আবু ইউসুফ:
আমাগো সময় যৌবন কি বুজতাম না। অহন সরকার কি ডিজিতেল (ডিজিটাল) করছে সব পোলাপাইন গরে বেহায় বানাইয়া লাইছে। রাজনীতির হালচাল মতিগতি বালা ঠেকছে না। আল্লাহই জানে সামনে কি দিন আইতেছে? কথাগুলো বলছিলেন কচুয়া উপজেলার বয়বৃদ্ধ কালু মিয়া।
কথায় কথায় বলছিলেন জীবনের নানান অভিজ্ঞতার কথা। কালু মিয়া মেয়ের জামাইর দোকানে বসে সময় কাটায়। টুকটাক বেচাকেনাও করে। কচুয়ার গোলবাহার বাজারের পূর্ব পাশে জামাইর দোকান। পাঁচ মেয়ের জনক তিনি। ছেলে নেই। ছোট মেয়ের জামাই শরীফ হোসেন। তার দোকানেই কাটে জীবনের শেষ সময়। চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এসে এখন শুধুই দিন পার করায় যেন কোন তাড়া নেই তার।
কথায় কথায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তার নৌকা চালানোর সময় বিভিন্ন ঘটনার আলোকপাত করলেন। রাজাকারের হাতে পড়া কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে পড়লেন পাকবাহিনীর (পাঞ্জাবিদের) খপ্পরে। সেটা ছিলো পুরো বর্ষার জালাকে জলা শুধু পানি আর পানি যায়গাটা ছিলো মুদাফফরগঞ্জ এলাকার পশ্চিম উত্তর দিক। সেখানে জনগনের ঘর বাড়ি রাজাকারসহ অতর্কিত হানায় সব লোক জীবন নিয়ে কোন মতে পালাচ্ছে।
অগনিত মানুষ যে যার যার মতো ছুটছে আমিও ঠিক একই পরিস্থিতিতে কোমর পানিতে হেঁটে চলছি। বলছিলেন কালু মিয়া। “কিন্তু বাজি, খুব কষ্ট লাগলো, একজন গর্ভবতী মাইয়ালোক ৯ মাসের বেশি হইব, তার ব্যাথার গোংরানি চোহের হানি আর বন্যার হানি মিইশা যাইতে আছে। চইলত হারে না আরে মিয়া হরে আইসহ আরেক জনরে কই ভাই এটটু দরেন, বল হইয়া মাইয়াডা এটটু হাশর কাইটলো। আর কয় বাজি আর বৈনের বাড়ি শারহার রনাগরের দারে। ঈদগা আছে এর লগে দিয়া এট্টু হিয়ান হইজ্জন্ত থাইক্কেন।
দেহি কিয়ারন যায়। যাগার নাম মন নাই। অনকার কাইল্লহারার কচ্চর রাস্তাত উঠমু এমন সময় রাস্তার হচ্চুম দিয়া ডাক উটলো পাঞ্জাবি আইচেরে। জম্বির বার মাইয়াডারে লই গেছেররে। হুইননা তো আর আমরা আবারনি দান ক্ষেতে দিকে হান্দাই গেলাম।
আরে মাইয়াডার ঠুরঠুর কাঁপ। অনেকন হর কোন আওয়াজ না হুইন্না রাস্তাত উইটা আডনের শুরু। হাইঞ্জ ওয় ওয় মাইয়াডার বৈনের বাড়িত উটলাম। বৈনে দেইক্কা তো কান্দা, অন এইও বাজান এই বাইর তিনগা মাইয়া লইয়া গেছে। বেক ঘরওয়ালারা অন হাগলের মত ওইয়া রইছে। আন্নেরা কদ্দূর আর বৈনগারে আন্নেগ লগে লই যান। ঠিকানা কইয়া যাইয়েন, তহন আই কিললাম আর এক তালইর বাড়িতে হাইঞ্জা বাতি দেয় এই সময় নিয়া কইলাম তালই মাইয়াডার বড় বিপদ, মাওইজি কইলো বাজি কতা নাবারান আগে গরে আয়েন।
হুনেন মাওইজি আগে বিপদ শেষ ওউক। কি অয়? আই আইয়ুম হরে।
আরো অনেক কথা তার ভাষায় বলা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তিনদিন পর কালু মিয়া নৌকা নিয়ে গিয়ে দেখলো খুব যতেœ রাখছে। ছেলে হয়েছে। মেয়ের বাবার বাড়ি মতলব সব ঠিকানা দিলো। জামাই সরকারি চাকুরী করে লাকসাম রেল স্টেশনের পাঞ্জাবিদের হাতে আটকা পড়ে আছে।
এরপর নিয়া গেলাম মতলব। দিয়ে আসলাম অনেক সম্মান পেলাম। স্বাধীন বাংলাদেশের পর তার স্বামীসহ আমার বাড়িতে আসলো। সেই সব দিনের কথা মনে করে মেয়ের কান্নায় আমিও আবার কাঁদলাম। আমারাও অনেক কষ্টে ছিলাম। বাচ্চু রাজাকারের অত্যাচারে এই গোলবার এলাকায়।