নবায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হাসপাতালগুলো কার্যক্রম পরিচালনা করছে: সিভিল সার্জন।
চাঁদপুর জেলায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লাইসেন্স রয়েছে মাত্র ৪৫ টি হাসপাতালের। বাকী হাসপাতালগুলো শুধুমাত্র নবায়ন প্রক্রিয়ায় মধ্যে থাকায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে। এক্ষেত্রে বিশেষ কোনো পদক্ষেপও নিতে পারছে না সংশ্লিষ্ট দপ্তর। জেলা সিভিল সার্জন বলছে, যেহেতু চাঁদপুরের হাসপাতালগুলো আগে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তাই তাদের লাইসেন্স নবায়ন প্রক্রিয়াধীন। এর মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষ যেসকল কাগজপত্র নবায়ন আবেদনের সাথে দেয়ার কথা এর মধ্যে কারো কারো নারকোটিক্স লাইসেন্স নেই। তাই তাই তারা নবায়নকৃত লাইসেন্স পেতেও বেগ পেতে হবে। কারণ প্রয়োজনীয় কোনো একটি কাগজ না থাকলেই লাইসেন্স নবায়ন জটিল হয়ে পড়ে।
চাঁদপুর মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, যেসব হাসপাতালের নারকোটিক্স লাইসেন্স নবায়ন করা আছে এরমধ্যে চাঁদপুর সদরে ১৮টি হাসপাতাল, ফরিদগঞ্জে ০৪টি হাসপাতাল, মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিনে ০৪টি হাসপাতাল, কচুয়া ০৫ টি হাসপাতাল , শাহরাস্তি ০৩ টি ও হাজীগঞ্জের ১১টি ।
চাঁদপুর সদরে ১৮ টি হাসপাতালের মধ্যে রয়েছে জেলা সদর হাসপাতাল, চাঁদপুর সেন্টাল হাসপাতাল, মিডল্যান্ড হাসপাতাল, আল মানার হাসপাতাল, পদ্মা হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ,কর্ণফুলী হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কাজি লজ্জাতুন্নেছা মেমোরিয়াল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, চাঁদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতাল, প্রিমিয়ার হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মাজহারুল হক বি এন বি আই হসপিটাল, চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল, নাভানা হাসপাতাল, বায়োজিদ মেমোরিয়াল হাসপাতাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মুন হাসপাতাল, ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, চাঁদপুর সিটি হাসপাতাল, দি ইউনাইটেড হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও মা ও শিশু হাসপাতাল।
হাজীগঞ্জ : মেসাস শাহ মিরান এন্ড ডায়াগনস্টিক ল্যাব, ফয়েজ আহম্মেদ চৌধুরী মেমোরিয়াল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্স,ভি আই পি হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আরিয়ানা মেডিকেল সেন্টার, বিসমিল্লাহ জেনারেল হাসপাতাল, ইসলামিয়া মর্ডান হাসপাতাল, শুকরান হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার,পপুলার ল্যাব এন্ড জেনারেল হাসপাতাল, গোল্ডেন হাসপাতাল ট্রমা সেন্টার, মিডওয়ে মেডিকেল সেন্টার, হলিকেয় ডিজিটাল মেডিকেল সেন্টার।
ফরিদগঞ্জ:ঝরনা হাসপাতাল, ফরিদগঞ্জ ডায়াবেটিক সেন্টার এন্ড জেনারেল হাসপাতাল, সেন্ট্রাল হাসপাতাল ফরিদগঞ্জ ওআল-মদিনা হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক ইউনিট।
মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ :ফয়েজ আহমেদ চৌধুরী মেমোরিয়াল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্স,নারায়নপুর টাওয়ার হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার মতলব দক্ষিন,মতলব মা ও শিশু হাসপাতাল মতলব ও মারিয়া জেনারেল হাসপাতাল মতলব উত্তর। কচুয়ায় :ফয়জুন্নেছা দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র হাসপাতাল হাশিমপুর, বেসিক এইড এন্ড হসপিটাল, মেডিলাইফ হাসপাতাল,মর্ডান হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও কচুয়া কচুয়া টম এন্ড জেনারেল হসপিটাল। শাহরাস্তি: জেনারেল হাসপাতাল, শাহরাস্তি মেমোরিয়াল হাসপাতাল ও বেরনাইয়া জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
হাসপাতালের লাইসেন্স পেতে হলে হাসপাতালের মালিকের জাতীয় পরিচয়পত্র, হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন (নতুন প্রতিষ্ঠান) বা আয়কর প্রত্যয়নপত্র (পুরোনো প্রতিষ্ঠান), ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নম্বর, পরিবেশ ছাড়পত্র, মাদকের ছাড়পত্র, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (ক্ষতিকর ও অক্ষতিকর) চুক্তিপত্র ও চালানের স্ক্যান কপি অনলাইনে জমা দিতে হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তার হাসপাতাল পরিদর্শনকালে এসব নিরীক্ষা করার নিয়ম রয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা, সেবা প্রদানকারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, কর্তব্যরত চিকিৎসকের নাম ও কর্তব্যরত নার্সদের নাম-ঠিকানা, ছবি, বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন, বিশেষজ্ঞ সনদ, নিয়োগ ও যোগদান বা সম্মতিপত্র জমা দিতে হয়। সাহায্যকারীদের তালিকা, অস্ত্রোপচার ও যন্ত্রপাতির তালিকাও হাসপাতালের প্রধানের স্বাক্ষরসহ জমা দিতে হয়।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের নিবন্ধন ফি এবং নিবন্ধন নবায়ন ফি পাঁচ হাজার থেকে বাড়িয়ে সর্বনিম্ন ৫০ হাজার ও সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। অপরদিকে, বিভাগীয় ও সিটি করপোরেশন এলাকায় ১০ থেকে ৫০ শয্যার বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের নবায়ন ফি ৫০ হাজার টাকা, ৫১ থেকে ১০০ শয্যার জন্য এক লাখ টাকা, ১০০ থেকে ১৪৯ শয্যার জন্য দেড় লাখ টাকা, আর ২৫০ শয্যার জন্য নির্ধারণ হয় দুই লাখ টাকা।
একইভাবে একই শয্যা সংখ্যা ধরে জেলা হাসপাতালগুলোর জন্য ধরা হয় ৪০ হাজার টাকা, ৭৫ হাজার টাকা ও এক লাখ টাকা। উপজেলা পর্যায়ে একই শয্যা সংখ্যা ধরে ফি নির্ধারণ হয় ২৫ হাজার, ৫০ হাজার, ৭৫ হাজার ও এক লাখ টাকা করে। তবে এসব হাসপাতালে কমপক্ষে তিন জন এমবিবিএস চিকিৎসক, ছয় জন নার্স ও দুই জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকতে হয়। প্রতিটি শয্যার জন্য থাকতে হয় ৮০ বর্গফুট জায়গা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অপারেশন থিয়েটার, আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং নারকোটিকসের লাইসেন্স থাকতে হবে।
এরসঙ্গে আরও দরকার হবে ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন (টেক্স আইডেনটিফিকেশন নম্বর) ও বিআইএন (বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নম্বর), সঙ্গে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র। তবে শয্যা সংখ্যা বেশি হলে আনুপাতিক হারে জনবল থাকতে হবে। আবেদনের ভিত্তিতে অধিদফতরের টিম সরেজমিন পরিদর্শন করে লাইসেন্স দেবে।
চাঁদপুর মাদক অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক একে এম দিদারুল আলম বলেন, মাদক অধিদপ্তর চাঁদপুর স্বল্পসংখ্যক জনবল নিয়ে চাঁদপুর দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছে।বিশেষ করে যে সকল মা বোনেদের সন্তান প্রসব করার সময় হাসপাতালে বেদনানাশক ঔষধ ব্যবহার করার বিষয়টি তদারকি করছি। লাইসেন্সকৃত হাসপাতালে খুব সুন্দরভাবে এগুলো মেনে চলে। এসব ঔষধের যেন অপব্যবহার করতে না পারে সে দিকে আমাদের তীক্ষ্ম নজর রয়েছে। যেসকল হাসপাতালের লাইসেন্স নেই সে বিষয়ে আমাদের সিভিল সার্জন মহোদয়কে অবহিত করেছি সে বিষয় তিনি তদারকি করছেন। মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়া কোন হাসপাতালে অপারেশন কার্যক্রমের পরিচালনা করতে পারবেনা।
এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্ল্যাহ বলেন, নারকোটিক্স লাইসেন্স নেই বলে অনেকের আবেদন পেন্ডিং রয়েছে। কারণ প্রয়োজনীয় একটি কাগজ ছাড়াও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নবায়নকৃত লাইসেন্স পাবে না। এক্ষেত্রে আবেদন প্রক্রিয়ার কারণেই তারা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা চালিয়ে যেতে পারছে।
ইকবাল বাহার