বিশ্বাস তার স্বামী সুকুমার বিশ্বাস। দুজন মিলে কয়েকদিন যাবত রাস্তার পাশে সবজি বিক্রি করছেন। শ্যামলী বিশ্বাস চাঁদপুর শহরের মেয়ে। বাবার বাড়ি পালপাড়া। পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় সুকুমার বিশ্বাসের সাথে। মুন্সিগঞ্জ জেলার দিঘীরপাড় এলাকাতে সুকুমার বিশ্বাস এর পৈত্রিক বাড়ি। সেখানেই কামার ব্যবসা করতেন তিনি।
বিয়ের পর শ্যামলি বিশ্বাস এবং সুকুমার বিশ্বাসের সংসার ভালোই চলছিলো। ব্যবসায় ছিল কয়েক লক্ষ টাকা পুঁজি। কথায় বলে বিপদ যখন আসে চারপাশ থেকে আসে। সুকুমার বিশ্বাসের ক্ষেত্রেও হয়েছে তাই। লোহার কাজ করতে গিয়ে পাঁচ ছয় কেজি ওজনের একটি লোহা ছিটকে পড়ল পায়ে। ভেঙে গেল পা। সাথে ভেঙে গেল আগামীর জীবন। কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে চিকিৎসা নিয়েছেন হাসপাতালে। কিন্তু পা আর ভালো হলো না। ডাক্তার নিষেধ করেছে লোহার কাজ আর করা যাবে না। তাই বাধ্য হয়েই ছাড়তে হলো ব্যবসা। হাসপাতালে থাকাকালীন সময়ে পৈত্রিক ভিটি-মাটি যেটুকু ছিল বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। এছাড়া নদীর ভায়াল গ্রাসে বিলীন হয়েছে সব। সর্বস্বান্ত হয়ে গেলেন সুকুমার বিশ্বাস।
স্বামীর এই দুঃসময়ে একমাত্র সঙ্গী শ্যামলী বিশ্বাস। কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে স্বামীকে নিয়ে চলে এলেন নিজ শহরে। ট্রাক রোডে জিতুর দোকানের সামনে বাসা ভাড়া নিয়ে শুরু করেন বসবাস। কপালে চিন্তার ভাঁজ। জীবন চালাতে টাকা তো লাগবে। তাই কিছু না কিছু তো করতে হবে। সামান্য টাকা পুঁজি ছিল তাই দিয়ে শুরু করলেন চটপটি ব্যবসা। আল আমিন স্কুলের সামনে ব্যবসা করতেন তিনি। পায়ের সমস্যা, ঠিক মতো হাঁটতে পারেন না। তাই শ্যামলী বিশ্বাসকেই স্বামীর পাশে হাত ধরে চলতে হয় সারাক্ষণ।
শ্যামলী বিশ্বাস বলেন, দেশে কি করোনা আইলো? আমার মত মরা মানুষের উপরে খরার গা হইল। আল আমিন স্কুলের সামনে ফুচকার দোকান দিয়া দুইজনে সংসার চালাইতাম কোনমতে চলছিল সংসার এখনই স্কুলে বন্ধ ব্যবসা বন্ধ দুই মাসের মত ঘরে বইসা খাইতাছি এলাকা থেইকা কিছু সাহায্য পাইছি তাই দিয়ে কোন মতে চলছি কিন্তু আর পারতেছি না। তাই কয়েকদিন যাবৎ রেললাইনের পাশে জামাইরে বসাই সবজি লইয়া। তিনটা বাজে দিয়া যাই আমি রাইতে আইসা লইয়া যাই। যে কয় টিয়া বেচাকেনা হয় তাতে চলতে হয়। আমরা জামাই-বউ শুধু দুইজন। পোলাপান নাই। একটা সন্তান যাও হইছিল দুই দিন পর মইরা গেল।
তিনি আরো বলেন এই করোনা কইমা যাইতো যদি আমরা সবাই একটু সচেতন হইতাম। সবাই সচেতন হইলে আইজ আমাগো এমনে দিন কাটাইতে হইতো না। সবাই আগের মত চলতে পারতাম। এখন অনেক দেরী হইয়া গেছে। তারপরও যতটুকু সংশোধন হওয়া যায়। আমাগো তা মাইনা চলতে হইবো।