বিল্লাল ঢালী:
“এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়। এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।” কবি হেলাল উদ্দিনের কবিতার দু’লাইন যুবকদের উদ্দীপনার মূল মন্ত্র বলা যেতেই পারে। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে এ যুবসমাজের হাত ধরেই। বর্তমানে সারাবিশ্ব করোনাকালীন সময় পার করছে। করোণা যুদ্ধে মাঠে কাজ করছে প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। আর এ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দলনেতা বয়স্ক বা প্রাজ্ঞজন হলেও কাজ করছে তরুণরাই। মাঠে প্রশাসনের সহযোগি হিসেবেও কাজ করছে যুবসমাজ।
করোণা মহামারীতে সারা বিশ্বের মতো টালমাটাল অবস্থা শুরু হয় চাঁদপুরেও। ঘোষণা করা হয় সাধারণ ছুটি। বন্ধ হয়ে যায় সকল কর্মব্যস্ততা। মহামারীতে মানুষকে ঘরে রাখা এবং সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জীবনধারণ স্বাভাবিক রাখা হয়ে যায় কঠিন চ্যালেঞ্জ। সরকারি সকল দপ্তর ব্যস্ত হয়ে পড়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায়। যদিও সরকার এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে সুপরিকল্পিত ভাবে। আর এ কর্মযজ্ঞ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করার কৃতিত্ব সরকারের পাশাপাশি তরুণ ও যুব সমাজের।
করোনা মহামারীতে জীবনমান স্বাভাবিক রাখতে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন হাতে নিয়েছে নানারকম ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ যারা চক্ষুলজ্জায় কারো কাছে চাইতে পারে না, তাদের জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে হট লাইন নম্বর চালু করা হয়। হট লাইন নম্বরে প্রাপ্ত ঠিকানা অনুযায়ী স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দেয়া হয়। পুরো কার্যক্রমটিতে যুক্ত ছিল পঞ্চাশ জন স্বেচ্ছাসেবক যুবক। স্বেচ্ছাসেবক যুবকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে সফল প্রশাসনের উদ্যোগ ত্রাণ যাবে বাড়ি/ প্রধানমন্ত্রীর উপহার যাবে বাড়ি। এছাড়াও সাধারণ মানুষকে ঘরে রাখা, মাক্স পরিধান নিশ্চিত করা, করোনা আক্রান্ত রোগীর তথ্য সংগ্রহ করা, আক্রান্ত রোগীর বাড়িতে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া সকল কাজেই যুবকদের অংশগ্রহণ ছিল প্রশংসনীয়। এসব কাজে অংশগ্রহণ করেছে ২শ জন স্বেচ্ছাসেবক যুবক। স্বেচ্ছায় কাজ করেছে প্রশাসনের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে।
মহামারীকালে স্বেচ্ছাসেবী কাজে যুবকদের অংশগ্রহণ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, দেশের দুর্দিনে মানুষের সহযোগিতায় যুবকদের অংশগ্রহণ ইতিবাচক দিক। সরকারের পাশাপাশি সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো যেভাবে এগিয়ে আসছে এটা আমাদেরকে মুগ্ধ করেছে। এরা চমৎকার কাজ করেছে। আমরা এদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী দিয়েছি। তাই নিয়ে তারা নিরলসভাবে কাজ করেছে। আমি আশাবাদী এরা বড় হয়ে যখন আরো বড় জায়গায় কাজ করবে এদের দ্বারা আরো ভালো কাজ হবে এবং দেশের বিপদে যে কোন সময় আমরা তাদের পাশে পাব।
দেশের করোনা দুর্যোগ অবস্থায় সরকারের পাশাপাশি কাজ করেছে অনেক নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সংগঠনগুলোর পরিচালনায় বয়স্ক বা মধ্যবয়সী ব্যক্তি হলেও সামাজিক কাজগুলো বাস্তবায়নে মাঠে ছিল যুবসমাজ। তারুণ্য নির্ভর এইসব সংগঠন নজর কেড়েছে সমাজে সকলের। চাঁদপুর শহরে তেমনি একটি সংগঠন কিউআরসি। চাঁদপুর পৌরসভার বর্তমান মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল এর নেতৃত্বে এই সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। করোনা দুর্যোগে কাজ করে সাধারণ মানুষের নজর কেড়েছে সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবক যুবকরা। আলোর জয়যাত্রা স্লোগান বুকে ধারণ করে করোণা শুরু থেকে কাজ করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘নোঙ্গর’। এছাড়া আরো অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মহামারীতে কাজ করেছে যা প্রশংসার দাবিদার। এসব সংগঠনের কর্ম বাস্তবায়নের মূল হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছে যুবকরা।
স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করা এইচ এম জাকির হোসেন বলেন, নিজের দুঃসময়ে অপরের সহযোগিতায় সুসময়ের স্বাদ পাওয়ার উপলব্ধি থেকেই মূলত আমার মানবসেবার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠা। সামর্থ হওয়ার পর থেকেই অপরের সহযোগিতায় এগিয়ে যাই এবং আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি শারীরিক ও নিজ মেধার বিচরণ ঘটিয়ে সহযোগিতা করে আসছি। এককথায় একজনের শারীরিক, মানসিক অথবা আর্থিক সামান্য সহযোগিতা অন্যজনকে বেড়ে উঠতে শেখার অনুভূতি থেকেই স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করার আগ্রহী হয়ে উঠি।
স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করা আরেকজন মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, দেশ ও সমাজের একটি অংশ হিসেবে এর উন্নয়নের জন্য কাজ করতে পারা সত্যিই একটি দারুণ ব্যাপার। আমরা হয়তো অনেক বড় কোন কাজ করছি না। কিন্তু আমার এই কাজটুকু অনেক বড় একটা কাজেরই অংশ যা সমাজে কোন না কোনোভাবে পরিবর্তন আনছে। এই প্রাপ্তিটুকু অনেক। দেশ কিংবা সমাজ থেকে তো আমরা অনেককিছুই নিচ্ছি। এর প্রতিদান দেওয়ার খুব সুন্দর আর কার্যকর একটা মাধ্যম হতে পারে স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ।
সাংগঠনিক দক্ষতা আর দলগত কাজের মত দক্ষতা অর্জন করা যায় স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের মাধ্যমে। কাজ করতে গিয়ে আমরা শিখতে পারি অনেক কিছু। যে বিষয় নিয়েই কাজ করি না কেন সে বিষয়টি সম্পর্কে হাতেকলমে জ্ঞান অর্জনের সুযোগ থাকে এ ধরণের কাজে। নেটওয়ার্কিং এর একটা দারুণ জায়গা হলো স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ। অনেক ধরণের মানুষের সাথে মেলামেশার মাধ্যমে আমার চেনাজানা লোকের পরিধি বাড়বে। সেই সাথে বাড়বে সুযোগও। ভিন্ন মাধ্যমের মানুষজনের সাথে কাজ করা, পরিচয় ও বন্ধুত্বের চমৎকার সুযোগ থাকে স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে।