সুমন আহমেদ:
ঘন কুয়াশায় ক্রমশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ নৌপথ। বিপরীতে কুয়াশায় নির্বিঘেœ চলা যায় এমন আধুনিক যন্ত্রপাতিও নেই কোনো লঞ্চে। ফলে ঘন কুয়াশায় বিগত সময়ের ন্যায় ছোট-বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমনকি এই সময়ে কুয়াশার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতেও পারছে না লঞ্চগুলো। তাই শীত মৌসুমে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন যাত্রী ও লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা।
তবে সংশ্লিষ্টদের দাবি, শীতের রাতে নদীপথে চলাচলে বড় বাঁধা যত্রতত্র বাল্কহেড। এটি বন্ধ করা গেলে লঞ্চ চলাচলে ঝুঁকি কমবে। তাই রাতের বেলায় বাল্কহেড বন্ধ রাখার দাবি তাদের। এছাড়াও ঘন কুয়াশার কারণে মেঘনা নদীতে লঞ্চ চলাচল ব্যাহত হওয়ায় প্রতিনিয়ত দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের।
জানা গেছে, চাঁদপুরের দক্ষিণে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী থেকে মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল পর্যন্ত প্রায় ৯০ কিলোমিটার নৌ-সীমানা। এই সীমানার পদ্মা-মেঘনার চ্যানেল দিয়ে চাঁদপুরের ছোট-বড় প্রায় ৪০টি যাত্রীবাহী লঞ্চসহ দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকশ লঞ্চ যাতায়াত করে। কিন্তু চাঁদপুর নৌ-সীমানায় প্রতিবছর শীত মৌসুমে ঘন কুয়াশার কবলে পড়ে প্রায়ই যাত্রীবাহী লঞ্চ, লাইটার জাহাজ ও মালবাহী ট্রলারসহ বিভিন্ন নৌযান জেগে ওঠা ও ডুবোচরে আটকা পড়ে।
সুত্র মতে, চাঁদপুরের মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ে রয়েছে প্রায় ৩৫টির বেশি চর। শীত এলেই চরের মধ্যে লঞ্চগুলো আটকা পড়ে। অথচ পরিকল্পিতভাবে বিগত সময়ে চাঁদপুরের এসব বিঘœ সৃষ্টিকারী চরের বালু উত্তোলন না করে ডিজাইন বহির্ভূত স্থান থেকে নদীর বালু উত্তোলন করায় শহররক্ষা বাঁধও হুমকিতে পড়েছে।
আলাপকালে হাইস্পিড কোম্পানির চাঁদপুরের লঞ্চ মালিক প্রতিনিধি বিপ্লব সরকার বলেন, নৌপথগুলোতে নাব্যতা সংকট হলে সাধারণত লঞ্চের মাস্টার ও জাহাজগুলোর ক্যাপ্টেন বিআইডবিøউটিএর নৌ সওজ বিভাগকে অবহিত করেন। তারাই সরেজমিন পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেন।
চাঁদপুর বন্দর কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, চাঁদপুর-ঢাকা ও চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ নৌপথে বহু যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করছে। মতলব উত্তর ষাটনল থেকে আনন্দ বাজার, চাঁদপুর-হিজলা, চাঁদপুর-নন্দিরবাজার, চাঁদপুর-মাদারীপুর, চাঁদপুর-মাওয়াসহ বেশ কিছু ছোট-ছোট শাখা নদী রয়েছে এই নৌপথে। শীত মৌসুমে ঘন কুয়াশার কারণে অনেক সময় চরে লঞ্চ আটকা পড়ে।
তিনি আরও বলেন, বয়া ও বিকন বাতিগুলো অনেক মূল্যবান। ওই বিষয়টি নৌ সংরক্ষণ ও পরিবহন (সিএনপি) বিভাগ দেখে। তারা প্রতিনিয়ত চর, ডুবোচর ও নৌপথ সার্ভে করে। আমি এখানে নতুন এসেছি। এখন পর্যন্ত চরে আটকা পড়া বা সমস্যা নিয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, চাঁদপুর নৌ সীমানায় বর্তমানে বড় ধরনের কোনো চর জেগে ওঠেনি। তবে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধে একটি চর খনন করার জন্য প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। সেই প্রস্তাবটি মন্ত্রণালয় গ্রহণ করে তিনবার দরপত্র আহŸানও করেছে। তিনি বলেন, এ প্রকল্পটি যখন নেয়া হয় তখন চরটি ছিল ৬০০ মিটার চওড়া ও ৭ কিলোমিটার লম্বা। কিন্তু পরে সেই চরটি ১৪ কিলোমিটার লম্বা ও ২ কিলোমিটার চওড়া হয়ে যায়। এ নিয়ে তখন একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করে চর খননের বাস্তবতা ভিজিট করা হয়। পরে ওই টেকনিক্যাল কমিটির রিপোর্টের আলোকে বাস্তবতা ও অর্থের ব্যাপকতার বিষয়টি মাথায় রেখে ড্রেজিং প্রকল্পটি বাতিল করা হয়। পরে সাশ্রয়ী ওই অর্থ দিয়ে বর্তমানে চাঁদপুর সদরের হানারচরে ১৬০০ মিটার নদী তীর সংরক্ষণ কাজ শুরু করা হয়। চরভৈরবীর চর খননের ব্যাপারে তিনি বলেন, সরকার যদি এ ব্যাপারে বড় ধরনের কোনো প্রকল্প নেয় তখন ওই চর খনন করা সম্ভব হবে।