সম্পাদকীয়
ইলিশ নিয়ে বাংলাদেশ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও এর উপস্থাপন এবং সর্বজন প্রাপ্তির বিষয়টা বাস্তবায়ন হয়নি। আর কখনো বাস্তবায়ন হবে বলে মনে হয় না। চাঁদপুর জেলা ইলিশের বাড়ি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করলেও ইলিশের বাড়িতেই যেন ইলিশ সাময়িক অতিথির মতো অবস্থান করছে। তাছাড়া জাতীয় মাছ হিসেবে চাঁদপুর জেলাতেও সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরেই রয়ে গেছে। ইলিশ নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন এবং সরকারের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানের আয়োজন হলেও এর জনশ্রæতি বিলীন হওয়ার পথে। বাংলাদেশের ইলিশ মাছ সারা বিশ্বে প্রসিদ্ধ এবং বাংলাদেশের জাতীয় মাছ হিসেবে পরিগণিত। জাতীয় মাছের জাতীয়ভাবে সামগ্রিক জনচাহিদা কোনভাবেই মিটছে না। বাংলাদেশের জাতীয় ফল ফলাদি এবং জাতীয় বিভিন্ন বিষয় ব্যাপক পরিমাণ থাকলেও যা জনগণের নাগালে থাকে তাই জাতীয়। কিন্তু ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ হলেও জাতীয় সম্পদ হলেও সামগ্রিকভাবে সকল জনগণের সামর্থের বাইরেই রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলাকে ইলিশের বাড়ি হিসেবে নামাঙ্কিত করা হয়েছে। তবুও কেন জানি এই ইলিশের জন চাহিদা মিটছে না। যে কোন বস্তু অথবা যেকোনো বিষয় জাতীয় হিসেবে নির্দিষ্ট থাকলেও ইলিশ ব্যতীত প্রায় প্রত্যেকটা জাতীয় বস্তুই জনসাধারণের নাগালে রয়েছে। তিন অক্টোবর দৈনিক শপথ পত্রিকায় শিরোনামে প্রকাশ হয়েছে চাঁদপুর জেলার সম্মানিত জেলা প্রশাসক বলেছেন সচেতন হলে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। মা চাচী দাদি নানিরা বলতেন এক বাড়িতে ইলিশ রান্না হলে আশেপাশের দু এক বাড়িতে ইলিশের গন্ধে সবাইকে সজাগ করে দিত। সেদিন আর কখনো আসবে বলে মনে হয় না। এখন জনগণের সেই বাস্তব অভিজ্ঞতার গল্প শুধু গল্পই রয়ে যাবে। এই যে কমেছে দামটা কত কমেছে সেটা বড় ভাবনার বিষয়। সকল মাছের সাথে পাল্লা দিয়ে ইলিশ মাছের দাম তেমনটা জনসাধ্যের বাইরে রয়ে গেছে। তাই বাংলাদেশের মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের তত্ত¡াবধনায় যে হারে মাছ বৃদ্ধি পেয়েছে সেহারে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরেই রয়ে গেছে। জাতীয় মাছ হিসেবে অন্তত এই মাছের দাম সকল শ্রেণীর মানুষের ক্রয় ক্ষমতার ভেতর থাকা উচিত ছিল। সরকার জনগণের, দেশ জনগণের, জাতীয় সম্পদ জনগণের, তাই জাতীয় সম্পদ জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। জাতীয় শব্দটার একটা সম্মান রয়েছে জাতীয় শব্দের প্রভাব প্রতিপত্তি রয়েছে সেই হিসেবে জনগণের ক্রয়-ক্ষমতার বাইরে এখনো এই ইলিশ সম্পদ। বাংলাদেশের জনগণের সম্পদের উপার্জনের পরিমাণ বিশ্বের সাথে পাল্লা দিয়ে যতই সন্তোষজনক দেখানো হোক, বাস্তবে বেশিরভাগ মানুষ এই সন্তোষজনক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কথা একেবারেই সাধ্যের সামর্থের এবং আভ্যন্তরীণ ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক পরিস্থিতির নাগালের বাইরে রয়েছে। বড় পরিতাপের বিষয় হলো বাংলাদেশ সীমান্তে বাংলাদেশের জেলেরা মাছ ধরার ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় আইন মানতে বাধ্য এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় বাংলাদেশের জেলেরা ও সোচ্চার। কিন্তু বাংলাদেশের জল সীমানায় ভারতের মায়ানমারের লোকেরা নিষিদ্ধ সময়ে জল সীমানায় ইলিশ মাছ ধরে নিয়ে যায়। সেটার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত না নাক করে দেশের জেলেদের মা ইলিশ সংরক্ষণের জন্য নিষিদ্ধ করা আত্মঘাতী নিয়ম-নীতির শামিল নয় কি? তাই বাংলাদেশের জেলেদের জন্য মা ইলিশ সংরক্ষণের যে সময় নির্ধারণ করা হয় সেই সময় বাংলাদেশের জল সীমান্তে ব্যাপক টহল পরিচালনা করা জরুরী। নিষিদ্ধ সময়ে অন্যান্য দেশের জেলেরারা বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করে মাছ ধরে নিয়ে গেলে তো আর মাইলি সংরক্ষণের পদ্ধতি অবলম্বন করে কি লাভ।