কাদের পলাশ:
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অবাধ ব্যবহার, ছাড় না দেওয়ার প্রবণতা এবং স্বামী-স্ত্রীর অবস্থানগত দূরত্বে সংসারে তৈরি হচ্ছে টানাপোড়ন। পারিবারিক বিরোধ শেষ পর্যন্ত গড়ায় ডিভোর্সে। সরকারি হিসেবে চাঁদপুরে গত চার বছরে ১২ হাজার ৯শ ৮০টি ডিভোর্স হয়েছে। এ হিসেবে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৯টি সংসার ভাঙে। অপরদিকে মুসলিম বিবাহ নিবন্ধন হয়েছে ৫৬হাজার ১শ ১৬টি। বিয়ে হয়ে প্রতিদিন ৩৮টির মতো।
চাঁদপুর সরকারি কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের প্রধান মোঃ ইয়াহ্-হিয়া খান বলেন, পরিবার হচ্ছে পৃথিবীর প্রাচীনতম সংগঠন। পরিবারের সদস্যরা যার যা দায়িত্ব কর্তব্য তা যদি ঠিক মতো পালন করতে ব্যর্থ হয় তখনি সংসারে তৈরি হয় টানাপোড়েন। অর্থাৎ বিশৃংখলা তৈরি হয়। এ বিশৃংখলা হতে পারে স্বামী স্ত্রীর মাঝে, সন্তানের সাথে পিতা-মাতার সাথে। এ পারিবারিক সমস্যা এখন সামাজিক রূপ নিয়েছে। এতে কিন্তু নানান সমস্যা তৈরি হয়। শিশু বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয়, শিশু সামাজিকরণে অসুবিধা হয়। এমন একটা পর্যায় পড়ে যখন স্বামী স্ত্রী পৃথক হয়ে যায়। স্বামী স্ত্রী একই ঘরে থাকে কিন্তু দুইজন আলাদা বিছানায়। কখনো কখনো এমনও হতে পারে একজন ঘরে ছেড়ে চলে যায়। শেষ পর্যন্ত সম্পর্ক আর ঠিক রাখা সম্ভব হয় না।
চাঁদপুর জেলা রেজিস্ট্রার অফিস সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে বিয়ে নিবন্ধন হয় ১২হাজার ৯শ ৫৭টি, আর তালাক হয় ৩হাজার ১শ ৩৬টি, ২০১৯ সালে বিয়ে ১৪হাজার ৬শ ৬৭টি, আর তালাক হয় ৩হাজার ১শ ১৮টি, ২০২০ সালে বিয়ে হয় ১২হাজার ৮শ ৪৪টিআর তালাক হয় ৩হাজার ১শ ১৮টি, ২০২১ সালে বিয়ে হয় ১৫হাজার ৬শ ৪৮টি আর তালাক হয় ৩হাজার ৪শ ৭৬টি।
যদিও পারিবারিক কলহের অন্তরায় হিসেবে আরো কিছু অনুষঙ্গ যোগ হয়েছে। বিশেষ করে মোবাইল আসক্তি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, পরকীয়া এবং অপরটি হলো স্বামী স্ত্রীর মাঝে অবস্থান গত দূরত্ব। যেমনটি জানালেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ। তিনি বলেন, চাঁদপুরের প্রায় ৩০ভাগ লোক প্রবাসে থাকেন। অনেকেই তাদের রোজগারের আয় তাদের স্ত্রীর কাছে পাঠায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের বাবা মায়ের কাছে পাঠায়। সে ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, যারা বাবা মায়ের কাছে টাকা-পয়সা পাঠাচ্ছে স্ত্রীদের কাছে দিচ্ছে সে ধরনের অভিযোগ গুলোও আমরা পাই। আমরা যেটা করি, আমরা তাদের অভিযোগগুলো শুনি। উদ্যোগ নেই সমস্যা সমাধানের জন্যে। কিছুকিছু ক্ষেত্রে থানার ইনচার্জকে দায়িত্ব দেই। অনেক সময় সহকারী পুলিশ সুপারকেও সম্পৃক্ত করে বিষয়গুলো সমাধানের চেষ্টা করি। যদি দুইপক্ষ মতের মিল করা যায় তবে তাদের আমরা একত্রিত করে দেই। আর যদি দুই পক্ষই যদি নিজেদের অবস্থান থেকে অনড় থাকে তখন তাদের পারিবারিক আদালতে যাবার পরামর্শ দেই।
চাঁদপুর জেলা রেজিস্ট্রার মুশতাক আহমেদ বলেন, মানুষের ভ্যারাইটি নির্বাচনের সুযোগ করে দিয়েছে অবাধ যোগাযোগ মাধ্যম। যেহেতু সুযোগ হয়ে গেছে সেহেতু সে বেটার অপশন গ্রহণ করতেই পারে।
এসব পারিবারিক কলহ নিরোধে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশ বিভাগও কাজ করে যাচ্ছে। দু’পক্ষকে বুঝাতে সক্ষম হলে সমস্যা নিরসন হয়। কিন্তু যখন কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ হয় তখনই তৈরি হয় জটিলতা।
এসব পারিবারিক কলহ নিরোধে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশ বিভাগও কাজ করে যাচ্ছে। দু’পক্ষকে বুঝাতে সক্ষম হলে সমস্যা নিরসন হয়। কিন্তু যখন কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ হয় তখনই তৈরি হয় জটিলতা। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, আমি প্রতি বুধবার গণশুনানি করি। পারিবারিক কোনো বিরোধ এলে সংশ্লিষ্ট থানা, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদে পাঠিয়ে সমাধানের চেষ্টা করা হয়। আর মামলা বিষয়ক হলে তার জন্যে আদালতের সরানাপন্ন হতে পরামর্শ দেই।