নজরুল ইসলাম আতিক :
ভাইরে কিভাবে যে দিন কাটতাছে হেইঠা শুধু আল্লাই জানে। নিষেধাজ্ঞা শেষ হইলো, কিস্তিতে টাকা লইয়া নৌকা আর জাল ঠিক কইরা অনেক আশা ভরসা লইয়া নদীতে নামলাম মাছ ধরতে কিন্তু খালি জালই ফালাইয়া গেলাম মাছ আর উঠে না’ কথাগুলো বলছিলেন মেঘনার বুকে মাছ ধরে সংসার চালানো জেলে হাশিম আলি। বুক ভরা কষ্ট নিযে কথাগুলো যে বলছিলেন সেটা তার চেহারায় ফুটে উঠছিলো।
মূলত কথাগুলো একক হাশিম আলির নয় বরং এই সময়ের মেঘনা নদীর সকল জেলেদের। নদীতে যেভাবে আকাল পড়েছে জেলেদের সংসার চালানো এখন বড়ই দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারন নিষেধাজ্ঞা শেষে যেমন স্বপ্ন নিয়ে তারা নদীতে নেমেছিলো তা এখন স্বপ্নই মনে হচ্ছে তাদের কাছে।
আলাপকালে বেশ কয়েকজন জেলে জানান, নদীতে কোন মাছ নাই, যা পায় তার মধ্যে ঝাটকা ইলিশ বেশি থাকে। ঠিকমতো তেলের খরচ উঠানো এখন সম্ভব হচ্ছে না। সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে তাদের। এছাড়ও আছে কিস্তির চাপ। যত কিছুই হোক কিস্তির টাকার চিন্তা সবসময়ই মাথায় থাকে। কেউ কেউ আবার বলেন ঘরের হাঁস মুরগি বিক্রি করে হলেও কিস্তির টাকা পরিশোধ করছি।
রোববার (১৫ নভেম্বর) চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছ ঘাট ঘুরেও দেখা গেলো একই চিত্র। যেমনি মাছ শূন্যতা তেমনি ক্রেতার। নেই সেই প্যাকেটটিং এর ব্যস্ততা। খালিপ্রায় পুরো আড়ত।
এসময় কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, এ সময়টাতে মাছ একটু কমই থাকে তবে অন্য বছরের তুলনায় এ বছর একটু বেশিই কম। যদিও কেউ কেউ আবার বললেন, এখন যে মাছ নদীতে পাওয়া যাচ্ছে তার বেশিই হলো ঝাটকা। আশা করি পনেরো বিশ দিন পরে বড় বড় ইলিশ পাওয়া যাবে।
নদীতে মাছ নেই প্রসঙ্গে গবেষক ড. আনিসুর রহমান জানান, ইলিশ মাছ পরিভ্রমণশীল। তারা দল ধরে চলাফেরা করে এবং সাগর থেকে উপকূল হয়ে প্রধান নদ-নদীতে আসে। মুলত ব্রিডিংয়ের সময়কাল আগষ্টে শুরু হয়ে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর মাস পর্যন্ত চলে। এর আরেকটি মাইনর প্রজনন কালও রয়েছে। জানুয়ারী, ফেব্রুয়ারী, মার্চ, এপ্রিল এই চার মাস ধীরে ধীরে তাদের প্রজনন বৃদ্ধি করে। এসময় মূলত মাছগুলো তাদের খাদ্য আহরণ করার জন্য নদীতে আসে এবং নদী থেকে খাদ্য আহরণ করেই আকৃতি বৃদ্ধি করে। এর মাঝামাঝি সময়টাতে যখন কার্তিক মাস চলে আসে এবং তাপমাত্রাও কমে যায়। এসময় নদীতে মাছ কম পাওয়া যায়। তবে হতাশ হওয়ার কিছুই নেই, জেলেদের কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। আশা করি জানুয়ারী থেকে নদীতে পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যাবে।