রাসেল ইব্রাহীম
‘বঙ্গবন্ধু ’ মানে কী- তা মাথায় এলে হয়তো প্রথম চিন্তায় বলে ফেলব ‘বঙ্গবন্ধু’ মানে ‘বাংলার বন্ধু’। কিন্তু শব্দটি ছোট হলেও এর মাঝে রয়েছে অর্থের ব্যাপকতা, অকৃত্রিম শ্রদ্ধাবোধ এবং নিখাদ ভালোবাসা। নির্দ্বিধায় কিংবা বিনা সংকোচে আমি বলে দিব যে, বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ। বিশ্বের যে প্রান্তেই ‘বাংলাদেশ’ শব্দটি উচ্চারিত হবে সেখানেই আছেন বঙ্গবন্ধু। আয়তনে বাংলাদেশ ছোট হলেও সম্মান এবং মর্যাদার দিক দিয়ে বাংলাদেশ যতটুকু বিশাল,ঠিক বঙ্গবন্ধুও প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা ও আদর্শের দিকদিয়ে ততটুকু বিশাল। বিশ্বের অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর কাছে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোলমডেল। আজকের বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের চূড়ান্ত ফসল।বঙ্গবন্ধু ছিলেন, বঙ্গবন্ধু আছেন এবং বঙ্গবন্ধু থাকবেন।
বঙ্গবন্ধু কে ছিলে – তা আমার মতো অধমের পক্ষে সুনিপুণভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব নয়।
তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যেই নামটি উচ্চারণ করলে হৃদয়ের গহীন থেকে চলে আসে অকৃত্রিম শ্রদ্ধা। ‘বঙ্গবন্ধু’, ‘শেখ মুজিব’ এবং ‘শেখ সাহেব’ নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন তিনি ; কিন্তু তার অনেকগুলো নাম কিংবা উপাধির মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি চাঁদের মতো, যেন তা রাতের আকাশের অসংখ্য তারার মাঝে একটি উজ্জ্বল চাঁদ হয়ে কিরণ ছড়ায়। বঙ্গবন্ধুর সুখ্যাতি এখন বিশ্বময়,তাঁর ভাষণ জাদুময়, প্রতিটি শব্দ চুম্বকের মতো ; যা স্বাধীনতার সময় আকর্ষণ করেছে সর্ব শ্রেণির মানুষকে।
বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসতে কোনো নির্দিষ্ট সময় লাগে না।আনুষ্ঠানিকতা লাগে না। সবসময় বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি। তাঁর জন্য দোয়া করি। তিনি আছেন প্রার্থনায়। বাঙ্গালী হিসেবে নিজনিজ অবস্থান থেকে তার জন্য প্রার্থনা করাই সর্বশ্রেণীর মানুষের উচিত।
অপরদিকে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা করতে গিয়ে মনের অজান্তেই আমরা তাকে খাটো করে ফেলি। তিনি বিশ্বনেতাদের মধ্যে অন্যতম, তাঁর ভাষণ বিখ্যাত এবং বাচনভঙ্গি প্রশংসনীয়। অথচ আমরা অনেকেই তাকে বলি শুধু আওয়ামিলীগ নেতা,যা দুঃখজনক। তিনি বাংলা ভাষার সম্মানার্থে এবং বাংলাদেশের জন্য চেষ্টা /যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। তাই যারা বাংলাদেশি এবং বাংলায় কথা বলে, তিনি তাদের নেতা। তিনি দলমত নির্বিশেষে বাংলাভাষী বাংলাদেশিদের নেতা এবং বিশ্ব নেতাদের মধ্যে অন্যতম। তাছাড়া তিনি কারো মতো নয়, বঙ্গবন্ধু শুধু বঙ্গবন্ধুর মতোই; তাঁর বিকল্প হয় না।
বঙ্গবন্ধু আছেন অসংখ্য বইয়ের পাতায়, তিনি আছেন মননশীল লেখকদের অন্তরে; যা প্রমাণিত হয় তাঁকে নিয়ে রচিত অজস্র বই পড়লে। প্রতি বছর একুশে বইমেলায় কিংবা বাংলাদেশের যেকোনো বই মেলায় তাকে নিয়ে রচিত হয় সর্বাধিক সংখ্যক বই।তাঁর সময়কাল থেকে শুরু করে কোনো নেতাই জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ছড়িয়ে যেতে পারেনি। তাকে নিয়ে রচিত হয় কাব্য, মহাকাব্য ও অন্যান্য সাহিত্য কিংবা প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও গবেষণা গ্রন্থ। বিশ্বের ইতিহাসে নিঃসন্দেহ তিনি একজন জনপ্রিয় জননেতা। আর তাঁকে নিয়ে রচিত বইয়ের প্রতিটি শব্দ বঙ্গবন্ধুময়। শব্দগুলো যেন কথা বলে, দেশের কথা বলে, মানচিত্রের কথা বলে, মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে, লাল-সবুজের পতাকার কথা বলে এবং এই দেশ, মাটি ও মেহনতি মানুষের কথা বলে।
বিজ্ঞান ও বঙ্গবন্ধু যেন সমার্থক শব্দ। বঙ্গবন্ধু জন্মগ্রহণ না করলে বাঙ্গালী বিজ্ঞান চর্চা থেকে বহু আলোকবর্ষ দূরে পিছিয়ে থাকতো।
আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশ মূলত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাস্তবায়ন। তাছাড়া জানতে পারি যে,স্বাধীনতার পর তাঁর বিভিন্ন ভাষণ ও বক্তব্যে বলেছেন যে,আমরা বিজ্ঞানবান্ধব না হলে অগ্রগতি লাভ করতে পারব না।আমি ফিজিক্সের ছাত্র হিসেবে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অস্বীকার করতে পারি না। আবার অন্য নেতাদেরকেও খাটো করে দেখতে পারি না। তাদেরকে নিয়েও লিখব অন্যকোনো সময়, ইনশাআল্লাহ।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন একাধারে রাজনীতির কবি, বিজ্ঞানমনস্ক, কৃষক বন্ধু, শিক্ষাবিদ অর্থাৎ তিনি এমন একজন মানুষ, যার নামকে যেকোনো সুন্দর বিশেষণে বিশেষায়িত করা যায়।তার এককথা হাজার কথার সমান। যা বলতেন, প্রয়োজনে বলতেন। ব্যাকরণের মাপকাঠির ভিত্তিতে বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, তিনি ছিলেন ভাষা সচেতন মানুষ। তাঁর বক্তব্যের প্রতিটি শব্দ যেন হিরা, মুক্তা, সোনা ইত্যাদি।
চাঁদপুরের মাটি ধন্য, বঙ্গবন্ধুর জন্য। জানা যায় যে, ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৬৮ সালের যেকোনো এক সময়ে চাঁদপুর জেলার বারেক ময়দানে( বর্তমান শেরে বাংলা হোটেল সংলগ্ন পুকুর) বিশাল এক সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছিলেন বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং রাত্রি যাপন করেছিলেন জোড় পুকুর পাড়ের রাবেয়া ম্যানশনে মরহুম হাজী আব্দুল করিম সাহেবের বাসায়। তথ্যসূত্রঃ মাসুদ হাসান।একজন মহান নেতা জীবনের কিছু অংশ হলেও চাঁদপুর অবস্থান করেছেন, এটা চাঁদপুর বাসীর জন্য স্মরণীয় মুহূর্ত এবং অসাধারণ প্রাপ্তি। আমি একজন চাঁসকিয়ান( চাঁদপুর সরকারী কলেজ শিক্ষার্থী ) হিসেবে প্রাউড ফীল করি। সত্যিই, চাঁদপুরে বঙ্গবন্ধু তাঁর পদধূলি রেখে গেছেন বলেই চাঁদপুরের মাটি ও মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র রয়েছে এক প্রগাঢ় টান। চাঁদপুরের মেঘনা কন্যা মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মণি চাঁদপুরের জন্য যখন যা চান তা দিতে কুণ্ঠাবোধ করেন না মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। চাঁদপুরের প্রতি বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গবন্ধু কন্যার ভালোবাসা দেখে নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, চাঁদপুরবাসী ধন্য, বঙ্গবন্ধুর জন্য।
সবিশেষ বলতে চাই যে, শিক্ষার প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা, বিজ্ঞানের প্রতি একাগ্রতা এবং ধর্মের ক্ষেত্রে উদারতা ছিলো অসাধারণ। তিনি ধর্মান্ধ ছিলেন, তিনি ছিলেন ধার্মিক বাঙালি নেতা।তিনি ছিলেন, তিনি আছেন এবং তিনি থাকবেন।
রাসেল ইব্রাহীম, শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ (মাস্টার্স) , চাঁদপুর সরকারী কলেজ, চাঁদপুর।