এইচ. এম নিজাম:
চাঁদপুর শহরে নিজ বাসায় দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল্লাহ কোম্পানি (৭০)। তিনি শহীদ জাবেদ মুক্ত স্কাউটের সভাপতি ছিলেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় শহরের নতুন বাজারস্থ সফিনা বোর্ডিয়ের পার্শ্ববর্তী নিজ বাসায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল্লাহ চাঁদপুরে সর্বজন শ্রদ্ধেয় হেদায়েত উল্লাহ কোম্পানীর পুত্র। তারা ৪ ভাই ও ৩ বোন।
খবর পেয়ে চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আসিফ মহিউদ্দিন, মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ হাসপাতালে গিয়ে লাশ উদ্ধার করেন। পরে পুলিশ সদস্যরা নিহত রফিক উল্লাহর বাসায় যান। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তারা ওই বাসায় অবস্থান করছিলেন।
নিহতের ছোট ভাই মো. নাসিরউল্লাহ্ জানান, শনিবার মাগরিবের নামাজের পর বড় ভাইয়ের খুন হওয়ার খবর পাই। বাড়িতে গিয়ে দেখি আমাদের বাড়ির দোতলায় নিজ কক্ষে ভাইয়ের রক্তাক্ত মৃতদেহ পড়ে আছে। সাথে সাথে আমরা তাকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসি।
নিহতের ভাগ্নে সফিকুর রহমান খান জানান, শনিবার মাগরিবের নামাজ পড়ে আমরা নিচতলায় বাড়িতে ছিলাম। হঠাৎ উপর তলা থেকে রফিকুল্লাহ মামার কেয়ারটেকার মিরাজের ডাক চিৎকার শুনে উপরে আসি। কোয়াটার মিরাজ আমাদেরকে জানায়, রফিকুল্লাহ মামার কাছে বাবুরহাট এলাকার একটি ছেলে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতো। কিছুক্ষণ আগে তাকে মামার রুম থেকে বের হয়ে যেতে দেখেছে।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় জানান, আমরা প্রাথমিকভাবে খুন হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। নিহতের শরীরে ধারালো অস্ত্রের বেশ কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ বিষয়ে অধিকতর তদন্ত করে হত্যার প্রকৃত রহস্য জানা যাবে।
এদিকে তার মৃত্যুর খবর শুনেই হাসপাতালে ছুটে আসেন আ.লীগের কেন্দ্রিয় কমিটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, জেলা আ.লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, পৌর মেয়র অ্যাড. জিল্লুর রহমান জুয়েলসহ স্থানীয় শত শত নেতা-কর্মীরা।
লিডনিউজের ভতের এককলামে ।
শোকে কাতর দুলাল পাটওয়ারী
আসলে বলার ভাষা নাই। রফিকুল্লাহর বড় ভই আমার কমান্ডার ছিলেন। একসাথে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। একই নৌকাতে যখন ওনি শহীদ হয়েছেন আমিও একই নৌকাতে ছিলাম। অনেক ইতিহাস। রফিকুল্লাহ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। ওনার আচার আচরণ অনেক ভালো ছিলো। সবার সাথে সুসম্পর্ক ছিলো। ওনার সাথে কারো ব্যক্তিগত ঝগড়া আছে কীনা আমি জানি না। সবার সাথেই তিনি হাসিখুশি চলতেন। চাঁদপুরে এমন ঘটনা ঘটবে এটি কোনো ভাবেই প্রত্যাশিত না। কোনো দিনও এটি আমরা প্রত্যাশা করি না। আসলে কী হচ্ছে তা বুঝা দুস্কর। আমি মনে করি এঘটনার সঠিত তদন্তের মাধ্যমে বিচার করা হবে। এঘটনার সঠিক তথ্য উদঘাটন করে উপযুক্ত বিচার না করলে আগামীতেও এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে। রাজনৈতিক ভাবে তার কোনো শত্রæ আছে কিনা আমি জানি না। কিন্তু খুব মিশুক ছিলেন। আমরা চাঁদপুরে রাজনীতি করি কোনো দিন এমন ঘটনা ঘটেছে কিনা তা আমার জানা নেই। আমি প্রশাসনকে অনুরোধ করবে যেহেতু জাতীয় নির্বাচন আসন্ন এসময়ে এটি উস্কানীমূলক কাজ কিনা বিষয়টি যদি উদঘাটন না হয় আমরা রাজনৈতিক ভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়বো। এমন ঘটনাকে আমরা সবাই মিলে প্রতিহত করা উচিত।একজন নিরীহ মানুষ এভাবে চলে গেলে রাজনীতিতে একটা প্রভাব পড়বেই। তাই আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। আশা করি খুব দ্রæত আসামী ধরা পড়বে এবং বিচারের আওতায় আসবে।
লিডনিউজের ভতের এককলামে ।
শোকাহত জেলা আ.লীগ সভাপতি
আমরা এমন নির্মম ঘটনায় শোকাহত মর্মাহত ব্যথিত। ওনার সাথে আমার স্বাধীনতার আগে থেকে খুব ঘনিষ্ট সম্পর্ক। উঠা-বসা এবং বন্ধুত্ব। তিনি চিরকুমার। একজন মুক্তিযোদ্ধা। ওনি একজন শহীদ পরিবারের সদস্য। ওনার বড় ভাই জাবেদ ভাই পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। রফিকুল্লাহ ভাই আমার দীর্ঘদিনের সহপাঠি। তার এমন মৃত্যুতে আমরা গভীর ভাবে শোকাহত। প্রশাসনের কাছে অনতিবিলম্বে ঘাতককে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই। চাঁদপুরে ইতোপূর্বে এমন কোন ঘটনা ঘটে নাই। এটা একটা মারাত্মক ঘটনা। এটাকে কোনো ভাবেই চাঁদপুরবাসী স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিবে না। আমরা পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করি, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে এমন নৃশংসভাবে হত্যা তার যেন সঠিক বিচার হয়। এ হত্যার উপযুক্ত বিচার চাই।
লিডনিউজের ভতের এককলামে ।
মর্মাহত সুজিত রায় নন্দি
আমি চাঁদপুরে এসেছি প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের চেক বিতরণ করতে। এসে এমন খবর শুনে আমি হতভম্ব হয়ে পড়ি। আমি গভীর ভাবে মর্মাহত। এমন নির্মম হত্যাকÐের প্রতিবাদের ভাষা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। রফিকুল্লাহ ভাই একটি ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান। মহা মুক্তিযুদ্ধে তার পরিবারের অপরীসিম অবদান। রফিকুল্লাহ সাহেব চাঁদপুরের রাজনীতিতে একজন ক্লিন ইমেজের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। এ নির্মম হত্যাকÐের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমি আইন শৃংখলা বাহিনীর সাথে কথা বলেছি। যেন দ্রæত অপরাধীদের আইনের আওতায় প্রকৃত খুনিকে বের করে এনে বিচার করা হয়। গোটা চাঁদপুর বাসী এ হত্যাকাÐের বিচার চায়।