বিল্লাল ঢালী
চাঁদপুরে আসছে ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য গবাদি পশু চাহিদার তুলনায় জোগান কম রয়েছে। জেলায় কোরবানির জন্য গবাদি পশুর চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৩শ ৬১ টি। এবছর জেলায় গবাদিপশু উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ১৭হাজার ২শ ৬৮টি। কোরবানির জন্য চাহিদার তুলনায় গবাদিপশুর সংকট রয়েছে ১হাজার ৯৩টি। জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে বিষয়টি জানা যায়। এই হিসেব জেলার উৎপাদিত গবাদি পশু এবং কোরবানির চাহিদা অনুসারে। যদিও প্রতিবছর কোরবানির সময় লক্ষ্য করা যায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গবাদি পশু আসে কোরবানির হাটে। এবছরও যদি অন্যান্য জেলা থেকে গবাদি পশু আনা হয় তবে এ সংকট থাকবে না। তবে কিছু সংখ্যক খামারিদের মনে রয়েছে শঙ্কা। ভারতীয় গরু দেশের বাজারে আসলে খামারিদের পড়তে হতে পারে লোকসানের মুখে। সকল খামারিদের চাওয়া ভারতীয় গরু যেন দেশের বাজারে প্রবেশ না করে সেদিকে সরকারি নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে আরো জানা যায়, জেলায় তাদের তালিকাভুক্ত খামারী রয়েছে ৩ হাজার ২শ ৪০ জন। খামারগুলোতে গরু উৎপাদন হয়েছে ২৬ হাজার ৭শ ৯০টি। এবং ছাগল ভেড়া ও অন্যান্য পশু উৎপাদন হয়েছে১৩ হাজার ৬শ ৫৪ টি। সব মিলিয়ে মোট উৎপাদন হয়েছে ৪১ হাজার ১শ ৯০টি। এছাড়া তালিকাভুক্ত ছাড়া যেসব খাবারে আছে তাদের খামারে গরু উৎপাদন হয়েছে ৫১ হাজার ৮৯ টি। ছাগল ভেড়া ও অন্যান্য পশু উৎপাদন হয়েছে ২৫ হাজার ৭শ ৩৫টি। গরু ছাগল ভেড়া ও অন্যান্য পশু মিলে মোট উৎপাদন হয়েছে ১লাখ ১৭ হাজার ২শ ৬৮ টি।
জেলায় প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে কোরবানি পশুর যে চাহিদা উল্লেখ করা হয়েছে তাতে কোরবানির জন্য গরু প্রয়োজন ৮২ হাজার ৯শ ৭০টি। ছাগল ভেড়া ও অন্যান্য পশুর চাহিদা রয়েছে ৩৫ হাজার ৪শ ১৬টি। এ হিসেব মতে জেলায় গরুর সংকট রয়েছে ৫ হাজার ৯১ টি। ছাগল ভেড়া ও অন্যান্য পশু বাড়তি রয়েছে ৩ হাজার ৯শ ৭৩ টি। চাহিদা অনুযায়ী কোরবানির জন্য উপজেলাভিত্তিক হিসেবে গবাদিপশুর প্রয়োজন সদরে ১১৬০২, মতলব দক্ষিণে ১৪৫০০, মতলব উত্তরে ১১৪৫০, কচুয়ায় ১৪৩৬৫, শাহরাস্তিতে ২৫১১৯, হাজীগঞ্জে ১৭৯০০, ফরিদগঞ্জে ১৯০০০ হাইমচরে ৪৪৫০টি। উপজেলাভিত্তিক হিসেবে কোরবানির জন্য গরু সংকট রয়েছে সদর উপজেলায় ১০১২
টি। মতলব দক্ষিণে ২৯শ, কচুয়ায় ৩৮২৫,হাজীগঞ্জে ১৯৫, ফরিদগঞ্জে ৫শ ও হাইমচরে ৮২৫টি। চাহিদার তুলনায় গরু বেশি আছে মতলব উত্তরে ১১০, শাহরাস্তিতে ৩৯৮১টি। ছাগল ভেড়া অন্যান্য পশু চাহিদা অনুযায়ী বেশি আছে সদরে ২২৪, মতলব দক্ষিণে ২৭শ, মতলব উত্তরে ২৪০, শাহরাস্তিতে ২৬৪১ ও ফরিদগঞ্জে ৫শ টি। চাহিদার তুলনায় কম আছে হাইমচর উপজেলা ৫শ, হাজীগঞ্জে ১৮২ ও কচুয়ায় ১৬৫০ টি। গরু ছাগল ভেড়া ও অন্যান্য পশু মিলে উপজেলায় কোরবানির জন্য ঘাটতি আছে ১০৯৩ টি পশু।
গবাদি পশু কম উৎপাদনের বিষয়ে সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের খামারি আব্দুল মান্নান বলেন, মহামারী করোনার কারণে মানুষের কাছে টাকা নেই। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চলমান না থাকায় প্রতিটা মানুষ তাদের জমানো টাকা খরচ করে জীবন যাপন করছে। তাই যেসব খামারি দশটা গরু পালন করত তারা এখন তিন থেকে চারটা গরু পালন করে। এতে উৎপাদন কম হয়েছে।
রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের খামারি জসিম শেখ বলেন, করোনায় মানুষের সংসার খরচ চালাতে বাড়তি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। আগের মত কাজ কাম নেই। তাই আয় রোজগার নেই। এ অবস্থায় ব্যবসায় টাকা খরচ করা যাচ্ছে না। অনেকের কাছে জমানো টাকা ছিল না। ছিল গরু-ছাগল। খরচ বেড়ে যাওয়ায় খামারিরা এগুলো বিক্রি করে সংসার খরচ জোগাড় করেছে। এতে গরু ছাগল উৎপাদন কমে গেছে।
গত কয়েক বছর যাবৎ কোরবানির জন্য মানুষের পছন্দ দেশি গরু। খামারিরা ভালো দাম পেয়েছে বাজারে। আমাদের জেলায় পশুপালন এ প্রাকৃতিক খাদ্য বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে। খুব কম সংখ্যক লোক আছে যারা ফ্যাক্টরিতে উৎপাদিত খাদ্য খাওয়ায়। প্রাকৃতিক খাদ্য খাওয়ানোর কারণে জেলার গরুর চাহিদা বেশি। প্রতিবছর এ জেলা থেকে আশেপাশের জেলাগুলোতে গরু নেওয়া হয় হাটে বিক্রির উদ্দেশ্যে। আমাদের জেলায় গরু পালনের জন্য দুটি উপজেলা প্রসিদ্ধ। একটি হচ্ছে সদর উপজেলা এবং অন্যটি মতলব উত্তর। সদর উপজেলাতে চরাঞ্চল থাকায় মানুষ সহজে গরু পালন করতে পারে। চরাঞ্চলে অনেক জমি আছে। এখানে প্রাকৃতিক ভাবে ঘাস জন্মায়। তাই এখানে গরু পালনে খরচ কম হয়। অন্যান্য খাবার কম প্রয়োজন পড়ে। আর মতলব উত্তর উপজেলা ধান আবাদ জেলায় সর্বোচ্চ। গরুর খাদ্য খর উৎপাদন সবচেয়ে বেশি। এখানেও গরু পালনে বাড়তি খরচ বহন করতে হয়না খামারিদের।
গতবছর জেলায় প্রায় ২২৫ টি পশুরহাট বসেছিল কোরবানি ঈদ উপলক্ষে। এ বছরও আশা করা যায় সমপরিমাণ হাট বসবে। ঈদের এখনো অনেক সময় বাকি আছে তারপরও নিয়মিত যেসব হাট বসছে তাতে অনেক গরু আসছে। অনেকে আগেভাগে কিনে নেওয়ার জন্য হাটে যাচ্ছে। তবে কোরবানি উপলক্ষে সাধারণ মানুষের মনে কিছুটা চিন্তার ভাঁজ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানান করণা মহামারীর কারণে সাধারণ মানুষের পকেটের টাকা নেই। জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বগতি দামে সংসারের বাড়তি খরচ করতে হয় এমনিতেই। ঈদ উপলক্ষে কোরবানির জন্য আলাদা টাকা জোগাড় করা এখন কষ্ট সাধ্য। অনেকে মনে করছেন এবছর কোরবানি দেওয়াটা তাদের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য হবে।
গবাদিপশুর বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার মো: বখতিয়ার উদ্দিন জানান, গতবছর কোরবানির জন্য যে পরিমাণে পশুর চাহিদা চাহিদা ছিল এবছর চাহিদা তার চেয়ে বেশি হিসেব করা হয়েছে। যদি ইন্ডিয়ান গরু বাজার প্রবেশ না করে তবে খামারিরা ভালো দাম পাবে। আমাদের চাঁদপুরে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে পশু পালন করায় পশুর চাহিদা অনেক। আশা করা যায় খামারিরা এবছরও লাভবান হবে। ঈদ উপলক্ষে প্রতিটি উপজেলায় আমাদের মনিটরিং টিম রয়েছে। কোনো খামারি যাতে গরু মোটাতাজাকরণে অসদুপায় অবলম্বন করতে না পারে তার জন্য মোবাইল কোট পরিচালনা করা হচ্ছে। আমরা প্রতিটি গরুকে ভ্যাকসিন দিয়েছি। আমাদের জেলায় সামান্য কিছু পশু সংকট রয়েছে। আমরা আশা করি ঈদে এ সংকট থাকবে না। প্রতি ঈদে আমাদের এখানে কিছু মৌসুমী ব্যবসায়ী পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে গরু নিয়ে আসে হাটে তোলার জন্য। এ বছরও এভাবে হাটে গরু আসবে। তাই কাগজে-কলমে যেটুকু সংকট দেখা যাচ্ছে ঈদে তা থাকবে না। প্রতিটি হাটে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে পালনের নির্দেশনা দেওয়া থাকবে। এবং তা বাস্তবায়নে আমাদের পর্যাপ্ত লোকবল কাজ করবে।