ফাহাদ খাঁন:
২০০৫ সালে ফরিদগঞ্জের বড়ালী গ্রামের বোরহান উদ্দিন টেলুর বড় ছেলে রুবেলকে অজ্ঞাত কে বা কারা জবাই করে হত্যার পর খালের পাশে ফেলে রেখেছিলো। ক্যালেন্ডারের পাতায় ১৬টি বছর চলে গেলেও আজও রুবেল হত্যার বিচার পায়নি তার পরিবার।
২০০৫ সালে ফরিদগঞ্জ এআর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী রুবেল পড়াশোনার পাশাপাশি চাচার দোকানে থাকতেন। সে বছর পরীক্ষার জন্য এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনও সম্পন্ন করেছিলো রুবেল। স্বপ্ন ছিলো পরীক্ষা দিয়ে ভালো রেজাল্ট করবে। বাবা-মায়ের দুঃখ দূর করবে কিন্তু তা আর হতে দিলো না ঘাতকরা। বৃষ্টির দিনে বাড়ির পাশের খাল পাড়ে জবাই করা হয় তাকে।
খুনের রাতে কাকার দোকান থেকে বাড়ির পথে রওনা দিলেও জীবিত অবস্থায় বাড়ি ফিরতে পারিনি রুবেল। পরদিন গ্রামের শ্রমিকরা মাটি কাটা জন্য বাড়ির পার্শ্ববর্তী খাল পাড়ে গেলে রুবেলের মরদেহ দেখতে পায়। চিৎকার করে মানুষ জড়ো হয় বিলের মধ্যখানের সরু খালে। মরদেহ দেখে বেহুশ হয়েছিলেন বাবা বোরহান উদ্দীন টেলু। জ্ঞান হারান রুবেলের মা। তৎকালীন সময়ের ৭ বছরের ছোট ভাই জাহিদুল ইসলাম রাসেল আর বড় দুই বোনের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছিলো বড়ালী গ্রামের বাতাস। স্থানীয় প্রশাসন, ওয়ার্ড মেম্বার ও তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান আশ্বস্ত করেছিলেন ন্যায্য বিচার পাওয়ার। রুবেলের স্কুলের ছাত্ররা বিক্ষোভ মিছিল করে চেয়েছিলো রুবেল হত্যার বিচার। সময়ের ব্যবধানে ফিকেহ হয়ে গেছে সবই। কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শুকিয়ে ফেলেছেন বাবা বোরহান উদ্দীন টেলু। আজও বিচারের আশায় তাকিয়ে আছে আদালতের দিকে।
রুবেলের বাবার দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী শান্তশিষ্ট ছেলে রুবেল গ্রামের কারো সাথেই বাকবিতন্ডায় জড়াতে দেখেননি কখনো। পারিবারিক কিংবা সম্পত্তিগত শত্রæতাও ছিলো না কারো সাথে। তবে বাবার মনে সন্দেহের বাসা বুনছে একটি অযাচিত ঘটনা। তা হলো, রুবেলে নিজ খালার কোন ছেলে মেয়ে না থাকায় তখন তিনি এক মেয়েকে দত্তক আনেন এবং পরবর্তী সময় ওই খালার কোন সন্তান না থাকায় গোত্রের বিলুপ্ত থেকে রক্ষায় দত্তক আনা সেই খালার মেয়ের সাথের বিয়ে হওয়ার বিষয়ে পারিবারিক ভাবে কথা হয়েছিলো। তার বছর দুয়েক পরই এমন নৃশংস হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়েছিলো। বাবার ধারণা যেহেতু তখন অন্য কোন বিষয় ছিলো না তাই খালার মেয়ের সাথে বিয়ের বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই হয়ত ছেলেকে এমন নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিলো।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রুবেলকে হত্যা করার পর তৎকালীন সময় ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করলেও সেই মামলাটি গত ১৬ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি। সন্তানহারা বাবা-মা বিচারের আশায় দিনের পর দিন থানা পুলিশের দ্বারস্থ হলে সন্দেহ ভাজন ২ জনকে আটক করেছিলো পুলিশ। মাস দুয়েক হাজতে থাকার পর তাদেরও ছেড়ে দেওয়া হয়।
রুবেল হত্যাকাÐের বিচার গত ১৬ বছরেও কেন হয়নি, বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার কারণ কি হতে পারে? এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শহীদ হোসেন দৈনিক শপথকে বলেন, ২০০৫ সালে আমি চাঁদপুরই ছিলাম না। তাই এ বিষয়ে আমার কাছে কোন তথ্য নেই। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত না থাকায় বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার কারণ হিসেবে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য দিতে পারছি না। ২০০৫ সালে করা অপেক্ষমান কোন মামলা এখন ফরিদগঞ্জ থানায় নেই বলেও জানান তিনি।
ছেলে হারানোর সেই করুণ আর্তনাদ আজও শেষ হয়নি বাবার। ছেলের শৈশবের দূরন্তপনা, ধীরে ধীরে বেড়ে উঠা রুবেলের স্মৃতিগুলো হাতরে বেড়ায় বাবার মনকে। ছেলে হত্যার এতগুলো বছর কেটেগেলেও ছেলে হত্যার বিচার পাবেন এমন একবুক আশা নিয়ে অপেক্ষার প্রহর ঘুনছেন বাবা। ভাবছেন কবে পাবেন ছেলে হত্যার বিচার?