ইকবাল বাহার:
সরকারি নির্দেশনা অনুসারে তৃণমূল পর্যায়ের দরিদ্র ও অসহায় সাধারণ মানুষের নানাবিধ সমস্যা শুনে তা সমাধানের জন্য চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে নিয়মিত সাপ্তাহিক গণশুনানী কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। জেলার বিভিন্ন প্রান্তের দরিদ্র অসহায় মানুষ তাদের অভাব অভিযোগ ও সমস্যার কথা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ফন্ট ডেস্কে আবেদনের জেলা প্রশাসকের কাছে তুলে ধরেন। প্রতি বুধবার আবেদনকারীদের সমস্যাগুলো মনোযোগ সহকারে শুনেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ এবং সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তারই প্রেক্ষিতে গত ৬ মাসে চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের ২৪টি গণশুনানী অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত শুনানিতে মোট ৮শ ৩৯ জন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সমস্যা সমাধান করেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।
সপ্তাহের প্রতি বুধবার অসংখ্য নারী ও পুরুষ বিধবা ও বয়স্ক ভাতা, চিকিৎসার জন্য অনুদান, আর্থিক সাহায্য, ঘরের জন্য আবেদন, জমি সংক্রান্ত সমস্যা, পারিবারিক সমস্যা, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও বই কেনার জন্য সাহায্য প্রার্থনাসহ নানাবিধ সমস্যা নিয়ে ছুটে আসছেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাদের আবেদনপত্রগুলো সদয় বিবেচনার জন্য নিবন্ধন করেন। পরে সাক্ষাৎকারে জেলা প্রশাসক সবার সমস্যা মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং তাৎক্ষণিক কিছু সমস্যার সমাধান করেন। কিছু সমস্যা সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে প্রেরণ করেন।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, গত জানুয়ারি মাসে ১শ ৫৯ জনের সেবা প্রত্যশীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ১শ ৫৫ জনের অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারী মাসে ১শ ৫০ জনের সেবা প্রত্যশীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ১শ ৪৭ জনের অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে। মার্চ মাসে ১শ ৩৯ জনের আবেদনের প্রেক্ষিতে ১শ ৩৪ জনের অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে। এপ্রিল মাসে ১শ ৩৯ জনের সেবা প্রত্যশীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ১শ ৩৫ জনের অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে। মে মাসে ১শ ১২৫ জনের সেবা প্রত্যশীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ১শ ৫৫ জনের অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে। সর্বশেষ জুন মাসে ১শ ৪৭ জনের সেবা প্রত্যশীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ১শ ৪৪ জনের অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে।
এছাড়াও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ডিআরও শাখা থেকে জানা যায়, গত ৩০ মে পর্যন্ত আর্থিকভাবে অসচ্ছল ২৪ জনকে চিকিৎসা সেবার প্রদানের লক্ষে সমাজসেবা কার্যালয়ে প্রেরন করা হয়। পাশাপাশি ৭১ জনকে ২ হাজার নগদ অর্থ প্রদানের মাধ্যমে মোট ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও অসহায় হতদরিদ্র ১৬৮ পরিবারকে ১ বান টিন ও নগদ ৩ হাজার করে মোট ৫ লাখ ৪ হাজার টাকা প্রদান করেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। গৃহ নির্মাণ করার জন্য ৪৪ টি পরিবারেরকে ৫৭ বানটিন বিতরণ করেন। এছাড়াও ৮০ টি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের অনুকূলে ৫ হাজার ৩শ ৫২ পিছ কিম্বল বিতরণ করেন।
উল্লেখ্য, সরকারি তহবিল ছাড়াও জেলা প্রশাসকের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ও প্রায়দিনই দান করে যাচ্ছেন। পূর্বে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গণশুনানীর লিফলেট টাঙ্গানো হলেও এভাবে প্রতি সপ্তাহে ধারাবাহিক নিয়ম অনুযায়ী গণশুনানী চাঁদপুরের জেলা প্রশাসনের ইতিহাসে কখনও দেখা যায়নি। অতীতের যেকোনো জেলা প্রশাসকের তুলনায় বর্তমান জেলা প্রশাসক এই গণশুনানিকে খুবই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেন। যা গত ছয় মাসের তথ্য উপাত্তের মাধ্যমে সহজেই বুঝা যায়। প্রথমে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারী মাসে জেলা প্রশাসকের অস্থায়ী কার্যালয়ে গণশুনানি শুরু করেন। এরপর জেলা প্রশাসকের নিজ কার্যালয়ে এর কার্যক্রম চালু হয়ে এখনো চলামান আছে। জেলার সমস্যাগ্রস্ত মানুষ এই গণশুনানির মাধ্যমে ব্যাপক উপকৃত হচ্ছেন। আর এতে জেলা প্রান্তিক মানুষের বিভিন্ন সমস্যার লাগব হয় বিভিন্ন সমস্যার জন্য মানুষকে আর কাঠগড়ায় পড়তে হয় না। ইতোমধ্যে অসহায় মানুষের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে এই গণশুনানী।
এছাড়াও জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ প্রায়ই গণশুনানীতে বলেন, আপনাদের আদালতের প্রতি আস্থা রাখতে হবে। যে ধরনের অভিযোগ মামলা আদালতে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে সেই ব্যাপারে এই গণশুনানিতে কিছু করার নাই। সেইসব মামলার সমাধান আদালতের মাধ্যমেই করা হবে। প্রায়ই প্রতি সপ্তাহে উপস্থিত অভিযোগকারীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা সবাই রাষ্ট্রের নিয়ম কারণ মেনে চলবেন। এরপরও আপনাদের যদি কোন সমস্যা থাকে তাহলে আপনারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অভিযোগ করতে পারেন। এসব অভিযোগের পরিপেক্ষিতে আমরা ব্যবস্থা নিবো। আপনাদের অভিযোগ জমা হলে প্রতি বুধবার এ গণশুনানিতে অংশগ্রহণ করবেন।
গণশুনানীর বিষয়ে অভিব্যাক্তি প্রকাশে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ দৈনিক শপথ-কে বলেন, সেবা নিতে আসা মানুষদের মধ্যে বিশেষ করে আমাদের সরকারি কোন দপ্তরের বিষয়ে সেবা নিতে গিয়ে যে সমস্যা হয় সে বিষয়ে যদি তাদের কোন অভিযোগ থাকে তা সমাধানের চেষ্টা করি। আর যারা সাহায্যের জন্য আসে আমি তাদের আবেদন গুলো গ্রহণ করি। পাশাপাশি আবেদনগুলো পরিক্ষা নিরিক্ষা সহ তাদেরকে সাহায্যের চেষ্টা করি। এখানে যোগদানের পর থেকেই আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি যে আমার কাছে যারাই সাহায্যের জন্য আসবে তা অফিসিয়াল কাজেই হোক বা সাহায্যের কাজেই হোক তাদের সঠিক সেবা দেয়ার চেষ্টা করি। আমার কাছ থেকে যেনো মানুষ সেবা পায় তার জন্য আমি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চেষ্টা করি।