তুহিন ফয়েজ:
একই জমি একাধিক ব্যক্তির কাছে বন্দোবস্ত দেয়ায় প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে ফরাজীকান্দি ইউনিয়নের সাবেক ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে। ১৪ শতাংশ জমি ৩৪ শতাংশ দেখিয়ে ৪ ব্যক্তির নামে বন্দোবস্ত দিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।
তার এমন প্রতারনায় বন্দোবস্ত নেওয়া বাবুল হোসেনের মিথ্যা মামলায় বন্দোবস্ত নেওয়া অপর ব্যক্তি সুলতান খাঁ সহ হয়রানির শিকার হচ্ছে প্রতিবেশি জমির হোসেন খার ছেলে মোস্তফা মাস্টার ও কামরুজ্জামান, আবুল হোসেন মৃধার ছেলে মোঃ জিলানী।
জানা যায়, মতলব উত্তর উপজেলার ফরাজীকান্দি ইউনিয়নের ছোট চরকালিয়া মৌজার সাবেক ৬০৫ হাল দাগ ৪২১ শ্রেণি ডোবা কলমতর খাঁকে ৫ শতাংশ, আমিনুল ইসলামকে একই দাগে ১০ শতাংশ, বাবুল হোসেনকে ৯ শতাংশ ও সুলতান খাঁকে একই দাগে ১০ শতাংশ সহ মোট ৩৪ শতাংশ জমি বন্দোবস্ত দেয়া হয়। কিন্তু উক্ত স্থানে মূল জমির পরিমান ১৪ শতাংশ।
যদিও এই ১৪ শতাংশ জমি ৩৪ শতাংশ দেখিয়ে একাধিক ব্যক্তিকে বন্দোবস্ত দেয়ার ব্যপারে ততকালীন দায়িত্বে থাকা ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আবুল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে বাবুল হোসেন তার নামীয় বন্দোবস্ত নেওয়া জমি তার দখলে আছে এবং ফলফলাদী গাছ আছে ইত্যাদি বিষয় দেখিয়ে বন্দোবস্ত নেওয়া সুলতান খাঁসহ প্রতিবেশী মোস্তফা মাস্টার, কামরুজ্জামান ও মোঃ জিলানীর বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। উক্ত দরখাস্ত মামলা নং- ৮৩৮/২০২১। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, চাঁদপুর-এর ১৭/৬/২০২১ তারিখের ১৮৪৭নং স্বারকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করে উপজেলা ভূমি অফিসকে। যার প্রেক্ষিতে ১৩/১/২০২২ তারিখে সার্ভেয়ার আবু বকর সিদ্দিক সরজমিনে তদন্তক্রমে প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ১৪ শতাংশ ডোবা শ্রেণি ৩৪ শতাংশ দেখিয়ে একাধিক ব্যক্তিকে বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে এবং উক্ত ডোবা শ্রেণি কোন ব্যক্তির ভোগ দখলে নেই। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসক চাঁদপুর ডোবা শ্রেণি হিসেবে ভোগ দখলে আছেন। এছাড়াও বাবুল হোসেন তার নামে বন্দোবস্ত নেয়া ডোবা অপর ৪ জনের কাছে অবৈধভাবে বিক্রি করেছেন বলেও এলাকাবাসী জানান।
অপর দিকে এলাকাবাসী উক্ত ডোবার স্থানে সকল বন্দোবস্ত বাতিল করে জনস্বার্থে পানি নিস্কাশনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য গত ২ ফেব্রæয়ারী ২০২১ তারিখে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত আবেদন করেন। যার প্রেক্ষিতে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে সরজমিনে তদন্তক্রমে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ প্রদান করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক।
এ ব্যাপারে আমিরাবাদ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা আনিছুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সাবেক ১৩৭ হালে ১৫৭নং ছোট চরকালিয়া মৌজার ১নং খাস খতিয়ানভূক্ত সাবেক ৬০৫ হালে ৪২১নং দাগে মোট জমির পরিমান ১৪ শতাংশ, যাহার শ্রেণি ডোবা হিসেবে লিপিবদ্ধ আছে। উক্ত ভূমি জনস্বার্থে পানি নিস্কাশনের কাজে বহু বছর যাবৎ ব্যবহৃত হয়ে আসছে বিধায় স্থানীয় বন্দোবস্ত প্রদান করা যুক্তিগত হয়নি মর্মে প্রতিয়মান।
তিনি আরো বলেন, এছাড়াও পরিমানের অতিরিক্ত ভূমি বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়েছে। লিজ গ্রহীতাগণ লিজকৃত ভূমিতে দখলে না থাকায় জনস্বার্থে লিজকৃত স্থায়ী বন্দোবস্ত মেকাদ্দামা নং ২৯/ ২০১৪- ১৫, ৯২/২০১৪-১৫, ৫০/২০১৫-১৬, ৯৬/২০১৫-১৬ গুলি বাতিল এবং সংশ্লিষ্ট নামজারি ও জমাখারিজ মোকদ্দমা নং ১০৯১/২০১৭- ১৮ ও ১১৩০/২০১৭-১৮ মূলে সৃজিত ৭৩০ ও ৭৩১নং খারীজ খতিয়ানগুলি বাতিল ১নং খাস খতিয়ানে স্থানান্তরের সুপারিশ করে গত ১৬ মে ২০২২ তারিখে স্থায়ী বন্দোবস্ত মামলা নং- ২৯/২০১৪-১৫, ৩১/২০১৬-১৭ বাতিলের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরজমিনে তদন্তক্রমে প্রতিবেদন দাখিল করেছি।
উত্ত বন্দোবস্ত মোকদ্দমা বাতিল করার নিমিত্তে অভিযোগ দাখিল করায় শুনানীর জন্য ২০ সেপ্টেম্বর সহকারী কমিশনার ভূমি মোঃ হেদায়েত উল্লাহ উভয় পক্ষকে ডাকিয়ে বন্দোবস্ত বাতিলের শুনানীকালে উক্ত ডোবা ভরাট, বাউন্ডারী আছে, গাছ আছে এবং তার দখলে আছে বাবুল হোসেনের এমন মৌখিক আবেদনের প্রেক্ষিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ হেদায়েত উল্লা বৃহস্পতিবার দুপুরে সরজমিনে পরিদর্শনে যান এবং উক্ত স্থানটি ডোবা, কোন প্রকার বাউন্ডারী ও কোন প্রকার গাছ নেই এবং কারো দখলে নেই দেখতে পান। এ ব্যাপারে বাবুল হেসোনের পিতা কলমতর খাকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ হেদায়েত উল্লাহ প্রশ্ন করলে তার কোন উত্তর দিতে পারেননি কলমতর খাঁ।
এলাকাবাসী জানান, উক্ত ডোবা গত ২০০ বছর ধরে পানি নিস্কাশনের কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। উক্ত ডোবা শ্রেণি ভূমির সকল বন্দোবস্ত বাতিল করে জনস্বার্থে পানি নিস্কাশনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ করেন এবং বাবুল হোসেনের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ হেদায়েত উল্লাহর কাছে দাবি জানালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ হেদায়েত উল্লাহ উক্ত ডোবা শ্রেণী ভূমির সকল বন্দোবস্ত বাতিল করে জনস্বার্থে পানি নিস্কাশনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেন।