এডভোকেট হেলাল উদ্দিন
পৃথিবীর ইতিহাস লক্ষ্য করলে জানা যায়, পৃথিবীতে মাঝে মাঝে প্রাকৃতিক দূর্যোগসহ নানান ধরনের দূর্যোগ দেখা দেয়।যেকোনো দূর্যোগের সময় জাতিকে এবং সরকারে যারা থাকেন তারা (গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগন) ধৈর্য ধরে সাহসের সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়। বিশেষ করে সরকারের নীতিমালা ও দূর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের গৃহিত পদক্ষেপ সরকারের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীগণ জনপ্রতিনিধি সহ পরিস্থিতি মোকাবেলায় ও বাস্তবায়নে আক্ষরিক অর্থে সর্বাঙ্গীন ভূমিকা পালন করেন।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় সারা পৃথিবীর ন্যায় বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস যখন দেখা দেয় সরকার তাহার সর্বশক্তি দিয়ে বিশেষ করে জনপ্রতিনিধি, দলীয় প্রতিনিধি , পুলিশ বাহিনী, সেনা বাহিনী, নির্বাহী বিভাগ বিশেষ করে UNO, O.C উপজেলা পর্যায়ে, জেলা পর্যায়ে D.C- SP দের সমন্বয়ে টিম রাত-দিন পরিশ্রম করে স্বাস্থ্য বিভাগকে সাথে নিয়ে জীবন বাজী রেখে মানুষকে সচেতন করা বাজার নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য সামগ্রী মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া,চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করনে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সেই মুহূর্তে কিছু অসাধু চক্র উঠে পড়ে লেগেছে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করা, ভাল ভাল গ্রহণযোগ্য জন প্রতিনিধিদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে মনোবল দূর্বল করা এতে একটি বিষয় পরিষ্কার একটি গ্রুপ এই দূর্যোগে জাতিকে কোন ধরনের সাহায্যে না করে নানা ধরনের ষড়যন্ত্রের পায়তারায় লিপ্ত থেকেছেন।
যাতে করে এই মহামারী ও দুর্যোগকে টার্গেট করে জনগনকে ক্ষেপিয়ে তোলার চক্রান্তের রাজনীতির সাথে সরকারের বিরুদ্ধে দলগুলো সামিল হয়েছেন সেই সাথে আওয়ামীলীগে গাপটি মেরে বসে থাকা স্বার্থান্বেষী মহলের কতিপয় লোকজন সরব রয়েছেন যাহা ফেইসবুক সহ অনলাইন মডিয়া থেকে অনুমেয়।
এই প্রসঙ্গে আমি সরকারী ত্রান বিতরণের বিষয়টি সামনে আনতে চাই-
ত্রান বলতে সরকারের দেয়া চাল সহ অন্যান্য খাদ্য সামগ্রীকে আমরা বুঝি। সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ও অন্যান্য সরকারী বিভাগ জেলা ভিত্তিক ত্রান সামগ্রী প্রতি জেলা প্রশাসকগনের অনুকূলে বরাদ্দ দেন। জেলা প্রশাসক মহোদয়গন জনসংখ্যা হারে প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (UNO) নামে বরাদ্দ পাঠান। UNO সাহেব উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন
কর্মকর্তা (PIO) ক্ষেত্রে বিশেষ অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে জনসংখ্যা হারে প্রতি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের অনুকূলে বরাদ্দ দেন। স্থানীয় চেয়ারম্যানগন নীতিমালা অনুযায়ী স্থানীয় (বর্তমান নির্দেশিত) রিলিপ কমিটি সহ সমন্বয় করে এলাকার প্রাপ্য ব্যক্তিগনের নামের তালিকা প্রস্তুত করে সরকারী কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সরকারের কোষাগার হইতে ত্রান সামগ্রী উত্তোলন করে পরবর্তীতে সরকারি কর্মকর্তার উপস্থিতিতে বিলি করবেন।
যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে-ত্রান চুরি।
হ্যাঁ কোন সরকারি কর্মকর্তার দায়িত্ব ও কর্তব্য অবহেলা জনিত সুযোগে কোন জনপ্রতিনিধি যদি ত্রান সামগ্রী সরকারের কোষাগার হইতে উত্তোলন করে গরীব-দুস্তদের মাঝে বণ্টন না করে কালো বাজারে অর্থাৎ কোন দোকানে বা মানুষের নিকট নগদ মূল্যে বিক্রি করে তাহলে সেটি হবে ত্রান চুরি বা কালো বাজারে বিক্রি। কিন্তু কারো বাড়ীতে, বিক্রিগত গুদামে সরকারি মাল রক্ষিত রাখলে সেটি ত্রান চুরি, কালো বাজারীর আওতায় পড়ে না। কারন সরকারি কোষাগার হইতে ত্রান উত্তোলন করার পর কোথাও না কোথাও রাখতে হবে। তবে ত্রান উত্তোলন করা, ত্রান কোথাও রাখা এই সকল কিছুই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (UNO), প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (PIO) এবং ত্রান বিতরণ কার্যে নিয়োজিত সরকারী প্রথম শ্রেণীর একজন কর্মকর্তা সার্বক্ষনিক অবগত থাকতে হবে।
আসলে ত্রান সরকার কিভাবে বরাদ্দ দেন, কিভাবে সরকারের কোষাগার হইতে ত্রান উত্তোলন হয়, কীভাবে রক্ষিত ও বিলি হয় এইসব কিছুই এখনকার কিছু কিছু সংবাদ কর্মী অনেক ক্ষেত্রেই জানেন না। আবার একজন সংবাদ কর্মীর ফেইসবুক কিংবা মিডিয়ায় প্রকাশিত লেখা যেকোনো উৎসক জনতা তাহার নিজের ফেইসবুক আইডি থেকে অতীতের মনের জ্বালা সহ প্রচার করেছেন। এতে করে জন মানুষের কাছে সরকার, প্রশাসন,জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল ও নেতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। ক্ষেত্র বিশেষ মিথ্যা তথ্য সরবরাহের কারনে অনেক তথ্য সরবরাহকারীর ব্যক্তিত্ব নিয়ে জন মনে ক্ষোভের সঞ্চার সৃষ্টি হয়। এই ধরনের ত্রান সংরক্ষণের বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চাঁদপুর ১৬ই এপ্রিল ২০২০ তারিখ সার্ক্যুলার জারি করেছেন।
সংবাদ কর্মীদের অতি উৎসাহী না হয়ে যে কোন সংবাদ পরিবেশনের আগে তাহাদের প্রেসক্লাবের সভাপতি/সম্পাদককে অবহিত করলে ভালো হয়। ক্ষেত্র বিশেষ প্রেসক্লাবের সভাপতি/সম্পদক ৫ম শ্রেণী/৮ম শ্রেণী/ ৯ম শ্রেণী পাশ সংবাদ কর্মীদের সংবাদ পরিবেশনের যোগ্য নয় বলে বিবেচনায় নিলে দেশের এই মহা দুর্যোগে সরকারী কাজ বাস্তবায়ন বিশেষ করে ত্রান বিতরণ কার্যক্রম সহায়ক হবে।
সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে রাজনৈতিক, সমাজ সেবক, পেশাজীবি সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন ত্রান বিতরণ ও জনসাধারণকে সচেতন ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন। এটি দেশের জন্য মানুষের কল্যাণে ইতিবাচক।
সবশেষে যে কথাটি বলতে চাই জাতির এর দুর্যোগে প্রতিশোধ পরায়ন না হয়ে সহনশীল মনোভাব নিয়ে সকলে মিলে জাতির এই দুর্যোগে এক হয়ে কাজ করি। এটিই হবে দেশের জন্য, জাতির জন্য ও নিজেদের জন্য মঙ্গলময় কাজ।