বিল্লাল ঢালী
চাঁদপুরে প্রতিদিন জন্ম নেয় ১শ ১১জন নবজাতক। ঘন্টার হিসেবে ৪দশমিক ৬২জন আর মিনিটের হিসেবে প্রতি ১৩ মিনিটে ১জন শিশু জন্ম নিচ্ছে। চাঁদপুর জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের প্রসব সেবার তথ্যের মাধ্যমে বিষয়টি জানা গেছে। ২০১১ সালের আদম শুমারির হিসেবে চাঁদপুরে তখন জনসংখ্যা ছিলো ২৪ লাখ ৫৬ হাজার ৬৭৯ জন। যা গত দশ বছরে প্রায় ত্রিশ লাখে পৌঁছেছে।
পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্রে আরো জানা যায়, জুলাই ২০ থেকে মে ২১ পর্যন্ত ১১ মাসে ৩৭ হাজার ৩শ ২১টি শিশু জন্মগ্রহণ করে। যার মধ্যে স্বাভাবিক প্রসব সেবায় জন্মগ্রহণ করে ২৬ হাজার ৩শ ৬৫ শিশু। এবং ১০ হাজার ৯শ ৫৬ শিশু জন্মগ্রহণ করে সিজারিয়ান প্রসব সেবায়। স্বাভাবিক প্রসব সেবায় সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে জন্ম হয় ১৭ হাজার ৪শ ৩৪ শিশু। বাড়িতে জন্ম নেয় ৮ হাজার ৯শ ৩৫ শিশু। এরমধ্যে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ব্যক্তি দ্বারা প্রসব করানো হয় ৬ হাজার ৪শ ৯৮ শিশু। এবং প্রশিক্ষণবিহীন ব্যক্তি দ্বারা প্রসব হয় ২ হাজার ৪শ ৩৭ শিশু। এ সময়ের মধ্যে নবজাতক মৃত্যু হয় (০ থেকে ২৮ দিন বয়সের) ১৬০ শিশু। মা মৃত্যু বরণ করেন ১৮ জন।
জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিস তথ্য মতে আরো জানা যায় এসময়ের মধ্যে জেলায় স্বাভাবিক প্রসব সেবায় শিশু জন্মগ্রহণ করেছে ৭১ ভাগ। সিজারিয়ান প্রসব সেবায় জন্মগ্রহণ করেছে ২৯ ভাগ শিশু। যার মধ্যে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে স্বাভাবিক প্রসব সেবায় জন্মগ্রহণ করেছে ৬৬ ভাগ শিশু। এর মধ্যে শুধুমাত্র সরকারি হাসপাতালগুলোতে স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে ৪১ ভাগ।
যদিও জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল এবং ক্লিনিক ঘুরে মাতৃকালীন সেবা গ্রহীতাদের সাথে আলাপকালে অনেকেই অভিযোগ করেন স্বাভাবিক প্রসব সেবার চেয়ে কিছু ডাক্তার এবং প্রসব সেবা দানকারী দায়িত্বপ্রাপ্তরা সিজারিয়ান প্রসব সেবা নিতে একপ্রকার বাধ্য করছেন। এটি এখন একটি বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। কেননা স্বাভাবিক প্রসব সেবায় আয় নেই তাদের। সিজারিয়ান প্রসব সেবায় সেবা গ্রহীতার কাছ থেকে ভালো টাকা আদায় করা যায়। এরা সুকৌশলে সেবা গ্রহীতা কে সিজারিয়ান সেবা নিতে বাধ্য করে। সেবা গ্রহীতার অবস্থা ভালো না, বাচ্চার অবস্থা ভালো না, পানি কমে গেছে, বাচ্চা উল্টে গেছে, এসব নানান কথা বলে। পরে সিদ্ধান্ত ছেড়ে দেয় সেবা গ্রহীতা পক্ষের উপর। স্বাভাবিক প্রসব সেবার জন্য আপনারা অপেক্ষা করতে পারেন তবে কিছু হয়ে গেলে আমরা জানিনা এমন কথা বলে অস্বস্তিতে ফেলে দেয় সেবাগ্রহীতা পক্ষকে। পরে জীবন বাঁচানোর কথা চিন্তা করে গ্রহণ করে সিজারিয়ান সেবা।
সম্প্রতি একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা প্রসূতি মায়ের অভিভাবক নামপ্রকাশ না করা শর্তে বলেন, মূলত ডাক্তারদের পরামর্শের কারণে আমরা শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারি না। তারা এক প্রকার আতঙ্ক ঢুকিয়ে দেয় মনে। পরে বাধ্য হয়েই সিজার করাই। কখনো কখনো এমন হয় যে ডেলিভারির নির্ধারিত তারিখের ১০-১৫দিন আগেই সিজার করিয়ে নিতে হয়। এক্ষেত্রে চিকিৎসকদের আরো মানবিক হওয়ার আহ্বান জানান এ অভিভাবক।
স্বাভাবিক প্রসব সেবা বিষয়ে জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ডাঃ মোঃ ইলিয়াছ বলেন, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মাঠ পর্যায়ে কর্মরত পরিবার কল্যাণ সহকারীগণ সাধারণ মানুষকে সিজারিয়ান সেবা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া না নেওয়ার উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছে। এছাড়া পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা স্বাভাবিক প্রসব সেবায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্তগণ ২৪ ঘন্টা স্বাভাবিক প্রসব সেবা দিয়ে থাকে। তারাও সেবা গ্রহীতা কে উদ্বুদ্ধ করছে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সিজারিয়ান সেবা গ্রহণ না করার জন্য।