বিশেষ প্রতিনিধি:
দর্জি কাজ শিখে এখন আত্মনির্ভরশীল চাঁদপুরের চার বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী। এতে নিজে যেমনি স্বচ্ছল তেমনি পরিবারের বোঝার বদলে সম্পদ হয়েছেন তারা। বর্তমানে তারা প্রতি সাপ্তায় তিন হাজার থেকে তিন হাজার দুইশ টাকা আয় করে। সহকর্মীরা বলছে, তারা কাজ খুব সুন্দরভাবে করে। আনন্দের সাথেই কাজ করা যায় তাদের সাথে। ওস্তাদ বলছেন, দেখিয়ে দিলে যে কোন কঠিন কাজই তারা করতে পারে। সমাজসেবা কর্মকর্তা বললেন, এমন ব্যক্তিকে অবশ্যই সাধুবাদ জানানো উচিৎ। সমাজের মানুষ এভাবে এগিয়ে এলে প্রতিবন্ধীরা অবশ্যই সম্পদে রূপান্তর হবে।
জানা যায়, সত্তর দশকে শহরের জোড়পুকুর পাড়ে ডিসকো নামে একটি ট্রেইলার্স হয়। বর্তমান নাম ড্রেসকো। যার সত্ত্বাধীকারী শহরের পরিচিত জন বাবুল মাস্টার। এ দোকানে প্রথমে মুকবুল বোবা দর্জি কাজ শেখে। বর্তমানে মুকবুল শহরের হকার্স মার্কেটে নিজে দোকান পরিচালনা করেন। এরপর একে একে মোঃ দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী সেলিম, মিজানুর রহমান পাটওয়ারী, মোঃ রাসেল ও মোঃ সজিবসহ অন্তত ৭জন কাজ শেখে। এর মধ্যে সেলিম চল্লিশ বছরেরও অধিক সময় ধরে এখানে চাকুরী করছেন। বাকীরাও অন্তত ২৫-৩৫ ধরে এখানে একটানা কাজ করে চলেছেন। বর্তমানে চারজন এ দোকানে কাজ করলেও বাকীরা নিজের মতো করে দোকান দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। বেশ কয়েকজন এখানে কাজ শিখে নিজে স্বাবলম্বী। যারা বর্তমানে কাজ করছে তাদেরকে নিজের হাতে কাজ শিখিয়েছেন বাবুল মাস্টার। এখন সপ্তাহে ২৮শ থেকে ৩২শ টাকা আয় করে তারা। এমন মহতি কাজ প্রসঙ্গে বাবুল মাস্টার বলেন, আমার এখানে যারাই কাজ করতে আসে আমি কাজ সেখাই, কাজ করার সুযোগ করে দিই। তবে বোবাদের মেজাজ অনেক গরম। যখন রেগে যায় তাদের পিঠে বা গায়ে মোছা দিলেই খুশি হয়ে যায়। তাদের কাজের প্রশংসা করলে খুব খুশি হয়। তাদের সাথে ভালো আচরণ করে যেকোনো কাজ করিয়ে নেয়া যায়। তবে বিপত্তি বাধে যখন খুব বেশি রাগ হয় তখন আর তারা কাজে আসে না। তখন তাদের পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলে আবার কাজে ফিরিয়ে আনি।বোবাদের সহকর্মীরা বলেন, তাদের রাগ বেশি। কিন্তু বুঝালে বা গা মোছা দিলে তাদের রাগ কমে যায়। আর তাই একসাথে কাজ করতে অসুবিধা হয় না। বরং আনন্দের সাথে কাজ করা যায়। সমাজসেবা কর্মকর্তা রজত শুভ্র সরকার বললেন, সমাজের সহৃদয়বান ব্যক্তিরা এভাবে এগিয়ে এলে এ মানুষগুলো মূল ¯্রােতে ফিরে আসতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্য অন্যদের সহযোগিতা করা প্রয়োজন। চাঁদপুর সমাজসেবা অধিদপ্তর কার্যালয়ের তথ্য মতে, চাঁদপুরে বর্তমানে সর্বমোট ৩১হাজার ৭শ ৩৮জন প্রতিবন্ধী আছে। এদের মধ্যে ভাতার আওতায় আছেন ২৬হাজার ৭শ ২৫জন।