রিফাত কান্তি সেন:
কাগজের পত্রিকা বা ছাপা পত্রিকা মানেই এক ভিন্ন রকম অনুভূতি। হোক সাদাকালো, সেখানে মিশে থাকে এক মায়াময়ী আবেগ। গল্পটা প্রাচীন রোমের। ঠিক সেসময় অ্যাক্টা দিউরমা বা সরকারের ঘোষণা পত্র প্রকাশ করা হত এবং সেটিকে ধাতু বা পাথরে খোদাই করে জনসমাগম হয়, এমন জায়গায় টাঙিয়ে দেয়া হত। শুনা যায় যে অষ্টম শতকের দিকে চিনে ‘কাইয়ুয়ান ঝা বাও” নামে একটি রাজকীয় পত্রিকা প্রকাশের অস্তিত্ত পাওয়া যায়। এছাড়া মুসলমান রাজত্বকালে ভারতবর্ষে সংবাদপত্রের প্রচলন ছিল তবে সেটি ছাপা নয়, হাতে লেখা। সেসব পত্রিকা দেশের প্রধান প্রধান রাজকর্মচারীদের নিকট প্রেরণ করতো। বিভিন্ন দেশের সংবাদপত্র একত্র করে সেটি নাকি সম্রাটের কাছে পৌঁছে দিত। যুগে যুগে সংবাদপত্র বার্তা বাহকের কাজটিই করে এসেছে। কত শত মানুষের না বলা কথা তুলে ধরেছে পত্রিকা সে হিসেব না ই কষলাম।
সংবাদপত্র হলো একটি দেশের প্রাণশক্তি। দেশের কোন অঞ্চলে কখন কী ঘটছে তার বিস্তারিত খবর পাওয়া যায় সংবাদপত্রের মাধ্যমে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের আগে অবশ্য উপমহাদেশে সংবাদপত্রের এতো প্রচলন ছিল না। ইতিহাস বলছে যে ১৭৮০ সালে জেমস অগাস্টাস হিকি স্থানীয় ইংরেজদের জন্য বেঙ্গল গেজেট নামের দুই পাতার একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করতো। কিন্তু ওয়ারেন হিস্টিং তার পত্নী এবং ইংরেজ বিচারকদের সম্পর্কে সমলোচনামূলক প্রকাশের দরুন পত্রিকাটি বাজেয়াপ্ত হয়।
পত্রিকাটি রাজা রামমোহন রায়ের সহায়তায় শিক্ষক গঙ্গা কিশোর ভট্টাচার্য প্রথম বাংলা সাপ্তাহিক বেঙ্গল গেজেট প্রকাশ করেন। ১৮১৮ সালের ২৩ মে বেঙ্গল গেজেটটি প্রকাশের এক সপ্তাহের মধ্যেই সমাচার দর্পণ প্রকাশিত হয়। মূলত সংবাদপত্রের কাজই হচ্ছে তৃণমূল, নিপিড়িত, অসহায় মানুষের জীবনের গল্প তুলে ধরা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সচ্চার থাকা। জনকল্যানকর সংবাদ উপস্থাপন করা। কোন কালেই সংবাদপত্র ছাড় দিয়ে কথা বলেনি। সাদা কে সাদা, কালোকে কালো বলতে দ্বিধা করেনি।
“দৈনিক শপথ” কিন্তু ধরেই দৈনিকে রূপান্তর হয়নি। বহু কাটখড় তাকেও পোহাতে হয়েছিলো। ব্যতিক্রম সব সংবাদ দিয়েই সাজানো হয়েছিলো তার প্রতিটি সংখ্যা। ফিচার কিংবা বিনোদনে ও কমতি ছিল না। সর্বোপরি জনকল্যানকর সংবাদ উপস্থাপনে শপথের ‘শপথ’ ছিল মজবুত।
অন্যায়কে প্রশ্রয় নয়, যেখানে অনিয়ম ঘটেছে সেখানেই কলম তুলেছে একঝাঁক তরুণ, মেধাবী সংবাদকর্মীরা। সংবাপত্রের প্রাণ হচ্ছে পাঠক। পাঠকের অকুণ্ঠ ভালবাসা ছাড়া কখনোই কোন পত্রিকা টিকে থাকতে পারেনি। কারণ পাঠকই যদি না থাকে তবে সংবাদ পৌঁছাবে কার কাছে। এদিক চিন্তা করলেই দেখা যাবে যে এই চার বছরে দৈনিক শপথ এগিয়েছে দ্রুত গতিতে। নিত্য নূতন সব সংবাদ উপস্থাপন করে হৃদয়ের মনিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছে সাধারণ মানুষের।
শপথ কেন পড়বে পাঠকঃ একটি পত্রিকা তখনই পাঠক পড়ে যখন সেখানে এমন কিছু খবর পাওয়া যায় যেগুলোতে সাধারণ মানুষের কথা থাকে। যেখানে খবরে থাকে ভিন্নতা, উপস্থাপনায় থাকে নান্দনিকতা। পত্রিকার একটি শিরোনামেই অনেক কিছু ঘটে যায়। অনেকের দৃষ্টি পড়ে শিরোনামের দিকে। প্রাঞ্জল আর সহজবোধ্যতা যেখানে বিদ্যমান সে খবরই পাঠক খোঁজে। বর্তমানে যেহেতু আধুনিক যুগ সেখানে তথ্য হচ্ছে সবচেয়ে বড় নির্ভরতার নাম। সেখানে চিন্তা করতে গেলে শপথ বস্তুনিষ্ট সংবাদ তুলে ধরার প্রত্যয়ে কাজ করে চলেছে অবিরাম।
শপথ কেন সাংবাদিক বান্ধব প্রত্রিকা: শপথের যিনি সম্পাদক তিনি মনে প্রাণে একজন পেশাদার সাংবাদিক। নিশ্চয়ই আপনারা কাদের পলাশকে ভিন্নভাবেও চিনেন। তিনি একাধারে একজন সাহিত্যক ও গল্প, গান সব জগতেই তার বিচরণ। একজন পত্রিকার মালিক যদি সংবাদকর্মী হন তখন সেখানে সাংবাদিকরা প্রাণখুলে কাজ করতে পারেন। অনেকটা স্বাধীনচেতাভাবে। শপথ প্রত্যেকটি সংবাদকর্মীকে একেকজন পত্রিকার মালিকই মনে করেন। কারণ পত্রিকাটির ভাল মন্দ সব কিছুতেই সংবাদকর্মীদের নিরলস পরিশ্রমের ফলেই গড়ে ওঠে। নগর সভ্যতা এবং আধুনিক এই যুগে ছাপা বা মুদ্রিত পত্রিকা যেখানে টিকে থাকতে কষ্ট হচ্ছে সেখানে শপথ যেন দিব্যি আলো ছড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর সে কাজটি কিন্তু করে যাচ্ছে এই পত্রিকার সাথে সংশ্লিষ্ট সংবাদকর্মীরাই। অঁজোপাড়া গাঁ থেকে শুরু করে করে শহরের আনাচ-কানাচের সংবাদ হওয়ার মত সংবাদই তুলে ধরছেন তারা। মূলত সাংবাদিক বান্ধব সম্পাদকীয় নীতিমালার কারণেই এমন সাফল্য পাচ্ছে পত্রিকাটি।
শপথের পথচলা: সময়টা খুব অল্প হলেও মহামারির কালে টিকে থেকে পাঠক পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে পত্রিকা বের হয়েছে প্রতিদিনই। সব বাঁধা উপড়ে ফেলে পত্রিকাটি এগিয়েছে অদম্য গতিতে। শিক্ষা-সংস্কৃতি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে দৈনিক শপথ। যেখানেই অসংকোচ সেখানেই রুখে দাঁড়িয়েছে এখানে কর্মরত সংবাদকর্মীরা। কণ্ঠরোধ নয়, বরং উঁচু কণ্ঠেই গেয়েছে মানুষের জয়গান। সত্য বলার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাওয়া সংবাদ মাধ্যমটি সত্যিকার্থেই সত্য ও বস্তুনিষ্ট সংবাদ পরিবেশন করে আসছে পাঠকের কাছে। এ লেখাটি যখন লিখছিলাম ঠিক তখন চলতি বর্ষের তিনশত পয়তাল্লিশটি সংখ্যা মুদ্রিত হয়েছে পত্রিকাটির। বরাবরের মতই শপথ আধুনিকতার সংমিশ্রণে সাজিয়েছে ডিজিটাল ফ্লাটফর্ম। ওয়েবসাইটে ক্লিক করেও পড়া যায় খবর। মুদ্রিত কাগজটির লিড নিউজগুলোও গুরুত্বপূর্ণ সংবাদে পরিপূর্ণ থাকে। নাগরিকের সমস্যা তুলে ধরে সেসব সমস্যার সমাধান ও খুঁজেছে এখানকার এক ঝাঁক তরুণ-উদিয়মান সংবাদকর্মীরা। উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো নিয়ে বার বার রিপোর্ট করে নজরে আনার চেষ্টা করেছে প্রশাসনের। শপথ শুধু এখন একটি পত্রিকাই নয়, এটি সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর। নিপিড়িত মানুষ সেখানে স্বস্তি-সাহস পায়।
শপথ এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা: শপথ মানেই যে ভিন্নতা এতে তো আর কোন সন্দেহ নেই। শপথের স্লোগানই সত্য বলার। সু-সাংবাদিকতা চর্চার এই মাধ্যমটি গণমানুষের ভালবাসায় আরো বহুদূর এগিয়ে যেতে চায়। লেখাটি শেষ করার আগে সুকান্ত ভট্টাচার্যের দেয়ালিকা কবিতার কয়েকটি লাইন আবারো স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে লিখি কথা। আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার স্বাধীনতা। ঠিক তাই, এটি দেয়ালিকা না হলেও আছে লেখার স্বাধীনতা। মানুষের কথাই ছাপা হয় শপথে। বাদ যায়না প্রাণীকূলও। যাবার বেলায় আবার বলে যাই, কখন বাজল ছ’টা/ প্রাসাদে প্রাসাদে ঝলসায় দেখি শেষ সূর্যের ছটা- স্তিমিত দিনের উদ্ধত ঘনঘটা। চতুর্থ বর্ষে শপথের এই পথচলায় আপনাদের সঙ্গী হতে পেরে আনন্দিত শপথ পরিবার।