শিল্পে, সাহিত্যে, বিজ্ঞানে, খেলাধুলায় সর্বত্রই প্রতিভা। তার বিশেষ দ্যুতিময় অস্তিত্ব দিয়ে সর্বস্তরের মানুষকে বিমুগ্ধ ও অনুপ্রাণিত করে তুলে। প্রকৃতপক্ষে প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায় মানুষের সৃষ্টিশীল কাজে, উদ্ভাবনী শক্তিতে, বিস্ময়কর আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে। আর মানবজীবনের অসামান্যতা ও অসাধারণত্বকেই প্রতিভা হিসেবে ধরা হয়।
যেসব মানুষের মধ্যে অসাধারণ সৃজনীশক্তি, ব্যতিক্রমধর্মী বুদ্ধিমত্তাবিশিষ্ট গুণাবলি থাকে সেসব গুণাবলিকে সাধনা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেরভেতরের সুপ্ত প্রতিভাকে জাগ্রত করে তুলে, সেই আসল প্রতিভাবান।
কঠোর পরিশ্রম আর সাধনার মধ্যে দিয়ে নিজের ভেতরে থাকা প্রতিভাকে তুলে ধরেছেন তেমনি একজন অসম্ভব প্রতিভাবান দক্ষ চিত্রশিল্পী নিশাদ মাহমুদ। যাকে ছবি আঁকার যাদুকরও বলা চলে। কোন প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই নিজের ইচ্ছাশক্তি ও ইউটিউব ভিডিও দেখে আয়ত্ত করে নিয়েছেন ছবি আঁকার খুঁটি নাঁটি।
তিনি তার নিপুণ হাতে সযত্নে যে কোন চিত্র নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তুলেন কাঠ পেন্সিলের মাধ্যমে এক টুকরো কাগজে। তার আকাঁ ছবিগুলো দেখলে মনে হয় হাতে আঁকা নয়, এ যেনো ক্যামরা দিয়ে তোলা ছবি।
এই প্রতিভাবান চিত্রশিল্পী নিশাদ মাহমুদের (২২) জন্ম নীলফামারীর জেলার, জলঢাকা উপজেলার, কৈমারী ইউনিয়নের শৌলমারী মৌজায়। তার পিতা মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম (৫০),মাতা নাজমা পারভীন। বর্তমানে নিশাদ মাহমুদ পড়াশোনা করছেন ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ইলেকট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্টের ৬ষ্ঠ সেমিস্টারে।
জানতে চাওয়া হয়, কিভাবে ছবি আঁকা শুরু? এই প্রশ্নের উত্তরে নিশাদ মাহমুদ বলেন ‘মূলত ছবি আঁকা আমার একটা অন্যতম শখ। এসএসসি পরিক্ষার পর অবসরে বসে বসে ফুল-পাখির ছবি আঁকতাম। একদিন হঠাৎ করে একজনের ছবি দেখে আঁকা শুরু করলাম। এ-ফোর সাইজের একটা পেইজে খুব ছোট করে আঁকলাম। তখনও আমি পুরো পেইজ জুড়ে আঁকতে পারিনা। ছবিটা আঁকা হলো। প্রথম বার আঁকা হলেও স্কেচটা খারাপ হয়নি। এরপর আরও ভালো করে আঁকার চেষ্টা করতে থাকলাম। পুরো পেইজ জুড়ে আঁকার জন্য ইউটিউবে ড্রয়িংয়ের বিভিন্ন টিউটোরিয়াল দেখতে শুরু করলাম। এরপর প্রতিনিয়ত চর্চায় লেগে থাকতাম।এভাবেই শুরু। গত দুই বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম করে আমার ড্রয়িং গুলোকে একটা ভালো পজিশনে নিয়ে আসতে সক্ষম হলাম।
নিজের ভবিষ্যতে পরিকল্পনা সম্পর্কে নিশাদ মাহমুদ বলেন, আমি যেহেতু এখন ইলেকট্রিক্যাল বিষয়ে ঢাকা পলিটেকনিকে অধ্যয়ন করছি তাই ইচ্ছে একজন প্রকৌশলী হওয়া। পাশাপাশি আমার এ শখটাকে আমি ধরে রাখতে চাই। এটাকে আরও ভালোভাবে আয়ত্ত করতে চাই। আর ছোটছোট ছেলে-মেয়েরা ছবি আঁকার বিষয় অনেক আগ্রহী। আমি ছোটদের ছবি আঁকানো শেখাতে চাই। এরজন্য রাষ্ট্রের সহযোগিতা চাই। তবে ছবি আঁকা নিয়ে মনের মধ্যে আছে বেশ কিছু আক্ষেপও। তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশের মানুষ ছবি আঁকাকে কোন মূল্যায়ন করে না। ফলে এতে অনেক প্রতিভাবান চিত্রশিল্পীরা হারিয়ে যায়। একটা ছবি আঁকতে যে কি পরিমাণ কষ্ট হয়,সময় ব্যয় হয় সেটা কেউ বুঝতে পারে না। সবার উচিত শিল্পীর শিল্প কর্মকে মূল্যায়ন করা।
বর্তমানে কি করছেন? জানতে চাইলে নিশাদ মাহমুদ বলেন, আমি ফেইবুকে ‘পেন্সিল স্কেচ’ নামে একটি পেইজ চালাই। যেখানে মানুষ নিজের প্রিয়জন কিংবা যে কোন পছন্দের জিনিসের ছবি হুবহু একেঁ নিতে পারে। পড়াশোনার পাশাপাশি ছবি আঁকাআঁকি করি এই আর কি।
দেশের মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নিশাদ মাহমুদের মত হাজারোপ্রতিভাবান শিল্পীদেরকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা প্রদান করে তাদের মেধাকে জাতীয় সম্পদের পরিণত করার দাবি জানাই দেশের গুণীজনের কাছে।
রিয়াজ শাওন