বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দীর্ঘদিন দেশের স্কুল কলেজ বন্ধ রাখা হয়েছে। কবে যে লকডাউন মুক্ত বাংলাদেশ হবে। এ চিন্তায় ভেঙে পড়ছে সাধারণ মানুষ। জীবনযাত্রায় নেমে এসেছে দুর্ভোগ। তেমনি দিন দিন বাড়ছে শিক্ষার্থীদের অনিশ্চিত ভবিষ্যত। এতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া যেমন ব্যাহত হচ্ছে তেমনি দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আগ্রহ হারাচ্ছে তারা। তার মাঝেও কিছু শিক্ষার্থী তাদের ভবিষ্যত নিয়ে বিভর চিন্তায় বাড়িতে এবং অনলাইন নির্ভর শিক্ষা কার্যক্রমের আওত্তায় দিন কাটাচ্ছে তারা। ইতিমধ্যে প্রানঘাতী করোনা কেড়ে নিয়েছে শিক্ষার্থীদের মহামূল্যবান একটি বছর। আর শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত পড়েছে অনিশ্চিয়তার মুখে। তেমনই একজন শিক্ষার্থী তার ব্যক্তিগত চিন্তাধারা জানিয়েছেন দৈনিক শপথের স্টাফ রিপোর্টার রিয়াজ শাওনের কাছে।
ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির টেক্সটাইল ইঞ্চিনিয়ার বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান। প্রতিভাবান শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত মতামত হুবহু তুলে ধরা হল।
দৈনিক শপথ: মহামারি করোনার এই দূর্যোগকালীন বন্ধে পড়াশোনা কেমন চলছে?
নুসরাত জাহান: এই মহামারিতে পড়াশোনা সবকিছুই অনলাইনে চলছে। এটা একদিকে ভাল আবার খারাপও বলা চলে।
দৈনিক শপথ: দীর্ঘ সময় ধরে কলেজ বন্ধ। এই বন্ধ সময়ে বাসায় পড়াশোনা কিভাবে করা হয়?
নুসরাত জাহান: অনলাইন ক্লাসে শিক্ষকদের সহায়তার মাধ্যমে পুরোপুরিভাবে জ্ঞান অর্জন করতে না পারলেও কিছুটা জ্ঞান আর নিজের আগ্রহের মাধ্যমে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
দৈনিক শপথ: বাসায় পড়াশোনা করার জন্য কলেজ থেকে কোন গাইডলাইন দেয়া হয় কি না?
নুসরাত জাহান: ক্যাম্পাসে থেকে তেমন কোন গাইড লাইন দেয়া হয়না তা বললেও ভুল হবে। আমাদের শিক্ষক নিজেদের মত করে পড়াচ্ছেন। যতটুকু সম্ভব আমরা তা আয়ত্ত করার চেষ্টা করছি। তবে আগে যেমন ক্লাসে একটা কিছু না বুঝলে স্যারদের পুনরায় জিজ্ঞাস করে বুঝে নিতাম কিন্তুঅনলাইন ক্লাস তেমন কোন সুযোগ দেয়া হয় না।
দৈনিক শপথ: বাসায় পড়াশোনা ছাড়া অন্য কি করে সময় কাটে?
নুসরাত জাহান: বাসায় পড়াশোনা ছাড়াও গল্পের বই, উপন্যাস, লেখালেখি এবং ছবি আঁকার মাধ্যমে সময় পার হচ্ছে।সাথে নিজেকে বিভিন্ন কাজে পারদর্শী করতে চেষ্টা করছি।
দৈনিক শপথ: সাধারণত এত দীর্ঘ সময় ধরে কলেজ বন্ধের সাথে তোমরা পরিচিত না। সেই ক্ষেত্রে এতদিন কলেজের ক্লাস থেকে দূরে থাকায় পড়াশোনা প্রতি কোন অনিহা কাজ করছে কি না?
নুসরাত জাহান: পড়াশোনার অনিহা আশাটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কারণবাসায় পড়া আর শ্রেণিকক্ষে গিয়ে পাঠদান করা এক না। মাঝেমধ্যে একঘেয়ামি কাজ করে আর মানসিক ক্ষতিও হচ্ছে।
দৈনিক শপথ: করোনার পর্রবতী কালে পড়াশোনায় কেমন প্রভাব ফেলবে বলে তুমি মনে করো?
নুসরাত জাহান: আমরা এখন প্রায় সবাই অনলাইন ক্লাসে অভ্যস্ত। পরবর্তীতে আমরা এতে আরোও বেশি অভ্যস্ত হলে গেলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলার পরেও আর মনমানসিকতা ঠিক হবে না। এতে করে ঝড়ে পড়বে অনেক শিক্ষার্থী। বর্তমানে এই সময়েই অনেকে ছেড়ে দিয়েছে পড়াশোনার আসা। এ পরিস্থিতি দেখে বুঝা যায় যে, পরবর্তী সময়ে কেমন প্রভাব ফেলবে।
দৈনিক শপথ: কলেজ,শিক্ষক কিংবা বন্ধু-বান্ধবী কাকে বেশি মিস করো?
নুসরাত জাহান: সহপাঠীদের সবার আগে মিস করি। সাথে যে সব শিক্ষক এই প্রতিকূলের সাথে টিকতে না পেরে নিজেদের আড়াল করে রেখেছে।
দৈনিক শপথ: আচ্ছা এত লম্বা সময় ধরে কলেজ বন্ধ থাকায় তুমি কতটা খুশি?
নুসরাত জাহান: আমি মোটেও খুশি না। এটা ঠিক যে পরিবারের সাথে আছি। কিন্তু একঘেয়েমিও মনে হয়। মানসিক অশান্তি সৃষ্টি হয়। যা আমাদের ধ্বংস করছে। অনেকেই কষ্টে আছে। তাই তাদের দুঃসময়ে নিজেকে কখনোই খুশি রাখা যায় না।
দৈনিক শপথ: করোনা পর্রবতীকালে তোমার ভাবনা কি?
নুসরাত জাহান: করোনা পরর্বতীকালে নিজেকে আরোও সচেতন হতে হবে। কারণ এই রোগের সাথে আরোও অনেক জটিল রোগ থেকে রক্ষা করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। আর করোনায় থেমে থাকা কাজগুলো নতুন করে করার প্রস্তুতি নিতে হবে।
দৈনিক শপথ: একজন শিক্ষার্থী কিভাবে করোনা কালে মানসিক এবং শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে পারে বলে তুমি মনে করো?
নুসরাত জাহান: এই করোনায় সময় বেশির ভাগ শিক্ষার্থী মানসিক সমস্যায় ভুগছে। এর মূল কারণ বন্দীত্ব, একাকিত্ব। এর জন্য নিজেকে সময় দেয়াটা বেশি জরুরি। আর নিজের মন বিকাশ করাটাও। শারীরিক সুস্থ রাখার জন্য শারীরিক চর্চা হালকা পাতলা করা যায়। নিজেকে সব সময় পরিপাটি রাখতে হবে।
দৈনিক শপথ: একজন মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে অন্য শিক্ষার্থীদেকে সঠিকভাবে পড়াশোনা চালিয়ে নিতে তুমি কি পর্রামশ দিতে চাও?
নুসরাত জাহান: শুধুমাত্র স্কুল, কলেজ বা অনলাইনের উপর ডিপেন্ড না করে নিজের থেকে পড়াশোনা করাটা জরুরি। নির্দিষ্ট রুটিন মেনে পড়া না হলেও সঠিক কিছু সময় পড়াশোনার পিছনে ব্যয় করতে হবে। যে সব পড়া কঠিন মনে হবে সেগুলোর সহজ সমাধান খুজে নিজেকেই চেষ্টা করতে হবে। অনলাইন হোক বা অফলাইনে নিজেকে সবসময় ক্লাস এক্টিভ ও মনোযোগী রাখতে হবে।
দৈনিক শপথআপনার সফলতা কামনা করে। আপনাকে ধন্যবাদ।
নুসরাত জাহান: দৈনিক শপথ পরিবারে জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো।
রিয়াজ শাওন