এম এ লতিফ:
এতিম ছেলে-মেয়ের মুখের দিকে তাকালে ওদের বাবার কথা মনে পড়ে যায়। যদিও স্বামীকে হারিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দয়ায় তিন ছেলে ও এক মেয়ের মুখে দুবেলা দুমুঠো ভাত তুলে দিতে পারছি। কিন্তু বাবার ভালবাসাতো আর দিতে পারিনি। এখনও ওরা তার বাবার ছবির দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলে। এমনি ভাবে অশ্রæসিক্ত নয়নে কথাগুলো বললেন ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার পাঁচআনী গ্রামের আতিক উল্লাহর স্ত্রী লাইলী বেগম।
তিনি শপথকে বলেন, ওই ঘটনার পর ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী আমার দুসন্তানকে যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকুরির প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিশ্রæতির ৫ বছর পার হয়ে গেছে। অথচ আজও মেলেনি সরকারি কোন চাকুরি। তাইতো এতিম সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত আমি। তবে প্রধানমন্ত্রীর দয়ায় প্রতিক্ষায় আজও প্রহর গুনছি।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে অনেক সহযোগীতা করেছেন। তিনি সহযোগীতা না করলে হয়তোবা খেয়ে না খেয়েই কাটতো দিন। তবে ছেলেগুলো দিন দিন বড় হচ্ছে। ফলে ক্রমশ বাড়ছে থাকার সমস্যা। কিন্তু ওদের বাবা সামান্য যে জায়গা রেখে গেছেন, বাধ্যহয়েই স্বামীর রেখে যাওয়া সেই ছোট্র বসতভিটায় কষ্ট করেই থাকছি আমরা। শুনেছি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রæত ফ্লাট অনেকে পেয়েছেন। কিন্তু আমাদের ভাগ্যে তা আজও জোটেনি।
নিহত আতিক উল্লাহর বড় ছেলে মো. মিথন সরকার জানায়, বাবার অভাব কখনো পূরণ হবার নয়। আজও আমার মা কাঁদে। রাতের আঁধারে মায়ের সেই কান্না আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় বাবার সব স্মৃতি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উছিলায় আজও আমরা দুবেলা দুমুঠো খাচ্ছি। তবে তিনি আমাদেরকে চাকুরি দেয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন। কিন্তু আদৌ মেলেনি সেই চাকুরি। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ যোগ্যতা অনুযায়ী একটা চাকুরি দিয়ে আমাদের পরিবারকে একটু সহায়তা করুণ।
নৃশংস হত্যাকান্ডের ১৮ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো নিহত মতলব উত্তরের আতিক ও হাইমচরের কুদ্দুছকে ভূলতে পারেনি তাদের স্বজনরা। প্রিয়জনদের হারানোর বেদনা এখনো তাদের কাঁদায়। যদিও সরকারি ভাবে তাদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগীতা করা হয়েছে, কিন্তু ফিরিয়ে দিতে পারেনি তাদের স্বামী সন্তানকে। তাইতো প্রতিটি মূহুর্তে তাদের অভাব তাড়া করে বেড়ায় স্বজনদের।
এদিকে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঘটে যাওয়া গ্রেনেড হামলার রায় হলেও পুণরায় আপিল করায় এখন হাইকোর্টে তা বিচারাধীন। এমতাবস্থায় বিচারের রায় দ্রæত শেষ করার দাবি জানিয়েছেন ওই ঘটনায় নিহত চাঁদপুরের মতলব উত্তরের পাঁচআনী গ্রামের আতিক উল্ল্যাহ ও হাইমচর উপজেলার আবদুল কুদ্দুছের স্বজনরা। দীর্ঘ ১৮ বছরেও এ হত্যাকান্ডের বিচারকার্য শেষ না হওয়ায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
যদিও ঘটনার পর প্রাথমিক ভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই দুপরিবারেকে ১১ লাখ টাকা করে অনুদান দেন। এরপর পুণরায় গত ২০১৮ সালের ১৩ এপ্রিল আতিক উল্লাহর ৪ সন্তান ও স্ত্রীকে ২৫ লাখ টাকা এবং কুদ্দুছের ৮ ভাই-বোনকে ১৬ লাখ টাকা দেন। যা দিয়ে তাদের পরিবারে কিছুটা স্বচ্ছলতা ফিরে আসলেও বাবা ও ভাইয়ের অভাব পূরণ হয়নি।
অপরদিকে ওই হামলায় নিহত হাইমচরের আব্দুল কুদ্দুছ ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা। দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে বিচারের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন তার স্বজনরা। কুদ্দুছের বড় ভাই হুমায়ুন কবির পাটওয়ারী বলেন, দীর্ঘ ১২ বছর ছেলে হত্যার বিচারের প্রতীক্ষায় থেকে ২০১৬ সালে মারা যান আমার মা আমেনা বেগম। অবশেষে রায় হলেও বাস্তবায়ন না হওয়ায় চিন্তিত আমরা। তাই আশা করছি আমার মা ভাইয়ের আতœার শান্তির জন্য যত দ্রæত সম্ভব বিচারের রায় কার্যকর করা হউক।
মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ কুদ্দুছ জানান, শুধু কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়েই ওইসব পরিবারের শোক মুছে ফেলা যাবে না। অপরাধীরা শাস্তি পেলে কিছুটা হলেও তারা শান্তি পাবে। তাই দ্রæত বিচারের রায় কার্যকরের দাবি জানান তিনি।
হামইচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন পাটওয়ারী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক সহযোগীতায় ওই পরিবারগুলো ভাল ভাবে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা পেয়েছে। এরপরও বিভিন্ন সময়ে নিহতদের পরিবারের পাশে থেকে সহযোগীতা করেছে আ.লীগ নেতারা। তাই তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে ওই মামলার রায় দ্রæত বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।