নজরুল ইসলাম আতিক
দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থাকার পর অবশেষে স্বপ্নভঙ্গ হলো চাঁদপুরের প্রায় ২ হাজার গ্যাস সংযোগ প্রত্যাশী গ্রাহকের। বুক ভরা আশা নিয়ে সবাই এতদিন স্বপ্ন দেখেছিলেন হয়তো পাবেন গ্যাস সংযোগ। কিন্তু সে স্বপ্ন আর পূরণ হওয়ার সুযোগ রইলো না। অথচ গ্যাস সংযোগ পাবেন এমন আশা অনেকেই বহুতল ভবন করেছেন শহর বা শহরতলী এলাকায়। বিশেষ করে ভাড়া দিতে যারা বহুতল ভবন করেছেন তারা পড়েছেন মানসিক দ্বন্দে। যদিও এজন্যে বাড়ি মালিকদের কোনো সমস্যা হবে না। সব সমস্যা গিয়ে পড়বে ভাড়াটিয়াদের ঘাড়ে। কারণ নিয়মিত সিলেন্ডার নেয়া বা উঠানো নামানো কিংবা যে কোনো সময় গ্যাস শেষ হলেও যে বিড়ম্বনা সব কিছুই থাকবে ভাড়াটিয়াদের ঘাড়ে। সর্বপরি প্রাকৃতিক গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় নিবন্ধিত গ্রাহকদের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে। কারণ ইতোমধ্যে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে আর কোনো আবাসিক গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে না। যদিও ডিমান্ড নোটের বিপোরীতে জমাকৃত টাকা ফেরত পাবেন গ্রাহকরা। কিন্তু সে টাকা কবে পাবেন তা নিয়েও রয়েছে অশ্চিয়তা।
অনেকে মনে করেন, এলপিজি গ্যাস কিছুটা ব্যায়বহুল হওয়ায় অনেকেরই অনাগ্রহ প্রকাশ করেন এই গ্যাস ব্যবহারে। তাছাড়া সিলিন্ডার ব্যবহারের নিরপত্তার বিষয় তো রয়েছেই। করোনা মহামারীর এই দুর্যোগময় সময়ে যেখানে মানুষ দুবেলা খেতে কষ্ট হয় এসময় সরকারের এমন সিদ্ধান্তে কিছুটা হতাশ সাধারণ মানুষ। এর আগে ২০১৬ সালের জুন মাসে অস্থায়ীভাবে বাসাবাড়িতে প্রাকৃতিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো সরকার। সবশেষ ২০১৮ সালে ডিমান্ড ইস্যুসহ টাকা জমা নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলো সরকার। এবং তারপর থেকেই গ্রাহকদের অপেক্ষার পালা শুরু হয়। দীর্ঘদিন সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিলেন তারা। যদিও গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পনীর অফিসগুলো ঘিরে ঠিকাদার এবং একটি দালাল চক্র সংযোগ দেয়ার কথা বলে গ্রাহকদের কাছ থেকে উপড়ি অর্থ পকেটে ঢুকিয়েছে। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো দালালের পরামর্শে অনেক বাড়িওয়ালা বাড়িতে অবৈধ সংযোগ নিয়েছে। যদিও পরে গ্যাস কোম্পানীর নিয়মিত অভিযানে জারিমানার আওতাভূক্ত হয়েছেন। এছাড়াও গ্যাসে প্রাপ্তিতে ডিমান্ড নোটের সরকার নির্ধারিত টাকার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা নিয়েছেন অনেক ঠিকাদার বা দালাল এমনও অভিযোগ রয়েছে। সবশেষ গ্রাহকদের পাশাপাশি সুবিধাভোগী এ চক্রও হতাশ। অবশ্য কোনো কোনো ঠিকাদার দাবি করেন এখনো কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে গ্যাস সংযোগ দেয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে মোটা অংকের টাকা খরচ করতে হবে। সরকারি নির্দেশনাও তাদের কাছে যেন হাতে তুড়ি। অথচ গত ২৪ ডিসেম্বর সরকারের পক্ষ থেকে স্থায়ীভাবে আবাসিক প্রাকৃতিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হয়। সে মোতাবেক সরকারের জ্বালানি বিভাগ গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোকে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার আদেশও দিয়েছে।
চাঁদপুর বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড আঞ্চলিক কার্যালয়ের দেয়া তথ্য মতে, ডিমান্ড নোট ইস্যু হওয়া এবং টাকা জমা দিয়েছে এমন গ্রাহকের সংখ্যা ১হাজার ৯শ ৬০ জন। আর ডিমান্ড নোট ইসু হয়েছে কিন্তু গ্রাহক টাকা জমা দেয়নি এমন গ্রাহকের সংখ্যা ৫০ জন। ডিমান্ড নোট ইস্যু হয়েছে এবং টাকা জমা দিয়েছে এমন গ্রাহকদের মধ্যে চাঁদপুর সদরে ১ হাজার ১শ ২৫ জন মতলবে ১শ ৬৬ জন হাজীগঞ্জ ৬শ ১৩ জন এবং শাহরাস্তিতে ৫৬ জন। এছাড়া ডিমান্ড নোট ইস্যু হয়েছে কিন্তু টাকা জমা দেয়নি এমন গ্রাহকের মধ্যে চাঁদপুর সদরে ৩৭ জন, মতলবে ২ জন, হাজীগঞ্জে ৫ জন এবং শাহরাস্তিতে ৬ জন। যদিও অনেকেই মনে করছেন, নতুন সংযোগের জন্য ডিমান্ড নোট ইস্যু হওয়া এবং প্রয়োজনীয় ফি জমা দেওয়া গ্রাহকের সংখ্যা বৈধ এবং অবৈধভাবে প্রায় ৫০ হাজার।
গ্রাহকদের মধ্যে অনেকের দাবি বিতরণ কোম্পানিগুলোর স্থানীয় কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের যোগসাজশে বাসাবাড়িতে অবৈধভাবে গ্যাসের সংযোগ দিয়েছেন। আবাসিক গ্যাস সংযোগ না দেয়ার সিদ্ধান্তের ফলে দুই শ্রেণির গ্রাহক সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়বেন বলে মনে করছেন অনেকে। যার একটি হচ্ছে শহরের বাড়ি ও ফ্ল্যাটের মালিকরা। কারণ ইতিমধ্যেই অনেকে বিভিন্ন ফ্ল্যাট গ্যাস সংযোগের দেওয়ার চুক্তিতে বিক্রি করেছেন যা এখন অনেকের জন্য চুক্তির সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। তাছাড়া সংযোগ না পেলে ফ্ল্যাটের বিক্রি কমে যাবে বলে মনে করন অনেকে। আরেকটি হলো শহরে বসবাসকারী সাধারণ মানুষ।
সরকার স্থায়ীভাবে গ্যাস সংযোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্তে ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করেছেন। গ্রাহকরা দাবি করছেন সরকারের এমন সিদ্ধান্তের পেছনে গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীরাই দায়ী কেননা তারা বিভিন্নজনকে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়ে সরকারি এই সম্পদের অপচয় করায় সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির চাঁদপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মোঃ মুহিবুর রহমান জানান, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি গ্রাহকের জমাকৃত টাকা কবে নাগাদ ফেরত দেয়া হবে। তবে এ বিষয়ে এখনো আমাদেরকে মন্ত্রণালয় থেকে কোন দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা গ্রাহকের টাকা ফেরত দেব।