কাদের পলাশ:
কনিকা নামের বালিকার খেলা করার সময় অর্থাৎ ১২বছর বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিলো। খেলাধূলা করার সময় কোলজুড়ে চলে আসে সন্তান। কিন্তু কিছুতেই স্বামীর সাথে বনিবনা হচ্ছিলো না। একসময় বাবার বাড়িতে ঠাঁই হলো। একসময় স্বামীর বাড়ি আর ফেরা হয়নি। এক ছেলে সন্তানের মা হয়ে পড়েছেন বিপাকে। জীবন এখন তার কাছে কঠিন এক বাস্তবতা।
কনিকা দৈনিক শপথকে বলেন, বলতে গেলে আমার বাল্য বিয়ে হয়েছে। গ্রামের দিকে যা হয় আরকি। স্বামী বিদেশ ফেরত ছিলো। যথেষ্ট বয়সও ছিলো। পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়েছে। প্রথম দিকে সব কিছু ঠিকঠাক মোটামুটি ভালোই চলছিলো। আমার বুঝ ছিলো না। তারপরেও যতদিন যায় ততোই আমি বুঝতে পারছিলাম। যদিও বাস্তবতা কম বুঝতাম। যত দিন গেলো বুঝতে থাকলাম তিনি (স্বামী) সংসারি না। আমি যে তার বউ তা তিনি যেন বুঝেন না। আমার যে একটু যত্ম নেয়া দরকার, মন বুঝার দরকার। কোনো ভাবেই সে বুঝে না। সবশেষ সন্তান এলো তার জন্যেও ভরণপোষণ দেয় না। একপর্যায়ে বাবার বাড়ি চলে আসি। তারপর থেকে আলাদা হয়ে যাই।
মনিকার বয়সও যখন ১২। তখনই বিয়ে যায় তার। কোল জুড়ে সন্তন এলেও স্বামীর সাথে খাপ খাওয়াতে পারছিলেন না। এভাবে কেটে যায় ৫বছর। তারপর হয়ে গেছে বিচ্ছেদ। এখন নিজেদের মুক্ত মনে হলেও সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন সে।
মনিকা বলেন, ও আমার সাথে ঠিক মতো কথা বলতো না। কথা বললে সে ক্ষেপে যেতো। আমি ভালো কথা বললে তার কাছে তা ভালো লাগতো না। আমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার শুরু করে। পরে আমি আমার বাবার বাড়ি চলে আসি। এখানে সাত আট মাস থাকার পর বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এখন আলহামদুলিল্লাহ, নিজেকে অনেক মুক্ত মনে হয়। যদি বাচ্চাটার জন্যে অনেক চিন্তা লাগে।
আট বছরের সংসার ভেঙেছে ফাইজার (ছদ্মনাম) নামের এক যুবকের। পরিবারের সাথে মানিয়ে নিতে পারছিলো না স্ত্রী। তাই হলো ছাড়াছাড়ি। কিন্তু এমনটা কারো জন্যেই প্রত্যাশিত নয় বলে আপসোস করলো এ যুবক।
ফাইজার বলেন, আসলে সেক্রিপ্রাইস এবং কম্প্রোমাইজ না থাকলে সংসার টেকানো সত্যিই কঠিন। এছাড়া নিশ্চয় নিজেকে একটি সংসারের সাথে মানিয়ে নেয়া দরকার আছে। আপনি মানিয়ে না নিতে পারলে কোনো ভাবেই ভালো থাকা সম্ভব নয়। তবে কোনো মানুষই চায় না তার সংসার ভেঙে যাক। একটা সংসার বিচ্ছিন্ন হোক।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঠুনকো বিষয় নিয়ে ভাঙছে সংসার। কোন ভাবেই পক্ষদ্বয়কে বুঝানো যায় না বলে জানালেন সিনিয়র আইনজীবী এড. মোঃ মহসীন খান। তিনি বলেন, মামলাগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অধিকাংশ অভিযোগগুলো ঠুনকো। এসব সমস্যা সামাজিক ভাবে বসে সমাধান করা যায়। দেখা যায় এক্ষেত্রে কেউ কাউকে ছাড় দিতে চায় না। এটার মূল কারণ সামাজিক যোগাযোগ অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে আমরা বিকল্প সম্পর্কে জড়িয়ে যাচ্ছি। এটি একটি অবক্ষয়।
বর্তমান সময়ে ছাড় দেয়ার মানসিকতা কমে গেছে। তাছাড়া নারী পুরুষ সবাই নিজের অধিকার সচেতন। অনেক সময় ভালো পরামর্শদাতা না থাকাতেও হচ্ছে বিচ্ছেদ। এমনটাই জানালেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ। তিনি বলেন, মূলত আমরা এখন সবাই অধিকার সচেতন হয়ে গেছে। আমরা এখন সবাই বুঝি আমাদের প্রাপ্য কতোটুকু। আমার অধিকার কতটুকু, স্বামীর যেমনি তার পরিবারের প্রতি অধিকার আছে, তেমনি স্ত্রীরও তার হাজবেন্ডের প্রতি অধিকার আছে। এক্ষেত্রে দুপক্ষের বুঝাপড়ার ঘাটতি হলেই সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়। তিনি আরো বলেন, এখন যেহেত আমরা সবাই শিক্ষিত, সবাই অধিকার সচেতন এটি মূলত সম্পর্কে টানোপোড়েনের অন্তরায়।
চলতি বছরের ফেব্রæয়ারি মাস পর্যন্ত চাঁদপুর আদালেতে বর্তমানে নারী নির্যাতন ও যৌতুক মামলা চলমান রয়েছে ১৮০৩টি, শিশু নির্যাতন মামলা রয়েছে ২৫৪টি, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা রয়েছে ৩২২টি। এসব মামলার বেশির ভাগেরই সমাপ্তি ঘটে বিচার নয় সমঝোতা অর্থাৎ তালাকের মাধ্যমে। (শেষ পর্ব পড়তে চোখ রাখুন দৈনিক শপথ-এ)