বিশেষ প্রতিনিধি:
পুকুর জলাশয়ে চাষকৃত হাজার হাজার টন মাছ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাঁদপুরের মৎস্য চাষীরা। মাছ বিক্রি করতে না পারায় এখন লেবার খরচ চালানো দায় হয়ে পড়েছে। বানিজ্যিক মৎস্য খামার গুলো নিয়মিত যে মাছ বিক্রি করে তা দিয়ে দৈনিক খরচই মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে প্রতিদিন মাছের যে ফিড খাওয়াতে হয়। তার খরচ জোগাড় করাই এখন দায় হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো খামারির বিদ্যুৎ বিলও বকেয়া পড়ে গেছে। মৎস্য বিভাগ বলছে, চাষীরা এমন বেকায়দায় পড়েছে তা আমাদের জানা নেই। তারপরেও আপাতত অপেক্ষা ছাড়া কোনো উপায় নেই বলে শান্ত¦না দিচ্ছেন তারা।
চাঁদপুরের কচুয়ার হারিচাইল গ্রামের প্রবাস ফেরত মহিউদ্দীন। ঋণ করা তিন লাখ টাকা পূঁজি নিয়ে ২০০৬ সালে শুরু করেন মাছ চাষ। এখন তার চারশ একর মাছের খামারে কাজ করে ১৫৭জন শ্রমিক। করোনার সময়ে প্রয়োজন মতো মাছ বিক্রি না হওয়া বিপাকে পড়েছেন তিনি। বড় ধরণের আর্থিক ক্ষতিরও সঙ্কা করছেন। তিনি বলছেন, গ্রামে গঞ্জে যে বাজার গুলো আছে সেখানে খুচরা মাছ বিক্রিতেরা মাছ খুব কম নিচ্ছে। তারা বলছে বাজারে ক্রেতা কম। লক ডাউনের কারণে মানুষ বাজারে আসছে না। খুব বেশি জরুরী যাদের তারাই শুধুমাত্র আসছেন বাজারে।
অপরদিকে মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুরে মাছের হাট-বাজারের মধ্যে দৈনিক বাজার রয়েছে ১১৫টি আর সাপ্তাহিক বাজার রয়েছে ১৬২টি। এমন বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায়, পুকুরে চাষকৃত মাঝারি মানের পাঙ্গাস বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৮০ টাকায়। বড় আকারের বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়। মাঝারি রুই বিক্রি হচ্ছে ২২০টাকার মধ্যে বড় হলে ছাড়িয়ে যায় সাড়ে তিনশ’র উপরে। এছাড়া ছোট কাতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০টাকায়। বড় আকারের হিসেবে ৪০০-৫০০ পর্যন্ত গড়ায়। বড় আকারের ব্রিকেট মাছ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩শ টাকায়। তেলাপিয়া আকার ভেদে ১১০-২০০টাকা। অথচ খামারিদের কাছ থেকে অর্ধেকের একটু বেশি দামে মাছগুলো কিনে থাকে তারা।
চাঁদপুরে বর্তমানে মৎস্য চাষী আছে ৩১হাজার ১৫জন। অন্য চাষীরাও বলছেন একই কথা। তারা মাছ বিক্রি করতে পারছে না। মাঝারি মানের মৎস্য খামারীরা বলছে, যে তেলাপিয়া আমরা আড়তে বিক্রি করি ৮০টাকা সেটাই তারা বিক্রি করছে ১২০-১৫০ টাকায়। যে পাঙ্গাস বিক্রি করছি ১১০টায় সেটি বিক্রি করছে কেজি প্রতি ১৬০-১৮০টাকায়। মূলত ন্যায্যমূল্য পাওয়া আমাদের জন্যে কঠিন হয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষ কিন্তু কোনো ভাবেই কম দামে মাছ কিনতে পারছে না। তারা অন্যান্য সময়ের মতো স্বাভাবিক দামেই মাছ কিনে খাচ্ছে। হয়তো করোনার কারণে খাওয়া কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে।
অপরদিকে খুচরা মাছ বিক্রিতেরা বলছে, আড়ৎ থেকে মাছ কিনলে আড়ৎদারি দিতে হয় ১০পার্সেন্ট। তারপর আমাদের লাভ করতে হয়। এখন মাছ বিক্রিও হয় কম। আগে প্রতিদিন ১শ কেজি মাছ বিক্রি করতে পারলেও এখন তা নেমে এসেছে ৫০-৬০ কেজিতে।
চাঁদপুরে ২৮৮ বানিজ্যিক ছোট বড় মৎস্য খামার রয়েছে। আর পুকুর রয়েছে ৪৯হাজার ৪শ ৬৭টি। এসব খামারে কাজ করছেন হাজার হাজার শ্রমিক। এসব শ্রমিকরা খামারে কাজ করেই চালায় জীবিকা। মালিকের র্দুদিন দেখে এসব শ্রমিকরাও হতাশ।
কচুয়া উপজেলা সহকারী মৎস কর্মকর্তা মোঃ জহিরুল ইসলাম জানান, মৎস্য বিভাগ বলছে, করোনা সময়ে মুঠোফোনে সার্বিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। মাছের খাবার যোগান ঠিক রাখতে ফিড কোম্পানীগুলোকে অনুরোধ করা হচ্ছে। আর এ সময়ে চাষিদের ধর্য্য ধরতে বললেন এ মৎস্য কর্মকর্তা।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী জানান, মূলত চাষীরা বেশ সমস্যায় আছে তা আমাদের জানা নেই। তবে তাদের চাষকৃত মাছের জন্যে যেন খাবার সংকট না হয় সে জন্যে জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করা হয়েছে। ফিডের গাড়ি যেন নিয়মিত চলাচল করতে পারে সে বিষয়ে আইশৃংখলা বাহিনী তাদের সহযোগিতা করছে।
মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে, চাঁদপুরে ৪৯হাজার ৪শ ৬৭টি পুকুর ও ২৮৮বানিজ্যিক খামার আছে। এসাথে সম্পৃক্ত ৩১হাজার ১৫জন মৎস্যচাষী। এসব খামার ও পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতির মোট মাছ উৎপাদন হয় প্রায় ৩০হাজার ৩শ ৮৩ টন ৮শ ১০কেজি।