ইকবাল বাহার:
করোনার কারণে বিদেশ থেকে ফেরত আসা প্রবাসীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য সরকার নেয়া ঋণ কার্যক্রমে শুরু করে। দেশের অর্থনৈতিক রেমিটেন্স বৃদ্ধির ক্ষেত্রে চাঁদপুরের প্রবাসীরা বিরাট ভূমিকা রাখলেও তাদের বিপদে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক চাঁদপুর তেমন ভূমিকা রাখতে পারছে না। পরিসংখ্যান ও তথ্যে এমনটিই প্রতিয়মান হয়।
জানা যায়, চাঁদপুর একমাত্র প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক শাখায় জেলার ৮ উপজেলার মাত্র ৬০ জন বিদেশ ফেরত ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীকে ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক একটি বিষেশায়িত ব্যাংক। ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরের অক্টোবর মাসে চাঁদপুরে প্রথম প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক শাখা কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে ব্যাংকটিতে ৫শ ৫১জন গ্রাহক রয়েছে। তারমধ্যে ৪৬৫ প্রবাসীকে মাইগ্রেশন ঋণ সুবিধা দেয়া হয়েছে।
গত বছরের জুনে প্রবাসীদের কম সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার জন্য ৭০০ কোটি টাকা সরকার থেকে বরাদ্দ করা হয়। এর মধ্যে সরকার থেকে ছাড় করা হয়েছে ২৫০ কোটি টাকা। এ অর্থ থেকে চাঁদপুরে মাত্র ৬০ জন প্রবাসীকে মে পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে ১কোটি ৬৬ লাখ টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
করোনার কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বিদেশ থেকে গত বছর প্রায় ৩ লাখ ২৭ হাজার প্রবাসী দেশে ফিরে এসেছে। দেশে এদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য সরকার গত বছরের জুনে ৭০০ কোটি টাকার ঋণ কর্মসূচি হাতে নেয়। এর মধ্যে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড তহবিল থেকে ২০০ কোটি টাকা এবং সরকার থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার ২৫০ কোটি টাকা ছাড় করেছে। সরকারের বাকি ২৫০ কোটি ও ওয়েজ আর্নার্স তহবিলের ২০০ কোটি টাকা এখনো ছাড় করা হয়নি।
এসব অর্থে গত বছরের জুলাই থেকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দেশে ফেরত আসা প্রবাসীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য অভিবাসী কর্মী পুনর্বাসন ঋণ কর্মসূচি চালু করে। গত নয় মাসে এ খাতে ১৪৮ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। যা মোট প্যাকেজের ২১ দশমিক ১৪ শতাংশ। আর ছাড় করা অর্থের ৫৯ দশমিক ২০ শতাংশ। ব্যাংকের ৮২টি শাখার মাধ্যমে এ ঋণ দেওয়া হচ্ছে।
ঋণ সুবিধা নিতে আসা বিদেশ ফেরত শাহরাস্তির খিলা গ্রামের এরশাদ বলেন, আমি করোনা দিয়ে দেশে এসেছি। কিন্তু করোনার ভয়াবহতার কারনে যেতে পারছি না। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছি তাই এই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে এসেছি। কিন্তু যে-ধরনের ডকুমেন্টস চায় সেগুলো মিলিয়ে ঋণ নিতে পারবো কিনা জানি না।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ফেরত আসা প্রবাসীদের পুনরায় বিদেশে যেতে এবং দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে ঋণ দিচ্ছে। ঋণের সুদের হার ৪ শতাংশ। ১ থেকে ৯ মাস গ্রেস পিরিয়ড। ২ থেকে ৫ বছর মেয়াদি ঋণ। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা এবং সর্বনিম্ন দেড় লাখ পর্যন্ত কোনোরকম জামানত ছাড়াই দেওয়া হচ্ছে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক চাঁদপুর শাখার (সাবেক) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী মাজিস্ট্রেট অলিদুজ্জামান বলেন, আমি এখন দায়িত্ব নিয়ে তাই এক্ষেত্রে সঠিক তথ্য দিতে পারছি না।
এ প্রসঙ্গে চাঁদপুর প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপক বলেন, শাখার সংখ্যা কম হওয়ায় সব প্রবাসীকে ঋণের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। সব উপজেলায় শাখা নেই। ফলে অনেক দূর থেকে প্রবাসীরা ঋণের জন্য আসছে না। আমাদের লোকবল কম। আমরা চাঁদপুর প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে মাত্র ৩ জন স্টাফ নিয়েই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। একটা লোন পাশ করাতে অনেক সময় দরকার হয় যে কারনে হিমশিম খেতে হয়।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা বিদেশ ফেরত এবং আর যাওয়ার সুযোগ নেই তাদের জন্য এই সুবিধা। তাই এই টাকা দিয়ে কেউ খামার, দোকান ও বিভিন্ন ব্যবসায়ে কাজে ব্যবহার করতে পারছেন।