আহসান হাবিব পাটওয়ারী:
শাহরাস্তিতে প্রবাসী স্বামীর কাছ থেকে টাকার জন্য নিজের দুই বছরের শিশু সন্তানকে অমানুষিক নির্যাতন করে তার আপন মা। এ ঘটনায় আবার নিজেই সেই ভিডিও ধারণ করে তা বিদেশে স্বামীর কাছে পাঠান তিনি। যাতে নির্যাতনের ভিডিও দেখে স্বামী তাকে টাকা দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে হৈচৈ পড়ে যায় এলাকজুড়ে এবং ঘটনাটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নজরে আসলে মঙ্গলবার রাত আনুমানিক ২টায় অভিযান চালিয়ে শিশুকে উদ্ধার করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার অফিসার ইনচার্জ। পরে বুধবার আদালতের মাধ্যমে নির্যাতনকারী মাকে জেলা হাজতে প্রেরণ করা হয়।
শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও মডেল থানা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চিতোষী পশ্চিম ইউনিয়নের হাড়িয়া গ্রামের নূরুল আমিনের কন্যা পারভীন আক্তারের (২৩) ও কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার আশিয়াদারি গ্রামের আঃ করিমের পুত্র প্রবাসী মহিনউদ্দিনের সাথে ৩ বছর পূর্বে বিবাহ হয়। তাদের সংসারে ফাহাদ (২) নামের একটি শিশুপুত্র রয়েছে। পারিবারিক জীবনে তাদের মিলমিশ না হওয়ায় স্থানীয় চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যস্থতায় আপস মীমাংসা করা হয়। এসময় বিবাধী পারভীন আক্তার প্রথমে আপস মীমাংসা মেনে নিলেও পরবর্তীতে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা জেলা লিগ্যাল এইড কার্যালয়ে অভিযোগ দায়ের করে। লিগ্যাড এইড কার্যালয় উভয় পক্ষের শুনানী শেষে বিভিন্ন শর্ত সাপেক্ষে বিবাধী পারভীন আক্তার ও শিশুর ভরণপোষণ বাবদ প্রতিমাসে ৮ হাজার টাকা করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
কিন্তু প্রবাসী স্বামী মহিনউদ্দিন ঠিকমতো ওই টাকা না দিতে পারায় স¤প্রতি পারভীন তাদের দুই বছরের শিশুপুত্র ফাহাদকে বর্বরোচিত নির্যাতন করে তার ভিডিও ধারণ করে স্বামীকে পাঠায়। শিশুটির পিতা ওই ভিডিও দেখে সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মনোহরগঞ্জ এলাকার বিভিন্নজনকে অনুরোধ করেন। ইতোমধ্যে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি আইন শৃংখলা সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টিতে আসে। মঙ্গলবার রাত ১টায় শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ন রশিদ, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আবদুল মান্নান ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবু ইসহাক উপজেলার চিতোষী পশ্চিম ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোঃ জোবায়েদ কবির বাহাদুরকে নিয়ে শিশুটির নানার বাড়ি হাড়িয়া গ্রামের দুলাল মেম্বারের বাড়িতে যান। সেখান থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেন।
শিশুটির মা পারভীন আক্তার জানান, বিয়ের পর থেকে তার স্বামী বহু নারীতে আসক্ত। এসবের প্রতিবাদ করায় সে তাদের ভরণপোষণ বন্ধ করে দেয়। স্বামীকে শিক্ষা দিতেই তিনি শিশু পুত্রকে নির্যাতন করে ভিডিও পাঠিয়েছেন।
শিশুটির দাদা আঃ করিম জানান, অনেক চেষ্টা করেও পুত্রবধুর উগ্র চলাফেরা বন্ধ করা যায় নি। পুলিশ উদ্ধার না করলে আমার নাতীকে হয়তো মেরেই ফেলতো।
থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আবদুল মান্নান জানান, শিশুটিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। নিকটাত্মীয় বা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় তার নিরাপত্তা হেফাজত নিশ্চিত করতে আদালতে সোপার্দ করা হয়েছে। নির্যাতনকারী মাকে আদালতের মাধ্যমে কাস্টডিতে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় শিশুটির দাদা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ন রশিদ বলেন, ভাইরাল ভিডিওয়ের প্রেক্ষিতে রাতেই শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে মা পারভীন আক্তারকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে শিশুটির বিষয়ে আগামীকাল সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।