স্টাফ রিপোর্টার:
চাঁদদপুর সদর উপজেলার ১৪নম্বর রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের লক্ষ্মীরচর গ্রামে লোকমান গাজী হত্যা মামলার আসামীরা ২০দিনেও আটক হয়নি। এনিয়ে মৃত লোকমান গাজীর পরিবার উৎকণ্ঠা আর আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। যদিও গত ০৩জুন চাঁদপুর সদর মডেল থানায় মামলা হওয়ার পর থেকে আসামীরা গা ঢাকা দিয়েছে। অপরদিকে মিথ্যা ও হয়রানীমূলক মামলা দিয়ে হত্যা মামলার বাদীপক্ষকে ঘায়ের করার অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে আসামী পক্ষ। ইতোমধ্যে পাল্টা মামলা হিসেবে গত বুধবার ১৭জুন চাঁদপুর সদর মডেল থানায় একটি লুটপাটের অভিযোগ এনে মামলা দিয়েছে আসামী লিটনের স্ত্রী আসমা বেগম। অথচ লিটন লোকমান হত্যা মামলার অন্যতম আসামী। অপরদিকে এ হত্যা মামলাটিকে ভিন্নদিকে প্রবাহিত করার জন্যে গতকাল সোমবার একটি গণধর্ষণের অভিযোগ দিয়েছে অপর এক আসামী আব্বাস বকাউল স্ত্রী ডালিয়া বেগম। চাঁদপুর মডেল থানায় অভিযোগ দিয়েছে বলে স্বীকার করেছে থানার ওসি। এভাবেই লোকমান গাজী হত্যা মামলার আসামী পক্ষ একের পর এক মামলা দায়ের করছে। এতে চরম মানসিক হয়রানীর শিকার হচ্ছে বাদী পক্ষ।
পারিবারিক ভাবে জানা যায়, বিবাহ বিচ্ছেদ আর ফেসবুকে লেখাকে কেন্দ্র ২৮মে বিকাল চারটায় রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের লক্ষ্মীরচর গ্রামে সংঘর্ষ, হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। লক্ষ্মীরচর গাজী বাড়ি এবং বকাউল বাড়ির লোকজনের মধ্য এই সংঘর্ষ হয়। এঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়। আহতদের মধ্যে লোকমান গাজী গুরুতর আহত হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় লোকমান গাজীকে ঢাকার সরোর্য়াদী হাসপাতালে ৯দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। অবশ্য গত ৩জুন লোকমান গাজীর ভাতিজা সানাউল্লাহ গাজী বাদী হয়ে চাঁদপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করে। মামলায় উল্লেখিত আসামীরা হলেন, দুলাল মাজি, নুর মোহাম্মদ বকাউল, সোলেমান বকাউল, হানিফ বকাউল, ইউসুফ বকাউল, আইয়ুব আলী বকাউল, মনসুর বকাউল, সামেদ মাঝি, নরুল্লাহ বকাউল, গণি বকাউল, দেলোয়ার বকাউল, লিটন বকাউল, আবদুল হাই বকাউল, আফজাল বকাউল, সিদ্দিক আলী প্রধানীয়াসহ অজ্ঞাতনামা ১০-১৫জন। এরপর থেকে আসামীরাতো আটকতো হয়নি উল্টো একের পর এক মামলার শিকার হচ্ছে হত্যা মামলার বাদী ও সাক্ষীরা। এরমধ্যে ফয়াসল গাজী ঢাকায় ব্যবসা করেন। অথচ ফয়সাল গত ৬জুন মৃত দাদা ও দাদীকে দাফন করে আবার ঢাকায় চলে যায়। এর মাঝে ফয়সাল আর ঢাকা থেকে গ্রামে আসেনি।
লোকমান গাজী হত্যা মামলার বাদী সানাউল্লাহ মিজি কয়েকজন সাক্ষি জানান, মামলার সাক্ষিদের ঘায়েল করতে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। যেন হত্যা মামলার তদন্ত বা সঠিক বিচার না হতে পারে। এমতাবস্থায় আমরা প্রশাসনের কাছে সঠিক তদন্তের দাবি জানাই।
এ বিষয়ে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হযরত আলী বেপারী বলেন, গত ১ মাস ধরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় বিশৃংখলা বিরাজ করছে। বিষয়টি সুরাহার জন্যে বহুবার উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু কেউ কোনো কথা শুনছেন না। যে কারণে বিষয়টি নিয়ে একের পর এক ঘটনার সুত্রপাত হচ্ছে। এ নিয়ে এলাকার চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। কিন্তু হত্যা মামলাকে কেন্দ্র করে একটি কুচক্রি মহল অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে গণধর্ষণের ঘটনায় যাদের নাম প্রাথমিক ভাবে লোকমুখে এসেছে। তাদের মধ্যে ফয়সাল, রুহুল আমিন মিজি, দেলোয়ার মিজি ধর্ষণ সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেনি অভিযোগীকারী ডালিয়া বেগম। সর্বপরি আমি চাই প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করুক।
চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ নাসিম উদ্দিন জানান, গণধর্ষণের অভিযোগ পেয়েছি। ওই নারীর ভিসেরা ও ডিএনএ টেস্ট করার প্রক্রিয়া চলছে। আর লোকমান হত্যা মামলার তদন্ত চলছে। আসামী আটক করার সম্ভব হয়নি বলেও জানান তিনি।