স্টাফ রিপোর্টার:
চাঁদপুরের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা ডাকাতিয়া নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে খনন কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অর্থ বছরের মাঝামাঝি সময়ে কাজ শুরু হলেও ইতোমধ্যে পার হয়েছে প্রায় তিন বছর। অথচ কাজ হয়েছে ১৯ ভাগের মাত্র এক ভাগ। পূর্বের খরস্রোতা ডাকাতিয়া নদীর প্রাণ ফিরিয়ে আনতে সরকারের তীব্র ইচ্ছেও যেন থেমে যাচ্ছে সঠিক তদারকির অভাবে। অর্থাৎ ঢিমেতালে চলছে ডাকাতিয়া খনন কাজ। কবে শেষ হবে ড্রেজিং কাজ এ নিয়ে প্রশ্ন ডাকাতিয়া নদী তীরবর্তি মানুষের। যাদের মধ্যে অনেকের জীবিকা নির্বাহ হয় এ নদীর উপর। কারো জীবন চলে মাছ ধরে, কারো খেয়া বেয়ে। শুধু তাই নয় ট্রলার বা বাল্কহেড মালিকরাও মনে প্রাণে চাচ্ছেন দ্রুত সময়ে শেষ করা হোক ডাকাতিয়া নদীর ড্রেজিং কাজ। এতে যেমনি ডাকাতিয়া ফিরে পাবে নাব্যতা তেমনি ফিরে আসছে প্রাকৃতিক সুন্দর্য।
জানা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ডাকাতিয়া নদীর ড্রেজিং কাজ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান খুলনা শিপইয়ার্ড। কিন্তু দীর্ঘ তিন বছর পার হয়ে গেলেও এখনো প্রায় ৯৫ শতাংশ ড্রেজিংয়ের কাজ বাকি রয়েছে। অর্থাৎ ডাকাতিয়া নদীতে ১৯লাখ ঘন মিটার বালু বা মাটি ড্রেজিং করার কথা। এ বাবদ সরকারি বরাদ্দ রয়েছে ২৯ কোটি টাকা। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় আরো দুই বছর মেয়াদ বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করছে তারা বিআইডব্লিটিএ ড্রেজিং বিভাগ। সরকারের বেঁধে দেওয়া কাজের সময়সীমা পার হতে আর মাত্র ৬ মাস থাকলেও এত অল্প সময়ে বাকি ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ সরকারের সাবেক নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান ডাকাতিয়া নদী ড্রেজিংয়ের কাজের উদ্বোধন করেন। এরপর ওই এলাকার ডাকাতিয়া নদীতে ড্রেজিং শুরু হয়। কিন্তু সেসময় ড্রেজিং এর মাটি বিক্রির অভিযোগ ওঠে স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। এক পর্যায়ে ওই এলাকায় ড্রেজিং কাজ মন্থর হয়ে যায়। তারপরেও কিছু এলাকায় ড্রেজিং কাজ চলতে থাকে। যদিও দীর্ঘতার হিসেবে ১৭কিলোমিটার এলাকা ড্রেজিং করার কথা রয়েছে। দূরত্বের হিসেবে যার অর্ধেকও কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এরমাঝে ড্রেজিংয়ের কাজে অনিয়ম এবং স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাঁদা দাবির প্রেক্ষিতে ড্রেজিং কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এরমাঝে ইচুলিঘাট থেকে শুরু করে বিআইডব্লিটিএ মোড় পর্যন্ত ড্রেজিং করা হয়। কিন্তু তার পর থেকে মেঘনা নদীর সংযোগ পর্যন্ত ড্রেজিং কাজ করা হয়নি। বর্তমানে ডাকাতিয়া নদীর শাহরাস্তি এলাকায় ড্রেজিং কাজ চলছে বলে জানা গেছে।
ডাকাতিয়া নদী তীরবর্তি মানুষের অভিযোগ, নদী থেকে তোলা বালু স্থানীয় বিভিন্ন লোকের কাছে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে টাকা পকেটে ভরে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী। অথচ ড্রেজিংয়ের বালু বা মাটি দেয সরকারি-বেসরকারি, ধর্মীয় বা সামাজিক কাজে অর্থাৎ এসব প্রতিষ্ঠানের পুকুর বা ডোবা ভরাট করার নিয়ম রয়েছে। সেটা না হওয়ায় স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে ওই সময়ই ড্রেজিং কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ করা হয়।
বিআইডব্লিটিএ ড্রেজিং শাখার দেয়া তথ্যমতে, প্রকল্পটির আওতায় মেঘনা নদী ১৯ লাখ ঘনমিটার খননের কথা রয়েছে। যদিও খননের কাজ হয়েছে এখন পর্যন্ত মাত্র ১ লাখ ঘনমিটার। এবং প্রকল্পটির মোট খরচ ধরা হয়েছে ২৯ কোটি টাকা। এ বিষয়ে ড্রেজিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সিদ্দিকুর রহমান জানান, কাজটি শেষ না হওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। যার মধ্যে একটি হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায় নিচু ব্রিজ। এছাড়াও রাজনীতিক এবং স্থানীয় লোকদের চাপ। যার ফলে কাজটি ধীর গতিতে এগিয়েছে। আমরা আরো দুই বছর মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছি আশা করছি এই সময়ের ভিতর ড্রেজিংয়ের কাজটি শেষ করে হস্তান্তর করতে পারবো।
বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএ-এর উপ-পরিচালক মোঃ কায়সারুল ইসলাম জানান, প্রকল্পটি যখন শুরু হয়েছে তখন আমি চাঁদপুরের দায়িত্বে ছিলাম না। তাই এ বিষয়ে সম্পূর্ণ তথ্য না জেনেই আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না। তবে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে অবশ্যই ডাকাতিয়া ড্রেজিং দ্রুত শেষ করা জরুরি।