রিয়াজ শাওন :
চাঁদপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেছেন স্নিগ্ধা সরকার। অত্যন্ত মেধাবী ও চৌকস এই পুলিশ অফিসার। এর আগে তিনি এসপিবিএন-৫ ঢাকা উওরা, র্যাব-৫ রাজশাহী, র্যাব-৩ ঢাকা টিকাতলী এবং পুলিশের ইস্পেশাল বেঞ্চে(এসবি) তে চাকরি করেছেন।
চাকরি জীবনের বয়স সাত বছর। এই সাতটি বছর তিনি নীতি-নৈতিকতা এবং দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। পেশাগত দক্ষতার কারণে এবং সৎ ও নিষ্ঠার সহিত দায়িত্ব পালনে তাকে দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবেও একাধিকবার দেশের বাহিরে সফর করেছেন। চৌকস এই পুলিশ অফিসারের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলাপ করেছেন সাপ্তাহিক শপথের নিজস্ব প্রতিবেদক রিয়াজ শাওন।
শপথ: এত পেশা থাকতে পুলিশ হওয়ার ইচ্ছে জাগলো কেন?
স্নিগ্ধা সরকার: সত্যি বলতে বিসিএস-এ আমার প্রথম চয়েজ ছিলো পররাষ্ট্র ক্যাডার। দ্বিতীয় চয়েজ ছিলো পুলিশ ক্যাডার। দ্বিতীয় চয়েজটাই আমার আসছে। সেই জায়াগা থেকে পুলিশে আসা।
শপথ: যে উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশাসনে চাকরি শুরু করেছেন, আপনি সেই উদ্দেশ্য কতটুকু বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছেন?
স্নিগ্ধা সরকার: আসলে পুলিশ একটা সার্ভিস । আবার এটা একটা জীবিকা। আমি এমন একটা পেশা চেয়েছিলাম যেখানে মানুষের জন্য অনেক বেশি কাজ করতে পারি। আর পুলিশই একমাত্র পেশা যেখানে মাটি ও মানুষের অনেক বেশি কাছে থাকা যায়। সেবা করা যায়। মানুষের বিপদে-আপদে সাহায্য করা যায়। এখানে অন্য পেশার তুলনায় সাধারণ মানুষের সাথে বেশি সাক্ষাৎ হয়। বেশি সার্ভিস দিতে পারি। দেশ ও মানুষের সেবা করতে পারাটা পরম সৌভাগ্যের বিষয়। সেই জায়গা থেকে পুলিশ পেশার প্রতি আমার দূর্বলতা কাজ করে। আর আমার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে আমি সর্বদা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
শপথ: সাড়ে সাত বছর চাকরি করছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সফলতা কোনটি?
স্নিগ্ধা সরকার: এই রকম তেমন কিছু হয়নি। গত সাত বছরে আমি যতটুকু কাজ করেছি। তাতে আমি চাকরী জীবনে সফল কি বা ব্যর্থ এসব নিয়ে ভাবছি না। কারন আমি এই প্রথম ক্রাইম সেকশনে কাজ করছি। যদিও এর আগে র্যাব এপিবিএন ইম্পাশল বেঞ্চে (এসবি) চাকরি করেছি। এমন কোন বড় ঘটনা এখানো আমার ক্ষেত্রে ঘটেনি। যেটাকে আমি বড় সফল্য বলে মনে করবো।
শপথ: চাঁদপুর যোগদান করার পূর্বে এই জেলা সম্পর্কে আপনার ধারণা কেমন ছিলো?
স্নিগ্ধা সরকার: চাঁদপুরে যোগদানের পূর্বে এই জেলা সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা ছিলো। যেহেতু এখানে এসপি শামসুরনাহার স্যার কাজ করছেন। তিনি খুব সফল ভাবে কাজ করেছেন। জেলার মানুষের হৃদয়ে জায়াগা করে নিয়েছেন। আমিও চাই স্যারের মত কাজ করে মানুষের মনে জায়গা করে নিতে। যদিও স্যারের মত কাজ করতে পারবো না। তবে চেষ্টা করতে পারবো।
শপথ: চাঁদপুর যোগদানের পূর্বের ধারণা আর বাস্তবে এসে কাজ করার অভিজ্ঞতার পার্থক্য কেমন?
স্নিগ্ধা সরকার: এখানে এসেছি এক মাসের মত হলো। এক মাসে পুলিশের চাকরিতে ধারণা করা কঠিন কাজ। তবে ধারণা সাথে যে বাস্তবতার মিল নেই। তেমনটাও না। এখানে আমাদের কাজে সাংবাদিক জনগণ প্রশাসন সবাই যথেষ্ট সাহায্য করে আসছে। আর আমি এসে চাঁদপুরের মানুষের কাছে যে পরিমাণ রেসপন্স পেয়েছি তাতে আমি আসেলই সন্তুষ্ট। চাঁদপুরবাসী আমাকে যে ভাবে গ্রহণ করেছে তাতে আমি মুগ্ধ।
শপথ: চাঁদপুরের মানুষ অন্য জেলার তুলনায় কেমন?
স্নিগ্ধা সরকার: আসলে অন্য জেলায় আমার কাজ করার অভিজ্ঞতা তেমন নাই। তবে চাঁদপুরের মানুষ অতিথিপরায়ণ এবং শান্তিপ্রিয়। আর খারাপ ভালো নিয়েই এই সমাজ। আর সব জায়গাই ভালো খারাপ আছে। চাঁদপুরও তাই।
শপথ: চাঁদপুর যোগদানের পর আপনার চোখে এখানকার কি কি সমস্যা পড়েছে?
স্নিগ্ধা সরকার: আমার কাছে মনে হয়েছে। এখানে জমি-জমা নিয়ে সমস্যা অনেক বেশি। তাছাড়া ইয়াং জেনারেশনে যে কিশোর গ্যাং সেটাও অনেক অনেক বেশি। অন্য সমস্যাও আছে মোটামুটি। মাদকের ঝামেলাও আছে অনেক। সব মিলিয়ে বলা যায় কম বেশি সকল সমস্যাই আছে।
শপথ: আর এই সমস্যাগুলো সমাধানে আপনি কি পদক্ষেপ নিয়েছেন?
স্নিগ্ধা সরকার: আসলে চাঁদপুর না পুরো বাংলাদেশই নৈতিকতার একটা পরিবর্তন ঘটেছে। মানুষের মাঝে যদি নৈতিকতা না থাকে তাহলে সে অপরাধ করবেই। তাই আমি মূলত নৈতিকতা বা নৈতিকতা শিক্ষার উপর কাজ করবো বেশি। এতে করে মানুষের ভিতরে যে অপরাধ করার সত্তাটা আছে সেটা মরে যাবে। আমাদের পাশাপাশি অবিভাবকদেরও অনেক বেশি সচেতনতা হতে হবে। কারন তাদের সন্তানের উপরে সব সময় তারাই নজর রাখতে পারবে।
শপথ: অতীতের এএসপির তুলনায় আমরা আপনার কাছ থেকে ব্যতিক্রম কি দেখবো?
স্নিগ্ধা সরকার: আমি মূলত কুইক(তাড়াতাড়ি) রেসপন্স (সাড়া) দেই। যে কোন বিষয়ে খুব দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করার চেষ্টা করি। আর কিছু কিছু বিষয় আছে। যেগুলো সহজে সমাধান করা যায়। সেগুলো প্রকাশ করা যায় না। আমি সেই কাজগুলো করার চেষ্টা করবো।
শপথ: চাঁদপুরে আপনার মূল কার্যক্রম কি থাকবে?
স্নিগ্ধা সরকার: এখানে ইয়াং জেনারেশনের গ্যাং কালচারটা খুব বেশি। সন্ধ্যায় ব্যাপক কিশোররা আড্ডা দেয়। ইভটিজিং করে। তাদের উপর আমি কাজ করবো। আমরা যদি কিশোরদের উপর কাজ করি তাহলে অনেক অপরাধী কমে যাবে। কারন ইভটিজিং বলেন, মাদক বলেন, চুরি বলেন সকল কিছুতে কিন্তু বড় একটা অংশ কিশোর। তাই তাদের উপরিই আমার মেইনফোকাস(মূল দৃষ্টি)থাকবে। এছাড়াও বর্তমানে সাইবার ক্রাইম বেশি হচ্ছে। ছেলে মেয়েরা বুঝে না বুঝে এই ক্রাইমে জড়িয়ে পড়েছে। যেগুলো প্রকাশ করা যায় না। করলে ক্ষতি বহুগুণ বেড়ে যায়। কিন্তু চাইলে এই বিষয়গুলো গোপন রেখে সমাধান করা যায়। আমি এই বিষয়ে কাজ করবো। আমরা হয় তো পুরাপুরি বন্ধ করতে পারবো না। কিন্তু কিছুটা হলেও আটকে রাখতে পারবো। যাতে অপরাধ কিছুটা কমে যায়।
শপথ: এখন পর্যন্ত আপনি চাঁদপুরে উল্লেখযোগ্য কি করেছেন?
স্নিগ্ধা সরকার: আপনার এই প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারবো না। কারন সবেমাত্র আসলাম। এখনো তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারিনি। আমি চেষ্টা করবো ভালো কিছু করার। আপনারা আমাদেরকে সহযোগিতা করবেন।
শপথ: চাকরীর জীবনে স্মরণীয় কোনো ঘটনা আছে?
স্নিগ্ধা সরকার: আমি একবার রাস্তায় ডিউটিরত ছিলাম। এমন সময় হঠাৎ একটা ছেলে এক্সিডেন্ট হয়েছে। লোকজন কেউ এগিয়ে আসছে না দেখলাম। পরে আমি নিজেই তাকে আমার গাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। গাড়িটা রক্তে ভেসে যায়। ছেলেটি বেঁচে গেছে।
শপথ: আপনি কি মনে করেন চাকরি জীবনে আপনি সফল?
স্নিগ্ধা সরকার: এক অর্থে বলতে পারি আমি সফল। কারন চাকরি করে আমার এবং পরিবারের ব্যয় আমি বহন করতে পারছি। আবার অন্যদিকে পুলিশের চাকরি করার কারনে দেশে-বিদেশে এমন অনেক জায়গায় যেতে পেরেছি। যেটা আসলে আমি পুলিশ না হলে সম্ভব হতো না। এই দিক থেকে আমি সফল। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে বিদেশেও অনেক বার গিয়েছি। আমার মনের সন্তুষ্টের দিক থেকে চাকরির জীবনকে সফল বলতে পারি।
শপথ: সাপ্তাহিক শপথ পরিবারে পক্ষে থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
স্নিগ্ধা সরকার: সাপ্তাহিক শপথকে অনেক ধন্যবাদ।