বিশেষ প্রতিনিধি :
চাঁদপুরের চরাঞ্চলে কোন প্রকার স্থায়ী নয়, অস্থায়ী স্থাপনা বাস্তবায়ন করা যেন সময়ের দাবি। ইতোমধ্যে চরাঞ্চলে কয়েক দফা স্থায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন করে গচ্ছা গেছে সরকারের কোটি কোটি টাকা। যা নূন্যতম উপকারে আসেনি চরের মানুষের জীবনে। তাই অস্থায়ী প্রকল্পের চিন্তা করে ভবিষ্যত পরিকল্পনা সাজাতে হবে। এতে যেমনি সরকার আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে বাঁচবে তেমনি উপকৃত হবে চরাঞ্চলে বসবাসকারি সাধারণ মানুষ।
নদী সকিস্ত জেলা চাঁদপুর। প্রতিবছর নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বিলীন হয় বিস্তীর্ণ এলাকা। বিশেষ করে চরের বিভিন্ন এলাকা। বন্যা প্লাবিত হয় চর ও নিম্নাঞ্চল। বর্ষা মৌসুমে জেলার নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী আতঙ্কে দিন অতিবাহিত করে। নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে প্রতিবছর নিঃস্ব হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। সরকার এসব জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে, জীবনের নিরাপত্তার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে। দুর্বল পরিকল্পনার কারণে সরকারের এসব প্রকল্প ভেস্তে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে প্রকল্পের সুফল থেকে। গচ্ছা যাচ্ছে সরকারি কোটি কোটি টাকা। প্রকল্প কর্মকর্তাগণ নানারকম বাহানা বা একে অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন। জনসাধারণের দুর্ভোগ থেকেই যাচ্ছে।
গত জুলাই মাসের শেষের দিকে নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বিলীন হয় নবনির্মিত রাজরাজেশ্বর ওমর আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাল্টিপারপাস সাইক্লোন সেন্টার ভবন। ভবনটি নির্মাণের পরে উদ্বোধনের সুযোগটুকুও পায়নি। তলিয়ে যায় নদী গর্ভে। সাথে ডুবে যায় সরকারের ব্যয় করা আড়াই কোটি টাকা। মূলত রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নে কোন সাইক্লোন সেন্টার ছিল না। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষ আশ্রয় নেবে সে সুযোগও ছিল না। তাই সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে সাইক্লোন সেন্টার তৈরীর উদ্যোগ নেয়া হয়। চাঁদপুর সদর উপজেলা পিআইও ও নির্বাহী কর্মকর্তা দুজনের তত্ত্বাবধানে ডিজাইন ড্রইং এর উপর ভিত্তি করে কাজ সম্পন্ন করা হয়। ২০১৫ সালে প্রস্তাবিত ভবনটির কাজ সম্পন্ন হয় ২০২০ সালের প্রথম দিকেই। কিন্তু উদ্বোধনের আগেই তলিয়ে যায় ভবনটি।
চাঁদপুর ত্রাণ ও পুর্নবাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থ বছরে কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। এরমধ্যে বিশেষ করে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ৩২টি আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি হবে। ইতোমধ্যে হাজীগঞ্জে ৪টি, হাইমচরে ২টি, মতলব দক্ষিণে ২টি, মতলব উত্তরে, সদর ও শাহরাস্তিতে একটি করে মোট ১১টি ভবনের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এরমধ্যে হাইমচরের ঈশানবালা এমজেএস উচ্চ বিদ্যালয় বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এ বিদ্যালয়টি কয়েক দফায় ভাঙনের কবলে পড়ে। যে কারণে বেশ কয়েকবার বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করা হয়েছে। তারপরেও তিন তলা বিশিষ্ট এ বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ স্থানীয় সচেতন মহল চাচ্ছে চরে স্থায়ী ভাবে ভবন নির্মান না করে অস্থায়ী অবকাঠামো নির্মান করাই উত্তম।
এ বিষয়ে নীলকমল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালাউদ্দীন সরদার জানান, ঈশানবালা এমজেএস উচ্চ বিদ্যালয় দুই বার ভেঙেছে। তবে এবার যেখানে স্কুল ভবন অর্থাৎ বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র করা হচ্ছে। নদী থেকে তার দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। সেহেতু ওই এলাকায় ভাঙনের সম্ভবনা খুবই কম। তারপরেও তিনি স্থায়ী স্থাপনের বদলে অস্থায়ী স্থাপনা করার পক্ষেই মত দিলেন।
চাঁদপুর ত্রাণ অফিসের তথ্য মতে, অনেক ক্ষেত্রে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাজের টেন্ডারসহ সকল প্রক্রিয়া মন্ত্রণালয় থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এক্ষেত্রে অনেক তথ্যও এ অফিসে জানানো হয় না। তবে উপজেলা পর্যায়ের অফিসগুলো এসব তথ্য জেনে থাকে।
চাঁদপুর সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, যেসব স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা ছিলো তা বাতিল করা হয়েছে। লক্ষ্মীপুর, ইব্রাহমীপুর ও রাজরাশ্বের এখন আর স্থায়ী অবকাঠামো করবো না। বিশেষ করে তিন বছর ধরে এ চরগুলো নিয়মিতই ভাঙছে। মুজিব কিল্লা প্রকল্প নির্মাণ কাজ বন্ধ করার পরিকল্পনা রয়েছে। ইব্রাহীম পুরো কোনো ব্রীজ কালভার্টও নির্মাণ হবে না। ইব্রাহীম পুরে মুজিব কিল্লা, হানারচর, চরফতেজংপুর মুজিব কিল্লাসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ না করার জন্যে সিন্ধান নেয়া হয়েছে। তারপরেও আমরা চেষ্টা করি ভালো করার জন্যে কখনো কখনো প্রাকৃতিক কারণে ক্ষতি হবে তা কল্পনাও করি না।
চাঁদপুর ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা কে বি এম জাকির হোসেন জানান, নতুন প্রকল্পগুলোর কাজের ব্যাপারে অবশ্যই পরিকল্পনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান জানান, চরে কোনো স্থায়ী স্থাপনা বা অবকাঠামো নির্মাণ হবে না মর্মে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্প ফিরিয়ে নতুন করে পরিকল্পনা করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।