ইকবাল বাহার
চাঁদপুরে পুলিশ সুপার (এসপি) মিলন মাহমুদ বিপিএম(বার) গত ১৮ মার্চ যোগদানের পর থেকে ১০ জুন পর্যন্ত আড়াই মাসে চাঁদপুরের ৮ টি উপজেলায় মোট ১৮০৮ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও জেলাকে মাদকমুক্ত করতে প্রতিদিন মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
পুলিশ সুপার কার্যালয় প্রাপ্ত তথ্যসুত্রে জানা যায়, গত ১৮ মার্চ ২০২১ থেকে ১০ জুন পর্যন্ত জেলায় ৬ টি খুনের মামলা, নারী ও শিশু ধর্ষণ মামলা ১৪ টি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে সর্বমোট ৫৫৯ টি মামলা রুজু হয়। ওই মামলার মাদকের সাথে সংশ্লিষ্টতায় সাজা/ওয়ারেন্টভুক্ত ৫০৯ জন আসামি গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও নিয়মিত মামলায় গ্রেফতার করা হয় ৪৬৯ জন। ননএফআইআর ও অন্যনা মামলার গ্রেপ্তার করা হয় ৭১০ জন। সবমিলিয়ে এসময়ে মোট ১হাজার ৮শ ৮ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময়কালে মাদকদ্রব্য উদ্ধারের মধ্যে রয়েছে ১১ হাজার ২ শ ৯৮ পিচ ইয়াবা, ২০ কেজি ৫৭ গ্রাম গাজা, ১৮ বোতল ফেন্সিডিল, ১৭১টি বিয়ার ক্যান, ৫০ লিটার চোলাই মদ।
সাম্প্রতিক সময়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে ফরিদগঞ্জে থানায় এজেন্ট ব্যাংক চুরির মামলায় ৬ লাখ টাকা উদ্ধারের ও কচুয়া থানায় এজেন্ট ব্যাংক চুরির মামলায় ৩ জন আসামিসহ ৭ লক্ষ টাকা উদ্ধার। এছাড়াও এই সময়ে চাঞ্চল্যকর মামলার রহস্য উদঘাটন হয়েছে আরো ৪টি মামলার। তারমধ্যে হাইমচর থানায় খুনের রহস্য উদঘাটনসহ ৪ জন আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে ৩ জন, ডাকাতি ঘটনায় ৩ জন। গণধর্ষণের এজহার নামীয় আসামি ৩ জন এবং হাজীগঞ্জ থানার গণধর্ষণের এজহার নামীয় ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
যোগদানের সাথে সাথেই অপরাধীদের কঠোর বার্তা দিয়েছিলেন পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ। প্রথমেই তিনি জেলাকে মাদকমুক্ত করার ঘোষণা দেন। অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই চিহ্নিত করা হবে। তাদের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতাদেরও ছাড় দেয়া হবে না। প্রতিটি থানাকে সত্যিকারের অর্থে সেবাকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার উপর তাগিদ দেন তিনি। মামলার মানসম্মত তদন্ত নিশ্চিত করার লক্ষে বিভিন্ন উদ্যেগ গ্রহণ করেন। এছাড়াও একই সঙ্গে কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থাকে জোরদার করে মাদক, সন্ত্রাস, বাল্য বিয়ে বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার উপর তাগিদ দেন।
এসপি মিলন মাহমুদ চাঁদপুরে যোগদান পর থেকেই উপরাধীরা উৎকণ্ঠায় পড়েন। চাঁদপুরের জনসাধারণ ও পুলিশের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে মতবিনিময় শুরু করেন তিনি। শুরুতেই করোনা মহামারিতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার উপর পরামর্শ দেন। এরপর অপরাধকে সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণ করার উপর জোর দেন। মানুষের কাজে সুবিধার্থে প্রত্যেকটি অঞ্চলে বিট পুলিশিং বা কমউিনিটি পুলিশিং শক্তিশালী করা হবে জানিয়ে এসপি বলেন, একজন সেবা প্রত্যাশীর ছোটখাট সমস্যার জন্য যাতে কোন প্রকার হয়রানী বা ভোগান্তির শিকার না হয় সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকার তাগিদ দেন।
জনতার পুলিশে রূপান্তর করার জন্য অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। কাজের গতি বাড়ানোর উপর তাগিদ দেন। পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাজে তিনি একজন বলিষ্ঠ নেতা হিসাবে নিজেকে জানান দিয়েছেন। এতে করে তাদের মধ্যে কাজের স্পৃহা সৃষ্টি হয় যা সত্যি একজন পুলিশ সুপারের অসাধারণ নেতৃত্ব বলা যায়। অতীতের যেকোন পুলিশ সুপারের তুলনায় ডায়নামিক ও টেকনোলোজিবেস্ড বলা যায় তাঁকে। তিনি অত্যান্ত কৌশলীও। তাঁর বাস্তব জ্ঞান বোধও অসামান্য। সাধারণ মানুষের গহীনে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। ছোট বড় সবাইকে সম্মানের সহিত আচার-আচরণ করে মন জয় করে নিয়েছেন। যা একজন পুলিশ সুপারের মানবিকতার নিদর্শন বলা যায়।
এছাড়াও তিনি গত দুই মাসে সকল উপজেলায় সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে সার্বিক সমস্যাগুলো বের করে সমাধানের উদ্যোগ নেন। সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নির্দেশনা দিয়েছেন যে কাজের স্বচ্ছতা আনার জন্য। পরিদর্শনকালে পরামর্শ দেন যা করবেন জনগণকে সাথে নিয়েই করবেন। দেশের জন্য এবং জনগণের জন্য কাজ করবেন। তিনি বুঝাতে চেয়েছিলেন পুলিশকে জনতার সেবক হতে হবে। তাঁকে অবশ্যই পরিবর্তনে ব্রতী হতে হবে।’ জনগণের সঙ্গে মিশতে হবে, তাদের সমস্যা শুনতে হবে। মানুষকে ভালোবাসতে হবে, তাদের সঙ্গে সদাচরণ করতে হবে। মানুষকে ভালোবাসলে তাদেরও ভালোবাসা পাওয়া যায় এবং মানুষের শান্তি ও সেবার জন্য কাজ করা যায়।
এছাড়া পুলিশের বিভিন্ন অভিযান, মাদক উদ্ধার, অপরাধীদের গ্রেফতারসহ বিভিন্ন তথ্য জেলা পুলিশের নিজস্ব ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে নিয়মিত জানিয়ে দিচ্ছেন জেলার মানুষকে। এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এরই মধ্যে এসপি মিলন মাহমুদ প্রশংসাও কুড়িয়ে নিচ্ছেন সাধারণ মানুষের কাছ থেকে। প্রতিটি ইউনিটকে মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলাজুড়ে মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করা হয়েছে। তিনি মনে করেন সব কাজেই জবাবদিহিতা থাকা জরুরি।
পুলিশ সুপার সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশের কর্মকতারা বলেন, অসাধারণ একজন উদ্যমী ও পরিশ্রমী পুলিশ সুপার আমরা পেয়েছি। তিনি আইন কানুন কঠোরভাবে মেনে চলেন। আইন অমান্যকারীদের প্রতি তিনি যেমনি কঠোর, আবার যারা আইন মেনে চলে, ভালো কাজ করে তাদেরকে তিনি সম্মান, মূল্যায়ন ও স্নেহ দিয়ে আগলে রাখেন। আমরা আশা করি তাঁর নেতৃত্বে আমরা চাঁদপুরের জেলার উন্নয়নে ও চাঁদপুরবাসীর সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারব।
তারা আরো বলেন, আমাদের স্যার অত্যান্ত ভালো মানুষ। এই স্যার চাঁদপুরে আসার পর থেকেই সবার কাজের স্পিড বেড়ে যায়। স্যার সব সময়ে সঠিক কাজ সঠিক সময়ে করার উপর জোর দেন। তাই সবসময় সকল তথ্য আপডেট রাখতে হয়।
এছাড়া চাঁদপুরবাসীর জন্য আমাদের প্রতিদিনের নিরন্তর প্রচেষ্টা ও অর্জনগুলো প্রতিদিনই তাদের কাছে প্রকাশ করা হচ্ছে। এছাড়া কোনো পুলিশ সদস্য যদি অন্যায়ভাবে কাউকে হয়রানি করে বা মাদকসহ অনৈতিক কাজে জড়িত থাকে, তাহলে তাকেও ছাড় দেয়া হবে না ও জেলা পুলিশের প্রতিটি সদস্যকে শতভাগ মানবিক হতে হবে বলেও সতর্ক করেন তিনি। পুলিশের কোনো সদস্য অভ্যন্তরীণ অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকলে তাকেও ছাড় দেওয়া হবে না বলে কঠোর হুশিয়ারি করেছেন তিনি।
দৈনিক শপথকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসপি মিলন মাহমুদ বলেন, নিরাপদ ও সুন্দর চাঁদপুর গড়ার জন্য সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সহযোগিতা কামনা করছি। আসুন আমরা সবাই মিলে চাঁদপুরকে মাদক মুক্ত, অপরাধ মুক্ত ও নিরাপদ জেলা হিসেবে রূপান্তরিত করি। এ জন্য আমি সাংবাদ কর্মীদের সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করছি।