আবদুস সালাম:
ফরিদগঞ্জ রূপসা উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ কাউছারুল আলম কামরুলের অনিয়মের অভিযোগ এসে সংবাদ সম্মেলন করেছে ওই ইউনিয়নের ৩ ইউপি সদস্য। গতকাল ১৭ জুলাই রোববার সকালে ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেন তারা। এসময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ৮নং ওয়ার্ডর ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন লিটন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ৮ জুলাই শুক্রবার পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে অসহায়দের মাঝে ভিজিএফ-এর ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়। চেয়ারম্যান ঐ কার্ডে নিজের ছবি ব্যবহার করে ৮নং ওয়ার্ড ব্যতিত প্রতিটি ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য-সদস্যা এবং চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত লোকদের মাধ্যমে কার্ড বিতরণ করেন। বিতরণের দিন ২নং ওয়ার্ড ও ৮নং ওয়ার্ডের কতিপয় লোকদের কাছে ভুয়া কার্ড সনাক্ত করে পরিকল্পিতভাবে মোবাইল ফোনে ঐ কার্ডধারী লোকদের বক্তব্য রেকর্ড করেন চেয়ারম্যান নিজেই। পরে ২নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. হাসান আলী ও ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য হিসাবে আমার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন চেয়ারম্যান। এছাড়া সাংবাদকর্মীদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করান তিনি। ভিজিএফ’র চালসহ গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের পূর্বে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যদের নিয়ে মিটিং করার নিয়ম থাকলেও চেয়ারম্যান তা করেননি। সরকারি কর্মকর্তা ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে বিতরণের নিয়ম থাকলেও ট্যাগ অফিসারের সময়কে উপেক্ষা করে ৭ জুলাই পরিবর্তে ৮ জুলাই বন্ধের দিনে চাল বিতরণ করেন। চাল বিতরণের মাস্টার রোল করার বিদান থাকলেও তা করা হয়নি।
তিনি বলেন, চেয়ারম্যানের সাথে তার নিজের পূর্বের একটি বিরোধ রয়েছে এবং এ নিয়ে একটি মামলাও চলমান রয়েছে। তাই চেয়ারম্যান আমার নির্বাচিত এলাকা অর্থাৎ ৮নং ওয়ার্ডের মানুষদের সরকারের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছেন। কিছু সময় চেয়ারম্যানের পছন্দের আওতায় মানুষদের তিনি ওইসব সুবিধার আওতায় আনেন। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি চেয়ারম্যান কর্তৃক সনাক্ত করা ঐ ভুয়া কার্ড আমার ওয়ার্ড ছাড়াও অন্যান্য ওয়ার্ডেও বিতরণ করা হয়েছে। তাহলে এটাই প্রমানিত হয় তিনি নিজেই ছবি ও স্বাক্ষর ব্যতিক্রম করে আমাদেরকে হেয় করার জন্য এই ঘৃন্যতম কাজটি করেন। যাহা পূর্ব পরিকল্পিত ছিল। ঐ মামলার বাদী আমার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ভুয়া কার্ডধারী লোকের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে মোবাইলে বক্তব্য রেকর্ড করেন চেয়াম্যান।
তিনি আরো বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর ৩০ দিনের মধ্যে প্যানেল চেয়ারম্যান গঠন করার নিয়ম থাকলেও তিনি প্যানেল চেয়ারম্যান নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেননি। নিজের খেয়াল খুশিমত একতরফা ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। প্রতি মাসে সকল সদস্যদের নিয়ে মাসিক মিটিং করার বিধান থাকলেও নিয়মিত মাসিক মিটিং করেন না তিনি। যে কোন সরকারি উন্নয়নমূলক প্রকল্প আসলে তিনি ইউপি সদস্যদের সাথে কোন প্রকার সমন্বয় বা মিটিং ছাড়া নিজের খেয়াল খুশিমত বহিরাগত লোক দিয়ে নামমাত্র প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন। যাহা ইউপি সদস্য হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জাজনক। এতে আমরা এলাকাবাসীর কাছে আমরা প্রশ্নবৃদ্ধ হই।
এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে আরো অভিযোগ করে বলেন, কাউছারুল আলম কামরুল ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে জন্ম নিবন্ধন, মৃত্যু সনদ, ওয়ারিশ সনদ, প্রত্যয়ন পত্রসহ বিভিন্ন সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেন। যার সঠিক জবাব আমরা এলাকাবাসীকে দিতে পারি না। এতে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। চেয়ারম্যানের এসকল অনৈতিক বিষয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে তার বাহিনী কর্তৃক আমরা অপমানিত ও লাঞ্চিত হই।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি কর্মসূচি কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) ৪০ দিনের প্রকল্পে কোন ওয়ার্ডেই কাজ শুরু হয়নি। কিন্তু নামে বেনামে সিমকার্ড ব্যবহার করে উক্ত কর্মসূচির টাকা তিনি আত্মসাৎ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলাম, ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাসান আলী, আওয়ামী লীগ নেতা আমিন পাটওয়ারী, স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ আলম প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. কামরুজ্জামানেরে সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবদুস ছোবহান লিটনের পরিচালনায় প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।